আজ, সোমবার থেকে পুরুলিয়া জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন শুরু হতে যাচ্ছে। চলবে আগামী তিন দিন। তবে তৃণমূল ও বিজেপি দু’দলেই কিছু এলাকায় প্রধান ও উপপ্রধানের দাবিদার একাধিক ব্যক্তি থাকায়, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়িয়ে কী ভাবে সেখানে ওই দুই পদে নির্বিঘ্নে বোর্ড গঠন হয়, সে দিকেই অনেকের নজর। যদিও দুই দলের জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁরা জানান, মুখবন্ধ খামে প্রধান ও উপপ্রধানের নাম পাঠানো হবে। সবাই মেনে নেবেন। কিছু এলাকায় কাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে, দল আগেই তা জানিয়ে দিয়েছে।
প্রশাসন আগেই ঘোষণা করেছিল, ২৭-২৯ অগস্ট পর্যন্ত পুরুলিয়ার ১৭০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৫৭টি পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করা হবে। শুধু জেলার ১৩টি পঞ্চায়েতে বেশ কিছু সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে এখনই বোর্ড গঠন হচ্ছে না। ওই পঞ্চায়েতগুলি হল: কাশীপুর ব্লকের কাশীপুর, বড়রা, গৌরাঙ্গডি, কালীদহ, রাঙামাটি-রঞ্জনডি, হদলদা-উপড়রা ও বেকো এবং বলরামপুর ব্লকের বলরামপুর, আড়শা ব্লকের বেলডি, রঘুনাথপুর ১ ব্লকের আড়রা, নিতুড়িয়া ব্লকের দীঘা, পাড়া ব্লকের ঝাপড়া-জবড়রা ১ ও সাঁতুড়ি ব্লকের সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত।
জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘যে সব পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিছু প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন, আদালতের রায়ে সেই পঞ্চায়েতগুলিতে বোর্ড গঠনে আর বাধা নেই। ওই পঞ্চায়েতগুলির জন্য নতুন করে নির্দেশিকা জারি হবে।’’
পঞ্চায়েত ভোটে ১৭০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬৩টি পঞ্চায়েত একক ভাবে দখল করেছিল তৃণমূল। বিজেপির দখলে যায় ৪৪টি। কংগ্রেসের দখলে যায় ৯টি এবং বামফ্রন্ট পায় ৩টি পঞ্চায়েত। ৫১টি পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ছিল। তার মধ্যে বেশ কিছু পঞ্চায়েত তাদের দখলে এসেছে বলে দাবি জেলা তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্বের।
তৃণমূল সূত্রে খবর, তাদের দখলে আসা কয়েকটি পঞ্চায়েতে প্রধানের পদে কে বসবেন, তা নিয়ে নিচুতলায় টানাপড়েন শুরু হয়েছে। সমস্যা সমাধানে নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, পঞ্চায়েত গঠনের আগেই প্রধান ও উপপ্রধানের নাম মুখবন্ধ খামে সদস্যদের কাছে পৌঁছবে। এই বিষয়টি দেখভাল করার জন্য জেলার একাধিক শীর্ষ নেতা বিভিন্ন ব্লকে নজরদারির দায়িত্বে রয়েছেন। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘বোর্ড গঠনের দিনই সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত এলাকায় দলের পক্ষ থেকে যিনি দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁর মারফৎ প্রধান ও উপপ্রধানের নাম খামবন্দি অবস্থায় পৌঁছবে।’’ তিনি জানান, দলের পক্ষে রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন, পুরুলিয়ার সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো, বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া ও রাজীবলোচন সোরেন বান্দোয়ান, বরাবাজার, মানবাজার ১, মানবাজার ২, পুঞ্চা, হুড়া, কাশীপুর, সাঁতুড়ি, নিতুড়িয়া, রঘুনাথপুর ১, রঘুনাথপুর ২ ও পাড়া ব্লকের দায়িত্বে রয়েছেন। অন্যদিকে, পুরুলিয়া ১, পুরুলিয়া ২, জয়পুর, ঝালদা ১, ঝালদা ২, বাঘমুণ্ডি, আড়শা এবং বলরামপুরের দায়িত্বে রয়েছেন স্বয়ং জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো।
কী ভাবছে বিজেপি? দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘‘আমাদের দখলে আসা পঞ্চায়েতগুলিতে প্রধান বা উপপ্রধান কে হবেন, তা আগেই ঠিক করে ফেলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত এলাকার দায়িত্বে যিনি রয়েছেন, ওই বিধানসভা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মারফৎ তাঁকে সেই সব নাম জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।’’ দল সূত্রের খবর বিজেপির মধ্যেও কিছু পঞ্চায়েতে প্রধান পদে একাধিক দাবিদার থাকায় বোর্ড গঠনের আগের দিন পর্যন্ত সেই পঞ্চায়েতগুলির প্রধান নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছতে পারেনি দল। তাই বিজেপিও ঠিক করেছে, সেই পঞ্চায়েতগুলিতে বোর্ড গঠনের আগে খামবন্দি অবস্থায় প্রধানের নাম পাঠানো হবে। বিদ্যাসাগরবাবু স্বীকার করেছেন, ‘‘আমাদের অল্প কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে, যেখানে প্রধান কে হবেন তা নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছনো যায়নি। সেখানে মুখবন্ধ খামে প্রধান ও উপপ্রধানের নাম পাঠাব।’’
বিদ্যাসাগরবাবু আরও বলছেন, ‘‘তৃণমূল ভয় দেখিয়ে আমাদের সদস্যদের যোগ দিতে বাধ্য করছে বলেই কিছু সদস্যকে সরিয়ে রাখতে হয়েছে। যথা সময়েই তাঁদের হাজির করব। সদস্যদের নিরাপত্তা দলের কর্মীরাই দেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy