Advertisement
২২ মে ২০২৪

পড়েছে খুঁটি, বিদ্যুৎ আসেনি বলদাশহরে

দূর দূরান্তের খবর জানার জন্য গ্রামের অনেকের হাতেই রয়েছে মোবাইল ফোন। কিন্তু সেই মোবাইলের ব্যাটারি চার্জ করার জন্য যে বিদ্যুতের প্রয়োজন তা এখনও পৌঁছয়নি গ্রামে। ফলে মোবাইল ফোন চার্জের জন্য এখনও পাশের গ্রামে ছুটতে হয় হিড়বাঁধ ব্লকের বলদাশহর গ্রামের বাসিন্দাদের। বিদ্যুতের অভাবে এমনই নানা সমস্যায় নাজেহাল বাসিন্দারা অবিলম্বে বিদ্যুতের দাবিতে সরব হয়েছেন। বিদ্যুৎ দফতরের আশ্বাস, শীঘ্রই গ্রামবাসীর দাবি মিটবে।

তিনবছর ধরে পড়ে রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি।—নিজস্ব চিত্র।

তিনবছর ধরে পড়ে রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হিড়বাঁধ শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ০০:২৭
Share: Save:

দূর দূরান্তের খবর জানার জন্য গ্রামের অনেকের হাতেই রয়েছে মোবাইল ফোন। কিন্তু সেই মোবাইলের ব্যাটারি চার্জ করার জন্য যে বিদ্যুতের প্রয়োজন তা এখনও পৌঁছয়নি গ্রামে। ফলে মোবাইল ফোন চার্জের জন্য এখনও পাশের গ্রামে ছুটতে হয় হিড়বাঁধ ব্লকের বলদাশহর গ্রামের বাসিন্দাদের।

বিদ্যুতের অভাবে এমনই নানা সমস্যায় নাজেহাল বাসিন্দারা অবিলম্বে বিদ্যুতের দাবিতে সরব হয়েছেন। বিদ্যুৎ দফতরের আশ্বাস, শীঘ্রই গ্রামবাসীর দাবি মিটবে।

বাঁকুড়া-পুরুলিয়া সীমান্তে হিড়বাঁধ ব্লকের প্রত্যন্ত এক গ্রাম বলদাশহর। কংসাবতী জলাধারের পূর্বদিকে অবস্থিত মশিয়াড়া পঞ্চায়েতের এই গ্রামে প্রায় ৫০টি পরিবারের বাস। যার মধ্যে অধিকাংশ দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী পরিবার। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আশেপাশের সিমলাবাঁধ, দিগতোড়, পিরাডি, ভেদুয়া-সহ সব গ্রামেই বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। বছর তিনেক আগে এই গ্রামেও বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যুতের তার আর টানা হয়নি। ফলে আজও গ্রামে জ্বলেনি বিদ্যুতের আলো। গ্রামবাসীর ক্ষোভ, বহু টালবাহানার পরে গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা হলেও তার টেনে সংযোগ দেওয়ায় ব্যবস্থা করেনি প্রশাসন। তাই চারপাশে রাতে আলো জ্বললেও তাঁরা এখনও অন্ধকারেই রয়ে গিয়েছে।

গ্রামবাসী শক্তি বাউরি, হারাধন মুর্মু বলেন, “পেটের টানে গ্রামের বেশ কিছু যুবক গুজরাতে কাজ করতে গিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে বাড়ির লোকের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা মোবাইল ফোন। কিন্তু সেই মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ার জন্য গ্রামের মানুষকে এক কিলোমিটার দূরের সিমলাবাঁধে যেতে হয়। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে। ফোনে চার্জ না থাকলে যোগাযোগই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গ্রামে বিদ্যুৎ থাকলে এই সমস্যা থাকত না।

গ্রামবাসী গুণধর সর্দারের তিক্ত অভিজ্ঞতা, “বাড়িতে মোবাইল রয়েছে। কিন্তু তাতে চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছিল। সে জন্য বছরখানেক আগে আমার স্ত্রী-র প্রসব যন্ত্রণার সময়ে অ্যাম্বুল্যান্স ডাকতে পারিনি। অনেক কষ্টে ভ্যানে করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাকে নিয়ে যেতে হয়েছিল।” গত বছর ডিসেম্বর মাসে গ্রামের একপ্রান্তে থাকা অজিত বাউরির গোটা বাড়িটা আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায়। মোবাইলে চার্জ না থাকায় তিনিও সময়মতো দমকলে খবর দিতে পারেননি।

গ্রামের প্রায় ৫০ জন ছেলেমেয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা করছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বিদ্যুতের অভাবে রাতে পড়াশোনা করার অসুবিধা হচ্ছে। কেরোসিন বাড়ন্ত। তাই হ্যারিকেন জ্বালিয়ে বেশিক্ষণ পড়াশোনা করা যাচ্ছে না। স্থানীয় সিমলাবাঁধ হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, এই গ্রামের সরজিৎ মুর্মু, হারাধন বাউরির ক্ষোভ, “কেরোসিনের কুপি আর লন্ঠনের আলোয় আমাদের পড়তে হয়। রেশন থেকে যে কেরোসিন মেলে তাতে সারা সপ্তাহ চলে না। তাই কেরোসিনের অভাবে বেশি রাত পর্যন্ত আমরা পড়াশোনা করতে পারছি না।” তাদের আক্ষেপ, গ্রামে বিদ্যুৎ এলে পড়াশোনার বিশেষ সুবিধা হতো। গ্রামবাসী জানান, দীর্ঘদিন পরে বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা হচ্ছে দেখে তাঁদের প্রথমে আনন্দ হয়েছিল। ভেবেছিলেন, এ বার রাতে গ্রামের জমাট অন্ধকার কাটবে। কিন্তু তিন বছর ধরে শুধু খুঁটি দেখে আর মন ভরছে না তাঁদের। সকলের তাই একটাই দাবি, খুঁটিতে তার টেনে গ্রামে বিদ্যুৎ চালু করা হোক।

গ্রামবাসীর দাবিকে সমর্থন করেছেন মশিয়াড়া পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের অংশুমান বাউরি। তিনি বলেন, “ওই গ্রামে অবিলম্বে বিদ্যুতের তার টেনে সংযোগ দেওয়ার জন্য আমরা বিদ্যুৎ দফতরের কাছে দাবি জানিয়েছি।” পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বন্টন নিগম লিমিটেডের তরফে হিড়বাঁধের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক পরিতোষ বৈদ্য বলেন, “গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পে ওই গ্রামে কাজ হচ্ছে। তাই কিছুটা সময় লাগছে। খুঁটি পোঁতা হয়েছে। খুব শীঘ্রই বিদ্যুতের তার টানা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hirbandh no electricity electricity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE