বরেন সোরেন। ছবি: উমকান্ত ধর।
প্রতিবন্ধীদের স্কুল গড়ার জন্য নিঃশর্তে নিজের আট একর জমি দান করে দিলেন এক আদিবাসী বৃদ্ধ। বাঁকুড়ার বারিকুল থানার খাড়ুঝোড় গ্রামের বাসিন্দা বরেন সোরেন বুধবার রাইপুরে প্রতিবন্ধীদের একটি সংগঠনের জেলা সভাপতির হাতে তাঁর ওই জমির দানপত্র তুলে দেন। মাস কয়েক আগে এলাকায় স্কুল তৈরির জন্য ১০ কাঠা জমি দান করেছেন জঙ্গলমহলের দুই শবর ভাই। এ বার এগিয়ে এলেন জঙ্গলমহলের আরও এক জন।
বারিকুল পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সর্ব্বেশ্বর মান্ডি বলেন, “এক হাত জমি কেউ এখন ছাড়তে চাইছেন না। আর বরেনবাবু আট একর জমি দান করলেন। শুনে অবাক হয়ে গিয়েছি।” প্রশাসন সূত্রের খবর, বরেনবাবুর দান করা ওই আট একর জমির বর্তমান বাজার মূল্য কমপক্ষে ২০ লক্ষ টাকা।
রানিবাঁধ ব্লকের বারিকুল পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত এলাকার গ্রাম খাড়ুঝোড়। ১০০টির বেশি পরিবারের বাস। অধিকাংশই আদিবাসী। গ্রামে একটি প্রাথমিক স্কুল। ৬০ ছুঁই ছুঁই বরেন সোরেন কৃষিজীবী। তাঁর ১৫ বিঘা চাষের জমির পাশাপাশি প্রায় ১৫ একর পতিত জমিও রয়েছে। তাঁর কথায়, “এলাকায় বহু প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ে রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য স্কুল নেই।” প্রত্যন্ত এলাকা বলে সমস্যা আরও বেশি।
বরেনবাবুর বক্তব্য, অন্য এলাকার প্রতিবন্ধীদের জন্য সম্প্রতি অনেক স্কুল, হাসপাতাল গড়ে উঠলেও জঙ্গলমহলের প্রতিবন্ধীরা সে সব থেকে বঞ্চিত। সেই ভেবেই তিনি জমি দান করেছেন। এলাকার প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুলের পাশাপাশি হাসপাতালও গড়া হবে বলে প্রতিবন্ধীদের সংগঠন রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর কর্মকর্তারা তাঁর কাছে জমি চেয়েছিলেন। বরেনবাবু বলেন, “ওঁদের প্রস্তাব পেয়ে আমি এক কথায় আমাদের গ্রামের কাছে ফুলকুসমা ও মাঝগেড়িয়া রাস্তার পাশে আট একর পতিত জমি ওই সংগঠনকে দান করব বলে ঠিক করি।” রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর বাঁকুড়া জেলা সভাপতি বাদল রুহিদাস জানান, প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুল ও হাসপাতাল তৈরির জন্য যে অনেকটা জমির প্রয়োজন, সে কথা বরেনবাবুকে তাঁরা বলেছিলেন। তারপরেই বরেনবাবু এক কথায় স্বেচ্ছায় দান করেছেন। রানিবাঁধের বিডিও সুমন্ত দেবনাথ বলেন, “বরেনবাবুর দান অন্যদেরও উৎসাহ জোগাবে।” বরেনবাবু ম্যাট্রিক পাশ। তাঁর দুই ছেলে, দুই মেয়েও পড়াশোনা করেছে। গ্রামবাসী কার্তিক সর্দার, গোবিন্দ সোরেন, নগেন সোরেন বলেন, “এলাকার প্রতিবন্ধীদের কথা ভেবেই এতটা জমি দান করেছেন তিনি। ওঁর জন্য আমরা গর্বিত।’’ বরেনবাবুর ছেলে মাধ্যমিক পাশ নিমাই সরেন বলেন, “এলাকার মানুষের জন্যই বাবা ওই জমি দান করেছেন। এলাকার উন্নয়ন হোক, এটা আমরাও চাইছি।” রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর রাইপুর ব্লক সম্পাদক মতিলাল কিস্কু বলেন, “ওই জমিতে স্কুলভবন, হস্টেল ও হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের কাছে আমরা সাহায্য চাইছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy