Advertisement
১৮ মে ২০২৪

পাত্রসায়রে শক্তি দেখাতে মিছিল তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর, ভোগান্তি

দূরের গ্রাম থেকে গাড়ি ভাড়া করে লোক তুলে এনে পাত্রসায়রে মহামিছিল করল তৃণমূলের এক গোষ্ঠী। সেই মিছিলে আসা কয়েকটি গাড়ি আটকাতে অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বোমাবাজিরও অভিযোগ উঠল।

ব্লক সভাপতির নেতৃত্বে মিছিল। বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।

ব্লক সভাপতির নেতৃত্বে মিছিল। বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০০:৪০
Share: Save:

দূরের গ্রাম থেকে গাড়ি ভাড়া করে লোক তুলে এনে পাত্রসায়রে মহামিছিল করল তৃণমূলের এক গোষ্ঠী। সেই মিছিলে আসা কয়েকটি গাড়ি আটকাতে অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বোমাবাজিরও অভিযোগ উঠল।

সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের গোষ্ঠীর ‘মহামিছিল’কে ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল পাত্রসায়রে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মজুত রাখতে হল বিশাল পুলিশ বাহিনী। নেতারা মুখে ‘মহামিছিল’ বলে দাবি করলেও দলের নীচুতলার কর্মীরা দাবি করেছেন, অন্য গোষ্ঠীকে বার্তা দিতেই দলের অফিসিয়াল গোষ্ঠী মিছিলের নামে আসলে শক্তিপ্রদর্শনই করল। যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-র দাবি, “এ দিনের মিছিলের নেতৃত্বে স্নেহেশ থাকলেও আসলে তা তৃণমূলেরই মিছিল। এতে কোনও ভেদাভেদ নেই। কাউকে শক্তি দেখাতে নয়, সব মানুষ এখন তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছে বলেই মিছিল বড় আকার নিয়েছে।”

এমনিতেই লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তেতে রয়েছে এলাকা। তা নিয়েই তিতিবিরক্ত এলাকার বাসিন্দারা। তার উপরে কিছু দিন অন্তর ‘শান্তিমিছিল’ ও ‘মহামিছিলের’ নামে এলাকায় তৃণমূলের এক এক গোষ্ঠীর শক্তিপ্রদর্শনে উত্তেজনা বাড়ছে বই কমছে না। এলাকার বাসিন্দারা এমন অভিযোগ তুললেও পাত্রসায়রের স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব তা কানে তুলছেন না। দলের জেলা নেতৃত্বও বিবাদমান গোষ্ঠীগুলিকে বাগে আনতে ব্যর্থ। ফলে কত দিন এই অশান্তি চলবে তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

স্নেহেশবাবুর নেতৃত্বে এ দিন হলুদবুনি মোড় থেকে কালঞ্জয়তলা, বাজার, দাসপাড়া হয়ে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহামিছিল করা হয়। পাত্রসায়রের পাণ্ডুয়া, কুশদ্বীপ, ধগড়িয়া, নলডাঙা, বেতুড়, হামিরপুর, বীরসিংহ, নারায়ণপুর, বেলুট রসুলপুর-সহ বহু গ্রাম থেকে হাজার হাজার তৃণমূল কর্মী সমর্থক এ দিন মিছিলে আসেন। তাঁদের নিয়ে আসার জন্য বাঁকুড়া, বর্ধমান, বিষ্ণুপুর, দুর্গাপুর-সহ বেশ কয়েকটি রুটের বহু বাস তুলে নেওয়া হয়। ফলে সকাল থেকেই বাস না চলায় দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। এরই পাশাপাশি বাসস্ট্যান্ডে থানার সামনে সভা হওয়ায় দীর্ঘক্ষণ যানজট হয়। মিছিল ও সভার জেরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঘণ্টাদুয়েক ধরে বাস চলাচল পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায়। চরম নাকাল হন সাধারণ বাসযাত্রীরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দুপুর গড়িয়ে যায়।

এই মহামিছিলকে ঘিরে এদিন পাত্রসায়রে যথেষ্ট উত্তেজনা ছিল। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তারই মধ্যে বিউর, নলডাঙা, বেলুট রসুলপুর এলাকা থেকে মিছিলে আসা কয়েকটি বাসকে ফকিরডাঙা মোড়ে আটকানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল নেতা জহরলাল ওরফে ঝন্টু মিদ্যার অভিযোগ, “আমাদের মহামিছিলে যাতে আশেপাশের গ্রাম থেকে সাধারণ মানুষ আসতে না পারেন তার জন্য গত দু’দিন ধরেই কিছু তোলাবাজ ও দুষ্কৃতী হুমকি শাসানি দিচ্ছিল। এ দিন সকালে ফকিরডাঙায় বোমা ফাটিয়ে কয়েকটি বাসকে আটকে দেয় ওরা। তবে স্থানীয় বেলুট রসুলপুর পঞ্চায়েতের সদস্যা মুর্শিদা মণ্ডল বাস থেকে নেমে রুখে দাঁড়িতে বাস ছাড়া হয়।”

স্নেহেশবাবু দাবি করেন, “এ দিন ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মহামিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। সে জন্য ছোট গাড়ির পাশাপাশি রুটের কিছু বাস নিতে হয়েছিল। সাধারণের অসুবিধা হয়ে থাকলে আমরা দুঃখিত।” বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় মাঝে মধ্যেই গোলমাল হচ্ছে। তার মধ্যে এতবড় মিছিল করে ফের উত্তেজনাই তৈরি করা হল। যদিও স্নেহেশবাবু তা মানতে নারাজ। তাঁর পাল্টা দাবি, “অশান্তি বন্ধ করার দাবিতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে পাত্রসায়রে বড় মিছিল করার অনুরোধ আসছিল। তাই সবাইকে নিয়ে এই মিছিল করা হল। সেই সঙ্গে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতিও এই মিছিলের অন্যতম উদ্দেশ্য।” সভায় উপস্থিত ছিলেন ইন্দাসের বিধায়ক গুরুপদ মেটে, জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মুখোপাধ্যায়, পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc procession patrasayer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE