সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফুটপাত জুড়ে অবৈধ দোকানের সারি।
রাস্তার জায়গা ঘিরে বাঁশের কাঠামো দিয়েই সার সার দাঁড়িয়ে নানা রকমের অস্থায়ী দোকান। কোথাও ছোটবড় পার্কিং। কোথাও আবার রাজনৈতিক দলের পার্টি অফিসও। এমনকী, নর্দমার উপরেও!
এ ভাবে কার্যত স্থায়ী কাঠামোর রূপ নেওয়া রাস্তার দু’ধারে ওই দখলদারিই রুদ্ধ করে রেখেছে জেলা সদরের স্বাভাবিক গতি। নাভিশ্বাস হয়ে উঠছে শহরের জনজীবন। ফলে সঙ্কীর্ণ হয়েছে রাস্তা। বেড়েছে যানজট। স্বচ্ছন্দে হাঁটাচলা করাও দায়। বাড়ছে ছোটখাটো পথ দুর্ঘটনাও। নর্দমাও দখল হয়ে যাওয়ায় সাফাই না করতে পেরে বেহাল নিকাশি ব্যবস্থাও। বৃষ্টি হলেই পথঘাট জল থৈ থৈ। সব মিলিয়েই অবস্থা জটিল। কিন্তু প্রশাসনেরই কোনও হেলদোল নেই! এ ব্যাপারে প্রশাসনিক নজরদারি এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছাকেই দুষছে শহরের নানা মহলে। তাঁদের নালিশ, যত দিন যাচ্ছে তত পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
অথচ কয়েক বছর আগেই কিন্তু চিত্রটা কিছুটা হলেও পাল্টে ফেলা গিয়েছিল। তৎকালীন মহকুমাশাসকের তৎপরতায় বেআইনি দখলদারির বিরুদ্ধে অভিযান করে শহরকে পরিচ্ছন্ন করতে পেরেছিল প্রশাসন। যদিও অভিযোগ, এই পদক্ষেপকে ভাল চোখে দেখেনি রাজনৈতিক নেতারা। তাই বদলি হয়ে যান এসডিও। আর তার পরেই এই শহর বেআইনি দখলদারির চোটে সেই আগের রুদ্ধ চেহারাতেই ফিরে আসে। কিন্তু এই মুহূর্তে ক্রমবর্ধমান অবৈধ দখলদারি সিউড়ি শহরের একটি প্রধান সমস্যা। একটি বড় অংশের মানুষই চাইছেন, দেরিতে হলেও এ বার এ নিয়ে প্রশাসন পদক্ষেপ করুক। নইলে যে কোনও দিন পরিস্থিতি জটিল আকার নেবে।
কেমন এই দখলদারি?এমনিতে সিউড়ি শুধুমাত্র একটি পুরশহর নয়। জেলা সদর শহরও বটে। ফলে ৮০ হাজারেরও বেশি জনসংখ্যার এই শহরে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা কাজে বহু মানুষ আসেন। কিন্তু রাস্তার দু’ধারে দখলদারির জেরে শহরের জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়। শহরের মূল প্রশস্ত রাস্তা, সিউড়ি রেল সেতু থেকে বাসস্ট্যান্ড ও প্রশাসনিক ভবন, পুরসভা হয়ে এসপি মোড় বা সিউড়ি স্ট্যান্ড থেকে স্টেশন রোড সবই এই বেআইনি দখলদারির জালে আটকে পড়ে রয়েছে।
রাস্তা দখল। সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।
সিউড়ি রেল সেতু পেরিয়েই একটার পর একটা গাড়ির গ্যারেজ। গাড়ি সারানোর অধিকাংশ কাজ চলে রাস্তার উপরেই। সারাইয়ের কাজ চলতে থাকা বা সারানোর জন্য আসা ছোট বড় গাড়িও সার দিয়ে রাস্তাতেই দাঁড় করানো থাকে। আবার অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের জন্যই সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া রাস্তা প্রস্থে অনেকটাই কমে গিয়েছে। একই অবস্থা প্রশাসনিক ভবনের দিকে এগোলেও। জেলা সংশোধনাগারের দেওয়াল ঘেঁষে রাস্তার উপরে প্রায় দিনভর বিভিন্ন সময় লাইন দিয়ে বাস থেকে অন্যান্য গাড়ি দাঁড়িয়েই থাকে। দেওয়াল ঘেঁষে জমে উঠেছে অস্থায়ী দোকান, হোটেল, নার্সারি, রাজনৈতিক দলের পার্টি অফিসও। দখলদারি চলছে খোদ পুলিশ সুপারের বাংলো পেরিয়েও। একই হাল বাসস্ট্যান্ডের উল্টো দিকে পুলিশ লাইনের দিকেও। এই সমস্যা থেকে মুক্তি নেই শহরের অন্যান্য রাস্তারও। মাদ্রাসা রোড, জেলখানা রোড, মসজিদ মোড় থেকে শহরের অন্যতম ব্যস্ত টিনবাজারের রাস্তা কিংবা সিউড়ি পুরসভার অদূরে থাকা সিনেমা হল যাওয়ার রাস্তা, সর্বত্রই বেআইনি দখলদারির একই ছবি। কোনও রাস্তার দু’ধারে বসেছে জামাকাপড়ের দোকান, কোথাও স্থায়ী দোকানদারেরাই বাইরে শেড বের করে রাস্তার দখল নিয়েছেন। কোথাও শুধু ঠেলা বা চৌকি লাগিয়েই রাস্তা জুড়ে চলছে নানা দ্রব্যের পসরা।
সিউড়ির ব্যবসায়ী সমিতি প্রকাশ্যে এই অবৈধ দখলদারির বিরোধিতাই করছে। সমিতির সম্পাদক কিষান পাল জানান, সমিতি আগেও রাস্তা দখল করে ব্যবসা করাকে সমর্থন করেনি। এক সময় সিউড়ির তৎকালীন মহকুমাশাসক (সদর) মিউটিনি বন্দ্যোপাধ্যায় অবৈধ দখলদারি হটাতে কড়া পদক্ষেপ করেছিলেন। তখন তাঁরা সব রকমের সাহায্য করেছিলেন। সমিতি প্রত্যেক ব্যবসায়ী এবং যানবাহনের মালিকদের এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধও করেছিল। তিনি বলেন, “ওই আধিকারিকের বদলির পরেই সিউড়ি শহর আবার আগের অবস্থায় ফেরত এসেছে। এ ব্যাপারে বহুবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু কোথাও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। রাস্তার দু’ধারে বেআইনি দখলদারির এই সমস্যা সিউড়িকে ধীরে ধীরে দমবন্ধ করা একটি শহরে পরিণত করছে।” ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, এ ব্যাপারে কিছু করতে হলে পুরসভা এবং প্রশাসনকেই এগিয়ে আসতে হবে। যদিও সংশ্লিষ্ট নানা মহলের অভিযোগ, তৎকালীন মহকুমাশাসকের ওই কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক নেতারা ক্ষুব্ধই হয়েছিলেন। এর পরেই তাঁকে বদলি করা হয়। পরবর্তী কালে রাজনীতির ভোট অঙ্কে পুরসভা বা জেলা প্রশাসন মাথা ঘামায়নি কেউ-ই।
সমস্যা যে গভীরে পৌঁছেছে তাতে এখনই না রুখলে জেলার সদরের যে আরও নাভিশ্বাস উঠবে, তা পুর কর্তৃপক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের কর্তা সকলেই মানছেন। কিন্তু, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? উত্তর নেই।
ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy