Advertisement
১৯ মে ২০২৪

আক্ষেপ ঘোচাল ‘বাঁকুড়া মেলা’

ভাল কোনও মেলা হয় নাবাঁকুড়া শহরের বাসিন্দাদের এই আক্ষেপ দীর্ঘদিনের। পুরসভার সৌজন্যে সেই আক্ষেপ এ বার ঘুচেছে। শহরের তামলিবাঁধ ময়দানে গত বুধবার থেকে পুরসভার আয়োজনে শুরু হয়েছে ‘বাঁকুড়া মেলা’। আর সেই মেলায় চুটিয়ে ভিড় করছেন মানুষজন। যে উপলক্ষে এই মেলা, তা নিয়ে কিন্তু বিতর্ক রয়েছে। উপলক্ষটা হল, বাঁকুড়া পুরসভার ১৫০ বছর পূর্তি।

মেলার মাঠে দেদার বিকিকিনি।—নিজস্ব চিত্র।

মেলার মাঠে দেদার বিকিকিনি।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৪ ০০:২৩
Share: Save:

ভাল কোনও মেলা হয় নাবাঁকুড়া শহরের বাসিন্দাদের এই আক্ষেপ দীর্ঘদিনের। পুরসভার সৌজন্যে সেই আক্ষেপ এ বার ঘুচেছে। শহরের তামলিবাঁধ ময়দানে গত বুধবার থেকে পুরসভার আয়োজনে শুরু হয়েছে ‘বাঁকুড়া মেলা’। আর সেই মেলায় চুটিয়ে ভিড় করছেন মানুষজন।

যে উপলক্ষে এই মেলা, তা নিয়ে কিন্তু বিতর্ক রয়েছে। উপলক্ষটা হল, বাঁকুড়া পুরসভার ১৫০ বছর পূর্তি। আদৌ পুরসভার দেড়শো বছর কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা অবশ্য নিজেদের সার্ধশতবর্ষ উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানে এই বিতর্কের কোনও প্রভাব ফেলতে দিতে নারাজ। জুলাই থেকেই এই উপলক্ষে শহর জুড়ে নানা অনুষ্ঠান কর্মসূচি নিয়েছে পুরসভা। সেগুলির অন্যতম বাঁকুড়া মেলা।

রবিবার তামলিবাঁধ ময়দানে গিয়ে দেখা গেল, মেলা পুরো জমজমাট। রামানন্দ মঞ্চে নৃত্যনাট্য থেকে জাদু খেলা সবই হচ্ছে। পাটের জুতো থেকে বুটিকের পাঞ্জাবি, সব দোকানেই জমাটি ভিড় ক্রেতাদের। নাগরদোলা থেকে ফাস্ট ফুডের দোকানেও লম্বা লাইন। ভিড় দেখে বাঁকুড়ার পুরপ্রধান শম্পা দরিপার মুখে হাসি। তাঁর কথায়, “শহরবাসী দারুণ সাড়া দিয়েছেন। এই ধরনের মেলা খুব একটা বাঁকুড়ায় হয় না। এখানকার মানুষ তাকিয়ে থাকেন বিষ্ণুপুর মেলার দিকে। শহরের মধ্যেই এই মেলা তাই বাড়তি পাওনা।”

উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম থেকে পাটের জুতো ও প্রসাধনী সামগ্রীর সম্ভার এনেছেন স্বপন সরকার। তিনি জানালেন, পাটের জুতোর ব্যাপক কাটতি। একশো টাকায় এক জোড়া জুতো কিনতে অনেকেই এগিয়ে আসছেন। চার দিনেই বেশির ভাগ জুতো বিক্রি হয়ে গিয়েছে। গরু ও মোষের শিং দিয়ে তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র সাজিয়ে বসেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের সুরজিত্‌ মাইতি। তাঁর কথায়, “প্রথম দুটো দিন সে ভাবে ভিড় ছিল না। তবে গত দু’দিন যে হারে লোক আসছে, তাতে বাকি দিনগুলোয় মেলা জমবে বলেই মনে হচ্ছে।” বুটিকের কাজ করা পাঞ্জাবি, টপের সম্ভার নিয়ে বসেছেন বাঁকুড়ার অর্চনা মহাদানি। সুরজিত্‌বাবুর মতো তাঁরও একই অভিজ্ঞতা। মেলায় কাপ-ডিশ বিক্রি করতে আসা কলকাতার রাজা রায়, বেলুন ফাটানোর বন্দুক নিয়ে আসা দিঘার বাবু দাসরা বলেন, “বাঁকুড়া শহরে এই ধরনের মেলা হত না বলে আক্ষেপ ছিল মানুষের। বহু ক্রেতাই আমাদের এ কথা বলছেন।”

তবে, মেলার পরিকাঠামো নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীদের মধ্যে। মেলা চত্বরে কোনও শৌচালয় বা স্নানাগার না থাকায় দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ে গিয়ে তাঁদের শৌচকর্ম করতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ওই ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে পুরপ্রধান শম্পাদেবী বলেন, “যাঁরা বাইরে থেকে এসেছেন, তাঁদের অনেককেই আমরা পুরসভার গোধূলি লজে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কিন্তু, অনেকের সেখানে জায়গা হয়নি।” তাঁর বক্তব্য, খুব কম সময়ের মধ্যে মেলার আয়োজন করায় কিছু ফাঁক থাকতে পারে। আগামী দিনে ত্রুটিগুলি সারিয়ে নেওয়া হবে।

মেলা জমলেও বাঁকুড়া পুরসভার সার্ধশতবর্ষ নিয়ে বিতর্ক কিন্তু পিছু ছাড়ছে না। বিজেপি-র রাজ্য সহ সভাপতি সুভাষ সরকার বলেন, “মেলা হচ্ছে হোক। তবে, পুরসভার ১৫০ বছর উপলক্ষে এই মেলা করা হচ্ছে বলে যে প্রচার করা হচ্ছে, তা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। তৃণমূলের পুরবোর্ড ইতিহাস বিকৃত করে মানুষকে ছলনা করছে। কোনও ভাবেই এ বছর পুরসভার সার্ধশতবর্ষ নয়।” পুরভোটের আগে মানুষকে উত্‌সবে মাতিয়ে তৃণমূলের এটা ভোটে জেতারই কৌশল বলে দাবি সুভাষবাবু। এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পুরপ্রধান।

বিতর্কে কান দিতে নারাজ পুরবাসী। মেলা দেখতে আসা পাঠকপাড়ার বধূ রাজলক্ষ্মী দত্ত, দোলতলার বধূ শিউলি দে-রা বলেন, “মেলা উপলক্ষে সন্ধ্যেগুলো একটু বিনোদনের মধ্যে কাটছে। আবার বাড়ির জন্য টুকটাক কেনাকাটাও করতে পারছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE