Advertisement
১৯ মে ২০২৪

স্বর্ণমালায় চমক বিষ্ণুপুরী তাঁতের

বিষ্ণুপুরী বালুচরীর আদলেই বছর কয়েক আগে বাজারে এসেছিল স্বর্ণচরী। বিষ্ণুপুরের বালুচরী শিল্পী গুরুদাস লক্ষণ রেশমি সুতোর সঙ্গে ঝলমলে জরির কাজ জুড়ে নামিয়েছিলেন সেই শাড়ি। সাবেকি ভাবনা ছেড়ে আধুনিকতার মোড়কে বাঁধা সেই শাড়ি বঙ্গ ললনাদের যথেষ্টই মনে ধরেছিল। বাংলার গ্রাম-শহর মাতিয়ে দিল্লি, চেন্নাই, মুম্বইয়েও ভাল বাজার তৈরি করতে পেরেছিল স্বর্ণচরী।

তাঁতশালে চলছে স্বর্ণমালা শাড়ি বোনা।—নিজস্ব চিত্র।

তাঁতশালে চলছে স্বর্ণমালা শাড়ি বোনা।—নিজস্ব চিত্র।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫৩
Share: Save:

বিষ্ণুপুরী বালুচরীর আদলেই বছর কয়েক আগে বাজারে এসেছিল স্বর্ণচরী। বিষ্ণুপুরের বালুচরী শিল্পী গুরুদাস লক্ষণ রেশমি সুতোর সঙ্গে ঝলমলে জরির কাজ জুড়ে নামিয়েছিলেন সেই শাড়ি। সাবেকি ভাবনা ছেড়ে আধুনিকতার মোড়কে বাঁধা সেই শাড়ি বঙ্গ ললনাদের যথেষ্টই মনে ধরেছিল। বাংলার গ্রাম-শহর মাতিয়ে দিল্লি, চেন্নাই, মুম্বইয়েও ভাল বাজার তৈরি করতে পেরেছিল স্বর্ণচরী। বলা যায় সেই থেকেই বনেদি বালুচরী শাড়িটিকে নিয়ে নতুন পরীক্ষায় নামেন বিষ্ণুপুরের তাঁত শিল্পীরা। প্রাচীন রামায়ণ, মহাভারতের কাহিনী ছেড়ে আদিবাসী চিত্রকলা রূপ পায় অমিতাভ পালের সৃষ্টি ‘তিনকন্যা’ শাড়িতে। আধুনিক কবিতার নির্যাস আনেন তাঁর ‘রূপশালি’ নামের অনবদ্য শাড়ির শৈলিতেও।

এ বার পুজোয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সেই ধারায় যুক্ত হল ‘স্বর্ণমালা’।

মাস কয়েক হল বাজারে এসেছে কার্তিক দাসের তাঁতশালে তৈরি তুঁতে রঙের সঙ্গে সোনালি জরির অনবদ্য ‘কম্বিনেশন’-র এই শাড়িটি। সারা গায়ে ছোট ছোট বুটিকে নকশিকাঁথার নক্শা। কোথাও কোথাও লম্বালম্বি সোনালি জরির মালা। বিষ্ণুপুরের কুসুমতলায় নিজের তাঁতঘরে নতুন ওঠা শাড়িটি দেখিয়ে বছর চল্লিশের এই তাঁতশিল্পী বলেন, “২০ বছর আগে আমার বাবা হরমোহন দাস হাতে ধরে বালুচরী বুননের কাজ শিখিয়েছিলেন। একই প্রথায় সাবেকি ভাবনার শাড়ির বাজার পড়ে আসছিল। তাই একটু নতুনত্ব আনার চেষ্টা দেখা যাক না, একালের মেয়েদের মন ভরে কিনা সেই ভাবনা থেকেই তৈরি করেছি স্বর্ণমালা।” শাড়িতে বিষ্ণুপুরের মন্দিরের টেরাকোটার সেই কৃষ্ণলীলা, দোলখেলা, মাখনচুরির দৃশ্য এঁকেছেন। রেশম ও জরির বুটিকের কাজে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। আর শাড়ির উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ঝলমলে জরির কাজ। শিল্পীর কথায়, “এর জন্যই নাম দিয়েছি স্বর্ণমালা।” তিনি জানান, সাধারণ একটি বালুচরী বুনতে সময় লাগে চারদিন। এই শাড়ি তৈরি করতে অবশ্য ছ’দিন লেগে যাচ্ছে। নক্শার গ্রাফের অদল-বদল করায় এই দেরি। ফলে দামও কম রাখা যায়নি। কার্তিক বলছেন, “তাঁতশালেই এই শাড়ির দাম সাড়ে ছ’হাজার টাকা। দোকানে ৮০০০ নীচে পাওয়া মুশকিল।”

পুজোর বাজার ধরার জন্য গত ছ’মাসে ৩০টি শাড়ি তিনি বাজারে ছেড়েছেন। তাঁর দাবি, “ভালই সাড়া মিলছে। বহু দোকানে চাহিদা অনুযায়ী জোগান দিতে পারছি না। অনেক ক্রেতা তাই সরাসরি তাঁতশালে চলে আসছেন।” বিষ্ণুপুরের কালীতলায় বালুচরী শাড়ির দোকানে ঢুকে দেখা গেল মা-মেয়ে দর কষাকষি করছেন শাড়িটি নিয়ে। তাঁর বলছেন, “দাম বেশি হলেও শাড়ির গায়ের কাজ ও আঁচল বেশ নজর কেড়েছে। দেখি শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারি কি না।” ওই দোকানের মালিক বলেন, “তাঁতশাল থেকে অল্প শাড়ি এসেছে। বেশিটাই গিয়েছে কলকাতায়। বেড়াতে এসে বালুচরী নিয়ে যান না এমন লোক কম। আশা করছি ভালই বিক্রি হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE