Advertisement
১৮ মে ২০২৪

পড়ার খরচের অঙ্ক কষছে দুই মেধাবী

বিজ্ঞানের অঙ্ক কষতে গিয়ে কখনও আটকায়নি নয়ন এবং শুভজিৎ। কিন্তু বিজ্ঞান পড়ার জন্য খরচের অঙ্ক কষতে গিয়ে থমকে গিয়েছে তারা। মেধাবী এই দুই ছাত্র এ বার সাফল্যের সঙ্গে মাধ্যমিক পাশ করেছে। কিন্তু এর পরের পড়াশোনা কী ভাবে চলবে, তাই ভেবে চিন্তুায় পড়েছেন নয়ন মাহাতো এবং শুভজিৎ কুম্ভকারের অভিভাবকেরা।

নয়ন মাহাতো এবং শুভজিৎ কুম্ভকার।—নিজস্ব চিত্র।

নয়ন মাহাতো এবং শুভজিৎ কুম্ভকার।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আদ্রা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ০৩:০৩
Share: Save:

বিজ্ঞানের অঙ্ক কষতে গিয়ে কখনও আটকায়নি নয়ন এবং শুভজিৎ। কিন্তু বিজ্ঞান পড়ার জন্য খরচের অঙ্ক কষতে গিয়ে থমকে গিয়েছে তারা। মেধাবী এই দুই ছাত্র এ বার সাফল্যের সঙ্গে মাধ্যমিক পাশ করেছে। কিন্তু এর পরের পড়াশোনা কী ভাবে চলবে, তাই ভেবে চিন্তুায় পড়েছেন নয়ন মাহাতো এবং শুভজিৎ কুম্ভকারের অভিভাবকেরা।

স্কুলের এক মাস্টারমশাই ইতিহাস পড়াবেন বলে তাঁর বাড়িতে ডেকেছিলেন নয়নকে। ছোটবেলা থেকেই তার পড়াশোনায় বড় আগ্রহ। কিন্তু ছেলের জন্য গৃহশিক্ষকের বন্দোবস্ত করার সামর্থ্য ছিল না নয়নের বাবা বিদ্যুৎবাবুর। মাস্টারমশাই যখন নিজে থেকেই বিনা পয়সায় পড়াতে চাইলেন, বাবা এবং দু’জনেই হাতে যেন চাঁদ পেল।

কিন্তু, মাস্টারমশাইয়ের বাড়ি যে যাবে, রোজ সেই বাসভাড়াটুকুও জুটত না। অগত্যা বিদ্যুৎবাবু প্রায়ই সাইকেলের কেরিয়ারে ছেলেকে চাপিয়ে পাড়া ব্লকের ভাঁওরিডি গ্রামের বাড়ি থেকে তিরিশ কিলোমিটার উজিয়ে সোজা চলে যেতেন পুরুলিয়া শহর। পড়াশোনা শেষ করে ফের সাইকেলে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরা।

এ ভাবেই এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাঁওরিডি হাইস্কুল থেকে ৬৪০ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে নয়ন। স্কুলের মধ্যে তার নম্বরই সর্বোচ্চ। কিন্তু বিদ্যুৎবাবুর কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও জাঁকিয়ে বসেছে। ছেলে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করার স্বপ্নে সে মশগুল। কিন্তু তাঁর সম্বল বলতে এক চিলতে জমিতে সামান্য চাষবাস। ৩০ কিলোমিটার সাইকেলে চাপিয়ে পড়তে নিয়ে যাওয়ার থেকে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান পড়ার খরচ জোগাড় করাটা যে অনেক কঠিন, প্রতি মূহুর্তে সেই বিষয়টি বুঝতে পারছেন বিদ্যুৎবাবু।

বিদ্যুৎবাবুরও বড় সাধ, ছেলে পছন্দের বিষয় পড়ুক। তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি অনেক সংস্থা পড়াশোনায় সাহায্য করে। চেষ্টা করে যাচ্ছি, কোথাও যদি সে রকম কোনও সন্ধান মেলে।’’ ক্লাসে বরাবর প্রথম হত নয়ন। বিদ্যুৎবাবু জানান, মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনায় স্কুলের শিক্ষকেরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এই মেধাবী ছাত্রটিকে। ভাঁওরিডি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পড়াশোনার বাইরে বিতর্ক জেলাস্তরের বিতর্ক প্রতিযোগীতাতেও তৃতীয় হয়েছিল ও। ভবিষ্যতেও আমরা ওর পাশে থাকার চেষ্টা করব।’’

শুভজিতের বাবা বরুণ কুম্ভকার বার্ণপুরে ইস্কোর কারখানায় ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন। আদ্রার নিগমনগর এনএস হাইস্কুলের ছাত্র শুভজিৎ মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬২৯ নম্বর। তারও পছন্দ বিজ্ঞান। গল্পের বই বা সিনেমা দেখার চেয়ে অঙ্কের ধাঁধা তাকে বেশি টানে। বরুণবাবু.বলেন,‘‘সামান্য আয়ে পাঁচ জনের সংসার কোনও মতে চলে। উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান পাড়ার অনেক খরচ। সে সব জোগাবো কী করে?’’ ছেলেকে অন্য কোনও বিষয় নিয়ে পড়তে বলেছিলেন বরুণবাবু। কিন্তু শুভজিৎ তাতে রাজি নয়। ভবিষ্যতে সে চায় ইঞ্জিনিয়ার হতে।

ঠিকা শ্রমিক বরুণবাবুরও স্বপ্ন, ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হোক। তিনি জানান, প্রচণ্ড গরমে ঘাম ঝরিয়ে কাজ করতে করতে ভেবে গিয়েছেন, লেখাপড়ায় ভাল ছেলটা। বড় হয়ে তাঁর কারখানার ইঞ্জিনিয়ারদের মত স্যুট বুট পরে সেও অফিসে যাবে নিশ্চই। কিন্তু বাস্তবে আছাড় খেয়েছে বাবা এবং ছেলের চাওয়া। বরুণবাবু বলেন, ‘‘পড়ার অনেক খরচ। কী ভাবে জোগাড় করবো সেটাই বুঝতে পারছি না।”

তবে শুভজিতের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন নিগমনগর এনএস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘নিগমনগরে বিজ্ঞান নিয়েই পড়বে শুভজিৎ। ওর স্কুলে ভর্তি-সহ অন্য সমস্ত ফি মকুব করা হবে।’’ স্কুলের বাকি শিক্ষকরাও আশ্বাস দিয়েছেন, প্রয়োজন মতো সাহায্য করার চেষ্টা করবেন তাঁরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik result student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE