Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গি রোগী ১৭৪ জন, শুরু তরজা

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলায় ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যাটা ছিল ১২০।

সরেজমিন: বাঁকুড়া পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিনিধিরা। নিজস্ব চিত্র

সরেজমিন: বাঁকুড়া পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিনিধিরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩০
Share: Save:

স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি চাপে পড়ে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হয়েছে জেলা প্রশাসন। তা সত্ত্বেও লাগাম যে টানা যাচ্ছে না, বাঁকুড়া পুরএলাকায় লাফিয়ে লাফিয়ে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ঘটনাই তার প্রমাণ। এই ঘটনায় উদ্বেগ চেপে রাখতে পারছে না কোনও মহলই। বিশেষ করে অস্বস্তি ক্রমশ বেড়ে চলেছে পুরকর্তাদের। তারই মধ্যে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শাসক-বিরোধী রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বুধবার বাঁকুড়ার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি দল।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলায় ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যাটা ছিল ১২০। তাঁদের মধ্যে বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা ছিলেন আট জন। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই সংখ্যাটা এক ঝটকায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, এ দিন পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গি রোগী চিহ্নিত হয়েছেন ১৭৪ জন। বাঁকুড়া পুরসভায় সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১। বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত কিছু দিন আগেও এই শহরে ডেঙ্গি রোগী চিহ্নিত হয়েছে বলে মানতে চাননি। এ দিন তিনি সেই অবস্থান থেকে সরে এসে বলেন, “জুন মাস থেকে এখনও পর্যন্ত শহরে ১২ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ওই রোগীরা অন্য জায়গা থেকেই রোগ বাঁধিয়েছেন বলে আমাদের সমীক্ষায় উঠে এসেছে। শহরে থেকে কারও ডেঙ্গি হয়নি।” সেই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন, শহরের কিছু বেসরকারি ক্লিনিক জ্বরে আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষা করে ভুল করে ডেঙ্গি রিপোর্ট দিচ্ছে। ওই ক্লিনিকগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শহরবাসী যাতে বাঁকুড়া মেডিক্যাল ছাড়া অন্য কোথাও রক্ত পরীক্ষা না করান, পুরপ্রধান সেই আবেদন রেখেছেন।

ডেঙ্গি রোগী বাড়ছে কেন? বাঁকুড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “ডেঙ্গি পরীক্ষা অনেক বেশি পরিমাণে হচ্ছে। এর ফলে ডেঙ্গি রোগ গোড়াতেই ধরা পড়ছে বলে মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে। জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এ বছরে কেউ মারা যাননি।’’

ঘটনা হল, ডেঙ্গি নিয়ে গোটা রাজ্য জুড়েই উদ্বেগ ছড়িয়েছে। বুধবারই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাঁকুড়া পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এসে ডেঙ্গি প্রবণতার সমীক্ষা করেন। তাঁরা অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

রাজ্য সরকারের নির্দেশে, স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনও ডেঙ্গি মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছে। মঙ্গলবারই মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা এ নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতর, পুরসভা ও বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছিলেন। তবে এই পরিস্থিতিতেও বাঁকুড়া পুরসভার কোনও প্রতিনিধি সেই বৈঠকে উপস্থিত না থাকায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মহাপ্রসাদবাবুর দাবি, “বৈঠকের চিঠি সঠিক সময়ে পাইনি বলেই যোগ দিতে পারিনি।”

অসীমকুমারবাবু জানান, বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, শহরের যে সব জায়গায় এখনও বৃষ্টির জল জমে রয়েছে, তা দ্রুত নিষ্কাশন করতে হবে। এ ছাড়া শহরের যে সমস্ত ব্যবহার না হওয়া ছোট ডোবা বা জলাশয়ে ডেঙ্গি মশার লার্ভা মিলেছে, সেখানকার জল বের করে দিতে হবে। শহরের নালাগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বাঁকুড়া পুরসভার চারটি ফগিং মেশিন দিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে মাসে দু’বার করে ধোঁয়া ছড়ানো হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ফগিং মেশিন নিয়েও মশা মারার অভিযান আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শহর জুড়ে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার প্রচার বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। অসীমকুমারবাবু বলেন, “ডেঙ্গি রোখার অভিযান আরও জোরদার ভাবে চালিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’’ মহাপ্রসাদবাবু বলেন, “মহকুমাশাসকের বৈঠকে যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে, তা কার্যকর করতে আমরা তৎপর।”

ডেঙ্গির পাশাপাশি বাঁকুড়া শহরে লালপোকার কামড়ে স্ক্রাব টাইফাস রোগের প্রকোপও দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এলাকায় ঝোপঝাড়, আবর্জনা সাফাই বা ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর দাবি উঠেছে কাউন্সিলরদের মধ্যে থেকেই। পুরসভার তরফে পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার কাউন্সিলরদের দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।

বাঁকুড়া ১ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর দেবাশিস লাহার অভিযোগ, “পুরসভা পর্যাপ্ত ব্লিচিং পাউডার দিচ্ছে না। এলাকা ঝোপঝাড়ে ভরে গিয়েছে। সাধারণ মানুষ এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। আমি পুরসভার কাছে সমস্যার কথা জানিয়েছি।”

বাঁকুড়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএম কাউন্সিলর স্বরূপ সেন বলেন, “ডেঙ্গি রোধ বা ঝোপঝাড় সাফাইয়ে বাঁকুড়া পুরসভার যথেষ্ট উদ্যোগের অভাব রয়েছে।” মহাপ্রসাদবাবু এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে দাবি করেন, “বিরোধীরা রাজনৈতিক স্বার্থেই এই অভিযোগ তুলছে। দেবাশিসবাবু তো পুরসভাতেই আসেন না। ওঁর ওয়ার্ডের কাজ নিয়ে লোকজন আমার কাছে আসছেন।” তিনি যুক্ত করেন, “পুরসভার কর্মীরাই এলাকায় গিয়ে ব্লিচিং পাউডার ছড়ান। কাউন্সিলরদের হাতে তা দেওয়ার নিয়ম নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue patients Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE