মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। — ফাইল চিত্র।
এক লাফে বাঁকুড়া জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেল ২২ হাজার ৯৩৯। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, চলতি বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমার কারণ নিয়ে স্কুলশিক্ষা দফতর সমীক্ষা করবে। ইতিমধ্যে জেলা শিক্ষা দফতরের কর্তারা স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে পরীক্ষার্থী কমার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা শুরু করেছেন। রাজ্যের তরফেও আলাদা করে প্রতিটি স্কুলের কাছে পরীক্ষার্থী কমার নির্দিষ্ট কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। বহু স্কুল সেই তথ্য জমা দিয়েছে।
বাঁকুড়া জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, গত বছরের তুলনায় এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলে ও মেয়েদের সংখ্যা প্রায় সমান কমেছে। ছেলেদের সংখ্যা কমেছে ১১ হাজার ৪৬৭, মেয়েদের সংখ্যা কমেছে ১১ হাজার ৪৭২। তবে খাতড়া মহকুমায় গত বারের চেয়ে ৫০ শতাংশের বেশি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমে গিয়েছে।
কেন এমনটা হল?
এবিটিএ-র বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অস্মিতা দাশগুপ্তের দাবি, “পরীক্ষার্থী কমার পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। তবে স্কুলছুট বা পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে পড়ুয়াদের একাংশের বাইরে চলে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। রাজ্য সরকার যে ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করতে ব্যর্থ, এই পরিসংখ্যানেই তা সাফ হয়ে গেল।”
জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পীযূষকান্তি বেরা অবশ্য বলেন, “স্কুলছুট হচ্ছে কি না তা তথ্য খতিয়ে না দেখে বলা সম্ভব নয়। পরীক্ষার্থী কেন কমল, তা নিয়ে বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ২০১২ সালে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছিল। সে বার জেলা জুড়ে সামগ্রিক ভাবে ৩০ শতাংশ পড়ুয়া কম ভর্তি হয়েছিল। এ বার তারাই মাধ্যমিক দিচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই পরীক্ষার্থী কমেছে।” একই দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষক সমিতির বাঁকুড়া জেলা সভাপতি গৌতম দাসও। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের শিক্ষা নীতি ও পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করার বিষয়ে পদক্ষেপ গোটা দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। স্কুলে ভর্তির বয়স সীমা বাড়ানো ও টেস্ট পরীক্ষায় কিছু সংখ্যক পরীক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ হওয়ার ফলেই পরীক্ষার্থী কমেছে জেলায়।”
যদিও বিপুল সংখ্যক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ায় ‘আত্মসমীক্ষা’-র দরকার রয়েছে বলে মনে করছেন জেলার শিক্ষক মহলের বড় অংশই। গত কয়েক বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ফলাফলে নজরকাড়া জেলার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “এত সংখ্যক পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ার ঘটনাকে হালকা ভাবে নেওয়া যায় না। স্কুলছুটের প্রবণতা সত্যিই বাড়ছে কি না, চাকরির বাজারে অনিশ্চয়তায় ভুগে কেউ মাঝপথে লেখাপড়ায় উৎসাহ হারাচ্ছে কি না, এ সব খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। বেসরকারি স্কুল যাওয়ার প্রবণতাও এর কারণ হতে পারে। এবার আমাদের আত্মসমীক্ষার সময় এসে গিয়েছে।”
শিক্ষকদের একাংশের আবার দাবি, নবম শ্রেণিতে উঠলেই সবুজশ্রী প্রকল্পে সাইকেল পাচ্ছে পড়ুয়ারা। তাই অনেকেই নবম শ্রেণির পরে আর স্কুলে যাচ্ছে না। সেটাও পরীক্ষার্থী কমার কারণ হতে পারে। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বলেন, “আমরা কারণ অনুসন্ধান করছি। রাজ্যও পরীক্ষার্থী কমার প্রকৃত কারণ জানতে চেয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy