শ্যাম স্টিলের প্রকল্প এলাকার কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার। ছবি: সঙ্গীত নাগ
রঘুনাথপুরের শিল্পায়ন নিয়ে রাজনৈতিক তরজায় বারবার নির্বাচনী ময়দান সরগরম হয়েছে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই ইঙ্গিত মিলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির কাছ থেকে।
তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, একযোগে রঘুনাথপুরের তিন ব্লকে ইস্পাত ও সিমেন্ট ক্ষেত্রে এত বড় বিনিয়োগ আগে হয়নি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে হাজার-হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ‘জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী’-র মাধ্যমে রঘুনাথপুরের আর্থ-সামাজিক চালচিত্রের বদল হচ্ছে। রঘুনাথপুর এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে এটাই হবে তাদের মূল প্রচার। অন্যদিকে, বিজেপির কটাক্ষ, বাস্তবে গত ১১ বছরে এখানে তোলাবাজি ও কয়লা পাচার শিল্পের রমরমা চলছে। আর সিপিএমের দাবি, বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই রঘুনাথপুরে শিল্পায়নের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল। বরং রঘুনাথপুরের শিল্প সম্ভাবনাকে নষ্ট করেছে তৃণমূল।
পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের সময়েই রঘুনাথপুরের বিভিন্ন ব্লকে শিল্পায়নের কর্মকাণ্ড শুরু হয়। ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সূচনা হয়। সে সময় জয়বালাজি, শ্যাম স্টিল, আধুনিক প্রভৃতি শিল্পগোষ্ঠীকে কারখানা গড়তে সরকার জমি দিয়েছিল। রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পরেই শ্যাম স্টিল, আধুনিক জমি ফেরত দেয় রাজ্যকে। কারখানা গড়েনি জয় বালাজি।
তখন থেকে বারবার নির্বাচন এলেই রঘুনাথপুরের শিল্পায়ন নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি শুরু রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার অন্তত আট-নয় বছর রঘুনাথপুরে নতুন বড় কোনও বিনিয়োগ আসেনি। ফলে বামেদের মোক্ষম জবাব দেওয়ার সুযোগ ছিল না তৃণমূলের কাছে। তবে এ বার পরিস্থিতি বদলেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, এ বার তিনটি বড় শিল্প সংস্থার বিনিয়োগ রাজ্যের শাসকদলের নির্বাচনের প্রচারের বড় হাতিয়ার হবে।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া দাবি করছেন, ‘‘পর্যায়ক্রমে এই মহকুমাতে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ বামফ্রন্ট আমলেও আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী গড়ার কথা ঘোষণা করার পরেই রঘুনাথপুর অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠেছে লগ্নিকারীদের কাছে।”
তবে সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের দাবি, ‘‘বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই রঘুনাথপুর মহকুমার তিনটি ব্লকে একাধিক ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছিল। সে সময় ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কারখানা হয়। ফলে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময়ে রঘুনাথপুরে তৈরি হওয়া শিল্পের সম্ভাবনাকে তৃণমূল তাদের ভ্রান্ত শিল্প নীতি ও জমি নীতির জন্য কার্যত গলা টিপে খুন করেছে। নির্বাচন এলেই তৃণমূল ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রঘুনাথপুরে শিল্পায়নের প্রসঙ্গ মনে পড়ে। তাই আগে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের গল্প শুনিয়েছেন। এখন শোনাচ্ছেন জঙ্গলসুন্দরী কর্মগরীর গল্প। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে তৃণমূলের শিল্পের নামে এই ধাপ্পাবাজির কথাই আমরা তুলে ধরব।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেনের পাল্টা দাবি, ‘‘শিল্প গড়তে হলে পরিকাঠামো লাগে। বামফ্রন্ট সরকার সেই পরিকাঠামো তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছিল বলেই বিভিন্ন সংস্থা জমি নিয়েও শিল্প না গড়ে পরে তা ফেরত দেন। মুখ্যমন্ত্রী শিল্পনগরীর শুধু পরিকাঠামো তৈরির জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করায় শিল্পদ্যোগীরা বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন।”.
বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গার অভিযোগ, ‘‘শিল্পনগরীর কথা শুনে শুনে রঘুনাথপুরবাসীর চুলে পাক ধরতে শুরু করেছে। ভাঁওতা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল। রঘুনাথপুরে শিল্পনগরী নয়, তোলাবাজ নগরী, কয়লা পাচার নগরী তৈরি হয়েছে। এ রাজ্যে শিল্প করতে এলেই সিন্ডিকেট তৈরি করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা শিল্পপতির উপরে চাপ তৈরি করেন। তাই তৃণমূলের জমানায় রাজ্যে ভারী শিল্প তৈরি হয়নি। মানুষের কাছে সেটাই তুলে ধরব।’’
অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন দাবি করেন, ‘‘রঘুনাথপুরে বিনিয়োগের এটা প্রথম ধাপ। আরও কয়েকটি বড় শিল্প সংস্থা এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, রঘুনাথপুরে কমপক্ষে ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে রঘুনাথপুরের শিল্পায়নে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান— এটাই আমাদের প্রচারের মুল সূরহবে।” (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy