ছবিটা ঠিক পাল্টে গিয়েছে। কয়েকবছর আগেও কোতুলপুরে নির্বাচনের পরে বুথ ভিত্তিক সিপিএমের ব্যাপক ভোট দেখিয়ে ওদের বিরুদ্ধে ভোটের দিন সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ তুলত তৃণমূল। এ বার লোকসভা ভোটের পরে সেই অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা, অভিযুক্ত তৃণমূল।
বস্তুত গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে কোতুলপুর ব্লক এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলতে শুরু করেছিল বিরোধীরা। এলাকায় একটি পঞ্চায়েতও পায়নি সিপিএম, কংগ্রেস বা বিজেপি-র। লোকসভা নির্বাচনের আগেও সেই প্রসঙ্গ তুলে কেন্দ্রীয় আধা সেনা চেয়ে ভোট করানোর দাবি তোলা হয়েছিল। আধা সেনা বরাদ্দ করা হলেও অনেক বুথে তাঁদের কার্যত বসিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। বিরোধী এজেন্টদের বুথে বসতেও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বিরোধী নেতৃত্বের দাবি, ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। তাই কোথাও বিরোধীরা বুথে ০, ১, ২ পর্যন্তও ভোট পেয়েছে।
প্রশাসনের কাছ থেকে পাওয়া কোতুলপুর বিধানসভার বুথ ভিত্তিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, শালতোড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০৩ নম্বর বুথে তৃণমূল প্রার্থী সৌমিত্র খান পেয়েছেন ৭৮৯টি ভোট। সেখানে বিজেপির জয়ন্ত মণ্ডল পেয়েছেন মোটে ১টি, সিপিএমের সুস্মিতা বাউড়ি ২টি। কংগ্রেসের নারায়ণচন্দ্র খানের প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য। ২০১ যাদবনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে তৃণমূল ভোট পেয়েছে ৭৬১টি, বিজেপি ৫টি, সিপিএম ৫টি এবং কংগ্রেস ২টি।
প্রায় একই চেহারা সিহড়ের পরমানন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৬০ নম্বর বুথে। সেখানে তৃণমূল ৭৮৮টি, বিজেপি ১টি, সিপিএম ৯টি এবং কংগ্রেস ৪টি ভোট পেয়েছে। ২০৭ নম্বর বুথে বনপদুয়া শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের বুথে তৃণমূল ৭৩৪টি, বিজেপি ৪টি, সিপিএম ৬টি এবং কংগ্রেস ১১টি ভোট পায়। ২০৮ নম্বর বুথে হরিণাশুলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে তৃণমূল ৯৯৩টি, বিজেপি ৪টি, সিপিএম ১১টি এবং কংগ্রেস ১টি ভোট পেয়েছে। একই অবস্থা ১৯১ নম্বর বুথে বালিগুমায়। সেখানে তৃণমূল ৯০১টি, বিজেপি ৬টি, সিপিএম ১৭টি ও ৭টি ভোট কংগ্রেস পেয়েছে। মাধবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৮৬ নম্বর বুথেও পাল্লা ভারী তৃণমূলের। তারা পেয়েছে ৪২২টি ভোট। বিজেপি সেখানে ১১টি, সিপিএম ২৬টি, কংগ্রেস ৪টি ভোট পায়। স্বভাবতই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন এই ফলাফল কী স্বাভাবিক?
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা কোতুলপুরের বাসিন্দা তাপস চক্রবর্তী-র দাবি, “কোতুলপুরে তো ভোট হয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নানা ভাবে বশীকরণ করে ভোট লুঠ করেছে তৃণমূল। আমাদের এজেন্টদের বসতেই দেওয়া হয়নি।’’ ক্ষোভে ফুটছেন বিজেপির বিষ্ণুপুর মণ্ডলের সভাপতি স্বপন ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, “দেশ জুড়ে মোদী হাওয়ায় এই জেলার অনেক জায়গাতেই বিজেপি প্রার্থীরা ভালো ভোট পেয়েছেন। তা হলে কোতুলপুরের ওই বুথগুলিতে আমাদের প্রার্থীরা কী ভাবে ১, ৪ বা ৬টি ভোট পায়? ভোটের নামে প্রহসন ছাড়া একে কী আর বলব?”
একই প্রশ্ন তুলেছেন জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কোতুলপুরে আমাদের দলের ভিত শক্ত। গতবার কোতুলপুর কেন্দ্রে কংগ্রেস জিতেছিল। তা হলে সেখানকার বুথে শূন্য পাই কী ভাবে?” বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, “কোতুলপুরে বিরোধীদের জনসংযোগ বলে আর কিছু নেই। আমাদের দল ও নেত্রী সারা বছরভর রাজ্য জুড়ে জনসংযোগ রক্ষা করছেন। তাই এই বিপুল জয় এসেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy