উৎসুক: জয়পুরের ঘাঘরা হাইস্কুলে। ছবি: সুজিত মাহাতো
স্কুলের বারান্দা, পাশের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দেওয়ালে গুলির চিহ্ন। মাঠে পড়ে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ দেখে নিজেদের কপালে হাত রাখছেন পড়ুয়ারা। বলছেন— ‘‘ভাগ্যিস অল্প আগেই স্কুল থেকে বেরিয়ে বাড়ির পথ ধরেছিলাম। না হলে...।’’ সোমবারের গুলি-কাণ্ডের পরের দিন মঙ্গলবার এই ছিল ঘাঘরা প্রাথমিক স্কুল ও হাইস্কুলের পড়ুয়াদের প্রতিক্রিয়া।
ক্যানভাসের ছবির মতো ল্যান্ডস্কেপ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রান্তরের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা স্কুলের সামনের মাঠে যে কোনও দিন এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে, তা কল্পনাও করতে পারেনি দু’টি স্কুলের পড়ুয়ারা। মঙ্গলবার স্কুলে ঢোকার মুখে মাঠে শুকিয়ে যাওয়া চাপচাপ রক্তের দাগ দেখে শিউরে উঠছিল অনেক ছাত্রছাত্রী। দেওয়ালে গুলির চিহ্ন দেখে কচি কচি মুখগুলো আরও ছোট ছোট হয়ে গেল। ফ্যাকাসে মুখে তাদের ফিসফাস চলতে থাকে দিনভর। স্কুলের মাঠে পুলিশ কর্তারা দিনভর ঘোরাঘুরি করছিলেন। কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিল না পড়ুয়ারা।
ঘাঘরা গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয় লাগোয়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দরজার ঠিক উপরে দেওয়ালে দু’টি গুলির চিহ্ন। কাছেই ঘাঘরা প্রাথমিক বিদ্যালয়। এক শিক্ষক বলছিলেন, ‘‘সকাল থেকেই লোকজন জড়ো হচ্ছিলেন। পুলিশও ছিল। পঞ্চায়েতের ভিতরে বোর্ড গঠনের কাজ চলছিল। মাঝে মধ্যে চিৎকার হচ্ছে। মিড-ডে মিল খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকতেই মনে হল, গোলমাল হতে পারে। তাই ছুটি দেওয়া হয়।’’
আরও পড়ুন: আমডাঙায় বোমা-গুলি, নিহত দুই
স্কুলের পড়ুয়া গোকুলডি গ্রামের বাসিন্দা তপন মাহাতো, তুষার মাহাতো, রাহুল মাহাতো বলছিল, ‘‘আমাদের ছুটি দিয়েছে। পঞ্চায়েত অফিস পার হয়ে ঘরের পথ ধরেছি। হঠাৎ তুমুল হইচই শুরু হল। শুনতে পেলাম, কারা যেন ‘গুলি চলছে, গুলি চলছে’ বলে দৌড়ে আসছে। আমরা দৌড় লাগাই।’’ প্রধান শিক্ষক নগেন্দ্রনাথ মাহাতো বলছিলেন, ‘‘ভাগ্যিস গোলমাল হচ্ছিল বলে অল্প আগে ছুটি দিয়েছিলাম। না হলে কী যে হত, কে জানে!’’
ঘাঘরা হাইস্কুলের পড়ুয়া শুভজিৎ মাহাতো, বীরেন মাহাতোরও কথায়, ‘‘ভাগ্যিস স্কুল ছুটি দিয়েছিল। ভিড়ের দিকে না গিয়ে বাড়ির পথ ধরেছিলাম বলে কপালকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।’’ প্রধান শিক্ষক আশিসকুমার পট্টনায়ক বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের উল্টোদিকেই আমাদের স্কুল। সকাল থেকেই গোলমাল চলছিল। মাইকের শব্দ। একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে আঁচ করে মিড-ডে মিলের পরেই স্কুল ছুটি দিয়ে দিয়েছিলাম। তার একটু পরেই গুলি চলতে শুরু হল। আমরা অফিস ঘরের ভিতরেই ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম বাইরে গণ্ডগোল চলছে। তবে খুব চিন্তা হচ্ছিল— পড়ুয়ারা বাড়ি ফিরতে
পারল তো।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy