খামারে রাখা ধান ঝাড়তে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন আগেই। ইন্দাসের বাথানিয়া গ্রামের সেই বিজেপি সমর্থক মৈনুদ্দিন কাজীর বাড়িতে এ বার হামলার অভিযোগ উঠল স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
ধান ঝাড়া নিয়ে তিনি প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার ‘অপরাধে’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামেরই প্রায় ১৫ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে প্রথমে তাঁকে মারধর করে। এরপর তাঁর বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, ভাতৃবধূ এবং ভাইঝিকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ইন্দাস থানা থেকে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করে। পরে তাঁদের বিষ্ণুপুর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বুধবার পুলিশের কাছে ১৫ জন তৃণমূল-কর্মী সমর্থকের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৈনুদ্দিন কাজী। পুলিশ অবশ্য কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
ইন্দাসের শাসপুর পঞ্চায়েতের বাথানিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র চাষি মৈনুদ্দিনের নিজস্ব জমি দেড় বিঘা। মা, স্ত্রী, চার মেয়ে ও তিন ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। জমির আয় থেকে সংসার চলে না বলে পরের জমিতে তিনি ভাগচাষ করেন। লোকসভা ভোটের পরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। সেই আক্রোশে তৃণমূলের শেখ কালোবাবু, শেখ মন্টু, শেখ আহেল হক, শেখ সিরাজ, শেখ রহমত-সহ কয়েকজন তাঁকে জমির ধান ঝাড়তে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। তিনি জানান, পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানোর পরে কিছু ধান ঝাড়তে পারলেও অধিকাংশ ধানই ততদিনে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু কেন তিনি প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন, সেই আক্রোশে তৃণমূলের ওই লোকেরা তাঁকে ক্রমাগত শাসানি দিচ্ছিল বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারাই লাঠি, বাঁশ নিয়ে বাড়িতে চড়াও হয় বলে মৈনুদ্দিনের অভিযোগ। তাঁর দাবি, “প্রথমে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাস্তায় ফেলে পেটায়। তারপর বাড়িতে ঢুকে আমার ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মা মস্তুরা বিবি, আমার স্ত্রী লায়লা বেগম, ভাতৃবধূ জিন্নাতারা বেগম, ভাইঝি আজমাতুন খাতুনকে মারধর করে ওরা।” বিজেপি-র বিষ্ণুপুর মহকুমার সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক শিবদাস ঘোষের অভিযোগ, “মৈনুদ্দিন কাজী আমাদের দলের সমর্থক হওয়ার অপরাধেই তৃণমূলের লোকেরা তাঁকে ধান কাটা ও ধান ঝাড়তে বাধা দিয়েছিল। এ বার তাঁদের মারধর করে গোটা গ্রামে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে ওরা। পুলিশের কাছে বারবার অভিযোগ জানিয়েও লাভ হচ্ছে না।”
মারধরের অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী শেখ কালোবাবু, শেখ সিরাজ, শেখ মন্টু, শেখ রহমত। তাঁদের দাবি, “লোকসভা ভোটের আগে থেকেই মৈনুদ্দিন আমাদের সকলকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল। গ্রামের কয়েকজনের কাছ থেকে জমি ভাগে নিয়ে বোরো ধান চাষ করে তাঁদের ধান বা টাকা কিছুই দেয়নি। এ নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে ওর বচসা হয়েছে মাত্র। কেউ মারধর করেনি।” তাঁদের দাবি, এখন বিজেপির নাম জড়িয়ে মৈনুদ্দিন মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
ইন্দাস ব্লক তৃণমূল নেতা রবিউল হোসেনেরও দাবি, “এটা গ্রাম্য বিবাদ। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।” বিষ্ণুপুর মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “খবর পাওয়া মাত্র পুলিশ বাথানিয়া গ্রামে গিয়ে ওঁদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করেছে। অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। কাউকে ধরা যায়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy