দলের জেলা নেতৃত্ব কলকাতায় দলীয় কর্মীদের নিয়ে যেতে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে বাস পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বাসে উঠলেন মোটে ১৩ জন তৃণমূল কর্মী। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে শহিদ দিবসের সমাবেশে সোমবার মানবাজার অঞ্চল থেকে কেন অত কম কর্মী গিয়েছিলেন, তা নিয়ে এখন তৃণমূলের অন্দরে জলঘোলা শুরু হয়েছে। নীচুতলার কর্মীদের অভিযোগ, দলের স্থানীয় নেতৃত্ব ওই সভা নিয়ে কোনও রকম উৎসাহ না দেখানোতেই এই কাণ্ড।
গত কয়েকবছরে কলকাতায় তৃণমূল নেত্রীর ডাকে শহিদ সমাবেশে এই এলাকা থেকে বাস ভর্তি করে কর্মীরা যেতেন। তখন ছিল বামফ্রন্টের সময়। কিন্তু এখন মানবাজার পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে বিধায়কও তৃণমূলের। তারপরেও মানবাজার সদর এলাকা থেকে কেন প্রায় শূন্য বাস কলকাতায় গেল তা নিয়ে নীচুতলার কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ জমা বেঁধেছে।
রবিবার রাতে মানবাজার থানা চত্বর থেকে তৃণমূলের পতাকা লাগানো বাসটি ছাড়া হয়। কর্মীরা জানাচ্ছেন, বাস ছাড়ার সময় ছিল রাত ৮টা। কিন্তু বাস না ভরায় তাঁরা আরও ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষা করেন। ওই বাসের যাত্রী তৃণমূল কর্মী বিজয় দাস, প্রশান্ত ধবলবাবু বলেন, “বাসে মাত্র ১৩ জন কর্মী ছিলাম। দলের কয়েকজনকে ফোনে ডেকেছিলাম। কিন্তু তাঁরা উল্টে জানিয়ে দেয়, দলের নেতারা কেউ তাঁদের সমাবেশ নিয়ে কোনও খবর দেয়নি। তাই এ বার সমাবেশে তাঁরা যাবেন না।” মানবাজার পোদ্দার পাড়ার বাসিন্দা তৃণমূল কর্মী নন্দলাল দাস দলের স্থানীয় বুথ কমিটির নেতা। নন্দলালবাবু বলেন, “আমি ওই গাড়িতে ছিলাম। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরে বুঝতে পারলাম দলের আর কেউ সমাবেশে যাবেন না। তখন বাধ্য হয়ে প্রায় ফাঁকা গাড়ি নিয়েই আমরা রওনা দিই। সকালবেলা গাড়িটা কলকাতায় ঢোকার পরে অন্য জেলার কর্মীরা আমাদের ফাঁকা গাড়ি দেখে হাসাহাসি করছিল। তখন খুব খারাপ লাগছিল।” এক কর্মী আক্ষেপ করে বলেন, আগের বার তো বাসে জায়গাই হয়নি। এ বার প্রথমে উঠে ফাঁকা বাস দেখে আনন্দ লেগেছিল। কিন্তু যখন দেখলাম আর কেউ যাবে না, তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়।”
নামোপাড়ার বাসিন্দা তৃণমূলের মানবাজার অঞ্চল কমিটির কোষাধ্যক্ষ তুষার বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে কচিবাবুও ওই সমাবেশে যাননি। কেন? তাঁর অভিযোগ, “২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য অঞ্চল কমিটিতে কোনও আলোচনাই হয়নি। অঞ্চল সভাপতি কাউকে এ ব্যাপারে কিছু জানান নি।” তাঁর মতোই এ বারও সমাবেশে যাননি দলের সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত অনাথবন্ধু মুখোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন, “দলের তরফে কেউ আমন্ত্রণও জানায়নি। জানতামই না আমাদের অঞ্চল থেকে গাড়ি ছাড়া হচ্ছে। দলের কয়েকজনের কাছে খোঁজও করেছিলাম বাসের ব্যবস্থা হয়েছে কি না। কিন্তু কারও কাছেই স্পষ্ট জবাব পাইনি।”
নীচুতলার কর্মীরা জানাচ্ছেন, বিষয়টি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বেশ কিছু দিন ধরেই দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে নীচুতলার কর্মীদের মধ্যে ব্যবধান তৈরি হয়েছে। তাঁদের ক্ষোভ, মানবাজার অঞ্চল সভাপতি থেকে ব্লক সভাপতি নিজেদের মতো চলেন। কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের সংযোগ নেই। সাংগঠনিক সভাও নিয়মিত হয় না। বুথ ও অঞ্চল কমিটির উন্নয়ন সংক্রান্ত তথ্য মেলে না। যাঁরা এ নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন তাঁরা স্থানীয় নেতৃত্বের বিরাগভাজন হয়েছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, দলের সমস্ত কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সংগঠন ঠিক রাখতে হলে এ বার ওই সব পদে যোগ্য আনতে হবে। এ নিয়ে দলের জেলা সভাপতির কাছেও তাঁরা আর্জি জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
যাঁরা ওই বাসে চেপে সমাবেশে গিয়েছিলেন, তাঁরা জানান, দলের ব্লক সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ মাহাতোর স্ত্রী কবিতা মাহাতো মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ সেরে ফেরার পথে শক্তিগড়ে মানবাজার অঞ্চলের কর্মীদের সঙ্গে দেবেন্দ্রনাথবাবুর দেখা হয়। তাঁ কাছে কর্মীরা অভিযোগ জানিয়েছিলেন, স্থানীয় নেতৃত্বের উপর ক্ষোভেই অনেক কর্মী এ বার সমাবেশে যেতে রাজি হননি। যদিও পরে দেবেন্দ্রনাথবাবু দাবি করেছেন, “মানবাজার অঞ্চল থেকে এত কম লোক সমাবেশে গিয়েছিল বলে আমি জানতাম না। কেন কর্মী-সমর্থকরা যাননি দলীয় ভাবে খোঁজ নেব।” মানবাজারের অঞ্চল সভাপতি মন্তাকিন খান বলেন, “এখন তো কোন কমিটির অস্তিত্ব নেই। কর্মীরা কেন সমাবেশে যাওয়ার উৎসাহ হারালেন বুঝতে পারছি না। শরীর খারাপ থাকায় ওইদিন আমিও যেতে পারিনি।” প্রচার চালানো হয়েছিল? তিনি বলেন, “পোস্টার তো দেওয়া হয়েছিল।” যদিও এ বার এলাকায় দলের তরফে সমাবেশের পোস্টারও অন্য বারের তুলনায় খুব কম পড়েছিল।
তবে দলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেছেন, “একটি অঞ্চল থেকে দলের কর্মী-সমর্থকরা কেন গেলেন না তা স্থানীয় নেতাদের জানা উচিত ছিল। ওদের কাছ থেকে এর জবাব চাইব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy