মোহনবাগান মোড় থেকে স্টেশন যাওয়ার রাস্তায় নিত্যদিনের সমস্যা।
নন্দিকেশ্বরী থেকে নন্দীপুর। আর সেই নন্দীপুরই আজকের সাঁইথিয়া। জলা-জঙ্গলের গঞ্জ থেকে দ্রুত গড়ে ওঠে জেলার বাণিজ্য শহর। কিন্তু সে গতি আর এখন কোথায়? যানজটের পাকে নিয়ত জড়িয়ে কার্যত অবরুদ্ধ। পরিকল্পনার অভাব আর উদাসীনতায় নাভিশ্বাস উঠছে শহরের রোজনামচায়!
শহর গড়ে ওঠার শুরুর দিকে সাঁইথিয়ায় তেমন পথঘাট ছিল না। ব্যবসা বাণিজ্য চলত ময়ূরাক্ষী নদীর জলপথের উপর নির্ভর করে। নদীর নাব্যতা কমলে অন্য শহরের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগের জন্য নদীর উত্তর পাড়ের তালতলা থেকে মুর্শিদাবাদের কান্দী-বহরমপুর একটি রাস্তা তৈরি করা হয়। রেল সেতু নির্মাণ হয় ১৮৬৫ সালে। ব্যবসা-বাণিজ্য-সহ নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এ শহরে আসেন। ছোটো-বড় গাড়ির যাতায়াতও সেই সূত্রে শহরে বেশি। স্কুলের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, বেড়েছে নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। সরকারি ও একটি বেসরকারি হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও বহু ক্লাব এবং অনেক সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে উঠেছে এ শহরে। শহরের উপর যানবাহনের চাপ বেড়েছে জন সংখ্যার সঙ্গে। কিন্ত তুলনায় রস্তাঘাট না বাড়ার কারণে শহর থমকে থাকে যানজটে।
কেমন সে যানজট চিত্র?
সকাল ৯টা। মোহনবাগান মোড়। এই মোড় থেকে রেল স্টেশনের দিকে যেতে বাঁ হাতে ঘুরেই বাসস্ট্যান্ডে ঢোকার মুখে থমকে যেতে হল। রাস্তা এতই সঙ্কীর্ণ যে, একটু অন্যমনস্ক হলেই বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। রিক্সা, ঠেলা- গাড়ি দাপটে পথ চলাই দায়! দিনভরই দুর্বহ যানজটে জেরবার থাকে এই এলাকা। সকাল ১০টা। বাসস্ট্যান্ড থেকে স্টেশন যাওয়ার রাস্তা। এই রাস্তার মাঝামাঝি বাঁ দিকে চলে গিয়েছে নজরুল সরণি। রেল সেতুর নীচ দিয়ে ওল্ড কান্দি রোডে গিয়ে মিশেছে রাস্তাটি। পুরসভার দিক থেকে আসা সমস্ত চারচাকা গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় এই সরু রাস্তায়। এই সময় এ রাস্তায় যাতায়াত করা ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতার শামিল।
এমনই হাল সিউড়ি-বহরমপুর রাস্তার। হোমিওপ্যাথি কলেজ ঢোকার মুখে। ছবি: অনির্বাণ সেন
দুপুর ১২টা। বেলা গড়িয়ে দুপুর হলে কি হবে, মোহন বাগান মোড় থেকে রেল সেতুর দিকে যাওয়া মেন রোড তখনও থমকে। আটকে রয়েছে স্কুল ভ্যান, মুর্মূষু রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স। এমন অবরূদ্ধ অবস্থা কাটাতে মাঝে মাঝেই ওয়ান-ওয়ে করে দেওয়া হয়।, তবুও মেন রোডকে যানজট মুক্ত করা যায়নি। বিকেল ৪টে হোক অথবা, সন্ধ্যা ৭টা গতি হারিয়ে যায় শহরের!
কেন এই যানজট?
বড় কারণ, শহরের বুক চিরে উত্তর থেকে দক্ষিণে যাওয়া রেললাইনের ওপরের রেলসেতু। সেতুটি প্রস্থে এতই কম যে, কোনও ভাবে সেতুর দু’পাশ থেকে দুটি গাড়ি মুখোমুখি চলে এলে আর রক্ষে নেই। কে পিছোবে এই নিয়ে দু’ চালকের মধ্যে বচসা শুরু হয়ে যায়। ততক্ষণে অবশ্য দু’পাশ থেকে আরও গাড়ি এসে সার দিয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে যায়। সে সময় সেতু বা সেতুর দু’পাশে যাতায়াত দূরের কথা, নড়াচড়ারও জায়গা পর্যন্ত থাকে না। সাঁইথিয়ায় যানজটের বড় কারণ যে এই সেতু তা শুধু চওড়া কম বলেই নয়। সেতু সংলগ্ন কয়েকটি রাস্তাও দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। সেতুর পশ্চিম দিকে যে রাস্তাটি রয়েছে, সেটি দখল করে দু’ধারে দোকান গজিয়ে উঠেছে। যা যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা তৈরি করে নিত্য। হররোজ থমকে থাকে অদূরে চৌরাস্তার মোড়ও। যানজট কমাতে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কয়েক বছর আগে একটি ফেরি ঘাট চালু করা হয়। বর্ষার সময় তিন চার-মাস সেটি বন্ধ থাকে। এখনও বন্ধই রয়েছে সেটি। সেতুর ওপর চাপ বেড়েছে। ভোগান্তি বেড়েছে বাসিন্দাদের।
যানজটের জন্য দায়ী সাঁইথিয়ার রেক পয়েন্ট। স্টেশনের পূর্ব দিকে রেক প্ল্যাটফর্মে যখন কোনও রেক এসে লাগে, মালগাড়ি খালি বা ভর্তি করার পুরো সময়জুড়েই হাঁপিয়ে ওঠে শহর। কেন না, সে সময় প্রচুর ট্রাকের আনাগোনা হয় শহরে। অন্য দিকে ইউনিয়ন বোর্ড মোড় থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তাটি বেহালের জন্য মন্থর করে দেয় যান চলাচল।
এছাড়া যত্রতত্র থেমে গিয়ে বাসের যাত্রী তোলা বা ট্রাক থামিয়ে মাল ওঠা-নামানোও যানজটের অন্যতম কারণ। এসব কারণের জেরেই শহরের চৌরাস্তা মোড়, রেল সেতু, হাটতলা, মোহনবাগান মোড়, সন্ধানী মোড়, ইউনিয়ন বোর্ড মোড়, নতুন ব্রিজের মুখ থেমে থাকে দিনের বেশিরভাগ সময়। এ সব কারণেই থমকে একসময়ের বাণিজ্য-বসতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy