কলেজে ছাত্রভর্তি-সহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে অভিযোগ জানাতে গিয়ে টিচার ইনিচার্জ-সহ কয়েকজন শিক্ষককে তালাবন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। সোমবার ঘটনাটি পুরুলিয়ার ঝালদা অচ্ছ্রুরাম মেমোরিয়াল কলেজের। অভিযোগ, কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তথা টিএমসিপির স্থানীয় নেতা মিঠুন মাহাতোর নেতত্বে কলেজের টিএমসিপির সমর্থক কিছু ছাত্র এ দিন দুপুর ১টা থেকে ঘণ্টা দেড়েক টিচার ইনিচার্জ বি.ডি শুক্ল-সহ কয়েকজন শিক্ষককে অঙ্ক ক্লাস ঘরের মধ্যে তালাবন্ধ করে রাখেন। পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে। এই কলেজেরই পরিচালন সমিতির সভাপতি মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। এ দিনের ঘটনার জেরে কলেজে প্রথম বর্ষের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ব্যহত হয়েছে বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। শান্তিরামবাবুর সাফাই, “ছাত্রদের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সেখানে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল ঠিকই, তালা বন্ধ করে রাখার অভিযোগ ঠিক নয়।”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন কলেজে শিক্ষকর্মীরদের উপস্থিতির হার কম ছিল। সে জন্য প্রথম বর্ষের রেজিস্ট্রেশনের কাজ দেখভাল করছিলেন টিআইসি। সেই বিষয় নিয়ে দুপুর ১টা নাগাদ তিনি কথা বলতে গিয়েছিলেন কলেজের অঙ্ক বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকের কাছে। অন্য দিকে, সকাল থেকেই কলেজে ছাত্রভর্তি নিয়ে কিছু দুর্নীতির অভিযোগ-সহ পদার্থবিদ্যা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য তোড়জোড় করছিল টিএমসিপি। অভিযোগ, কিছু ছাত্রকে নিয়ে টিআইসির কাছে স্মারকলিপি দিতে যান টিএমসিপি সমর্থকেরা। হঠাৎ টিআইসি-সহ কয়েকজন শিক্ষককে অঙ্ক বিভাগের ওই ঘরে আটকে রেখে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেন টিএমসিপি সমর্থকেরা। শুধু তাই নয়, তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
অচ্ছ্রুরাম মেমোরিয়াল কলেজের ছাত্র সংসদ টিএমসিপি’র হাতেই রয়েছে। বিরোধীদের দাবি, অভিযুক্ত মিঠুন এই কলেজেই টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কলেজ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও কলেজের ছাত্র সংসদ পরিচালনার রাশ নিজের হাতেই রাখতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বহিরাগত হিসেবে কলেজের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মিঠুনের মাথা ঘামানো মানতে পারেননি শিক্ষকদের একাংশ। তারই জেরে নিজের ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে মিঠুন এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে মনে করছেন কলেজের সঙ্গে যুক্ত থাকা অনেকেই।
তবে এ দিন সকালের দিকে মিঠুন দাবি করেছিলেন, কলেজে ছাত্রভর্তি নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। তারই প্রতিবাদে আন্দোলন করবেন। কিন্তু ঘটনার পর থেকে তাঁর মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি। টিএমসিপি’র স্থানীয় নেতা তথা জেলা কমিটির প্রাক্তন সহ-সভাপতি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু কলেজে ছাত্রভর্তি নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করছেন না। তিনি বলেন, “ঝালদার এই কলেজে ছাত্রভর্তিতে দুর্নীতি হয়নি। ফলে তা নিয়ে কোনও আন্দোলনের সিদ্ধান্ত আমরা নিইনি।” তা হলে কেন এই অভিযোগ তুলে শিক্ষকদের আটকে রাখার ঘটনা ঘটল? রাজীববাবুর সাফাই, “পুরো ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখছি।” তবে ফব’র ছাত্র সংগঠন ছাত্র ব্লকের জেলা সম্পাদক মুকেশ দাসের অভিযোগ, “টিএমসিপি এ দিন সাংগঠনিক ভাবেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। কারণ শুধু কলেজের মধ্যে শিক্ষকদের আটকে রাখাই নয় এ দিন জোর করে ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভে সামিল করিয়েছিল ওরা।” বহিরাগত প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “কলেজে যাতে বহিরাগতরা সহজে ঢুকে পরিবেশ না নষ্ট করতে পারে, সেটা দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy