কাজের কাজ কতটা হয়েছে, তা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকলেও শহরাঞ্চলে শুরুটা অন্তত হয়েছে। আর এখনও সলতে পাকানোই শুরু হয়নি গ্রামাঞ্চলে। সেই ফাঁকে গ্রাম, বিশেষ করে গঞ্জ এলাকায় দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষি এবং মাছ চাষে। চাষি, মৎস্যজীবীদের দাবি, প্লাস্টিক দূষণের জন্য উৎপাদন মার খাচ্ছে। তারপরেও নেই কোনও উদ্যোগ।
প্রশাসনিক সূত্রেই জানা গিয়েছে, সম্প্রতি জেলার পুর এবং শহর এলাকায় প্লাস্টিক রোধে প্রচার অভিযানের পাশাপাশি নজরদারিও শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের ক্ষেত্রে জরিমানারও নিদান হাঁকা হয়েছে। কিন্তু, গ্রামের কথা ভাবেনি কেউই। কৃষি বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে প্রশাসনেরই একাংশ মানছেন, এর ফলে গ্রামাঞ্চলে দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে।
অধিকাংশ গ্রামের উপর দিয়ে বাস চলাচলের সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো গঞ্জ গড়ে উঠেছে। প্রতিটি এলাকায় রয়েছে বহু দোকানপাট। ওই সব দোকান থেকেই যথেচ্ছ হারে প্লাস্টিক প্যাকেট থেকে শুরু করে চায়ের কাপ ব্যবহৃত হচ্ছে। আর সে সব প্লাস্টিক সামগ্রী উড়ে গিয়ে পড়ছে লাগোয়া পুকুর কিংবা জমিতে। আর তার ফলেই উৎপাদন মার খাচ্ছে বলে মৎস্যজীবী, চাষিদের অভিযোগ।
ময়ূরেশ্বরের ষাটপলসা মোড়ের কাছে বিঘেখানেক জমি রয়েছে সেরুনিয়ার অজিত ভল্লার। লাভপুরের শ্যাওড়াগড় মোড়ের কাছে প্রায় সম পরিমাণ জমি রয়েছে দুরবারপুরের ওসমান আলির। তাঁরা বলছেন, ‘‘এখন জমিতে চাষ দেওয়ার সময় লাঙলের ফলায় প্লাস্টিকের নানা জিনিস উঠে আসে। গোবরসারের সঙ্গে তো বটেই, মোড়ের দোকানের ব্যবহৃত প্লাস্টিক ঝড়-বৃষ্টিতে উড়ে এসে জমি ভরিয়ে দেয়। কত আর বেছে ফেলব?’’ কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, প্লাস্টিক মাটির সঙ্গে কখনই মেশে না। ফলে প্লাস্টিক মিশে থাকা মাটিতে ধান বা অন্য গাছ শিকর বিস্তার করতে পারে না। গাছ ভালভাবে খাবার সংগ্রহ করতে না পারায় ফলন ভাল হয় না।
এক অভিযোগ মৎস্যজীবীদেরও। ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া মোড়ের কাছে একটি পুকুর লিজে নিয়ে মাছ চাষ করেন স্থানীয় মিঠু ধীবর। ওই থানারই রামনগর মোড়ের কাছে একটি পুকুরে মাছ চাষ করেন স্থানীয় অজিত ধীবর। তাঁরাও বলছেন, ‘‘প্লাস্টিক সামগ্রী আর মদের বোতলে পুকুরে পা ফেলার জায়গা নেই। জল দূষিত হয়ে থাকছে। মাছ মরে যাচ্ছে।’’ ভুক্তভোগীদের আর্জি, প্লাস্টিক দূষণ রোধে প্রশাসনের সক্রিয় হোক।
জেলা সহ কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) অমর মণ্ডল প্লাস্টিক নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। বীরভূমের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী অবশ্য বলছেন, ‘‘শুধু পুরসভা কিংবা শহর এলাকাতেই নয়, জেলাজুড়েই প্লাস্টিক রোধে কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শুধু পদক্ষেপ করলেই হবে না, এ জন্যে সর্বস্তরে সচেতনতা তৈরি হওয়া জরুরি।’’ তিনি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের সকলকে এ কাজে সামিল হতে আবেদন জানিয়েছেন। আবেদন জানানো তো হল, কাজ কতটা হল দেখার সেটাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy