Advertisement
০২ মে ২০২৪

বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথের পাশে শ্যামাপ্রসাদ, প্রশ্ন প্রদর্শনীতে

বাংলার মাটিতে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ কী ভাবে ঘটেছিল, তা-ই নিয়ে প্রদর্শনী। আলিপুরে জাতীয় গ্রন্থাগারে কেন্দ্র আয়োজিত সেই প্রদর্শনীতেও ফুটে উঠল উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং তাকে নিয়ে রাজনীতির ছায়া। 

জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রদর্শনীতে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।  ছবি: কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রদর্শনীতে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। ছবি: কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০৩:৫৭
Share: Save:

বাংলার মাটিতে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ কী ভাবে ঘটেছিল, তা-ই নিয়ে প্রদর্শনী। আলিপুরে জাতীয় গ্রন্থাগারে কেন্দ্র আয়োজিত সেই প্রদর্শনীতেও ফুটে উঠল উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং তাকে নিয়ে রাজনীতির ছায়া।

শুক্রবার ওই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। প্রদর্শনীটির মূল বিষয় আবর্তিত হয়েছে চার জন বাঙালি— বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে। প্রথম তিন জনের সঙ্গে শ্যামাপ্রসাদের অন্তর্ভুক্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। তাঁদের মতে, বাংলার জাতীয়তাবাদের যে-কাঠামো এবং প্রথম তিন মনীষী যে-ধরনের জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, তার থেকে শ্যামাপ্রসাদের মতাদর্শ অনেক আলাদা। এবং শুধু শ্যামাপ্রসাদে শেষ নয়, জাতীয় আন্দোলনে সুভাষচন্দ্রের অবদানের হাত ধরে প্রদর্শনীতে ঠাঁই করে নিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও! সুভাষচন্দ্রই যে প্রথম স্বাধীন সরকার গড়েছিলেন, তা জানাতে গিয়ে সম্প্রতি লালকেল্লায় নেতাজিকে মোদীর শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের ছবি দেওয়া হয়েছে ওই প্রদর্শনীতে!

ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায় বলছেন, ‘‘শ্যামাপ্রসাদ নিশ্চয়ই দেশপ্রেমিক। কিন্তু তাঁর জাতীয়তাবাদ ছিল হিন্দু মহাসভার রূপে। পরবর্তী কালে যা জনসঙ্ঘ এবং বিজেপিতে রূপান্তরিত হয়েছে। জাতীয়তাবাদের তিনটি রূপ দেখা যায়: ভারতীয় জাতীয়তাবাদ, হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং মুসলিম জাতীয়তাবাদ। মুসলিম জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশে এবং পাকিস্তানে দেখা গিয়েছে। বর্তমানে এ দেশে যে-সরকারি জাতীয়তাবাদ দেখা যাচ্ছে, সেটা হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবোধ।’’ তাঁর মতে, প্রথম তিন জনের পাশে বাংলার জাতীয়তাবাদী চেতনার পথিকৃৎ হিসেবে চিত্তরঞ্জন দাশ বা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাখা যেতে পারত।

জাতীয়তাবাদের বিকাশে শ্যামাপ্রসাদকে তুলে ধরা হলেও প্রদর্শনী দেখে জাতীয় আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা স্পষ্ট হয়নি। লেখা হয়েছে, ‘‘সাম্প্রদায়িকতার উত্তপ্ত পরিবেশে মুসলিম লিগ দ্বারা ছড়ানো হিংসাত্মক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি হিন্দুদের তরফে প্রতিবাদের ঝড় তোলেন।’’ শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুরহস্য বোঝাতে একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ছবি দেওয়া হয়েছে, যেখানে মৃত্যুরহস্যের পিছনে নেহরুর ‘ষড়যন্ত্র’-এর উল্লেখ রয়েছে। কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে এই ধরনের বক্তব্য বা অভিযোগ প্রদর্শিত হতে পারে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে।

আরও পড়ুন: জন্মদাত্রীর খোঁজে শহরে জার্মানির যুবক

প্রদর্শনীতে দেখা গিয়েছে, বাংলার জাতীয়তাবাদের উন্মেষ বোঝানোর আগে ‘ভারতবর্ষ’ চিনিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্তারা। দেশ চেনানোর উপকরণ হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে প্রাচীন ভারতীয় নানা ভাস্কর্য! বলা হয়েছে, শিলালেখের মাধ্যমে মৌর্য সম্রাট অশোক জাতি ও অখণ্ড ভারতের ধারণা তৈরি করেছিলেন।

‘‘সেই সময় তো জাতির ধারণাই ছিল না। জাতীয়তাবাদ অনেক পরে এসেছে। অশোকের শিলালেখ ধরে কখনওই অখণ্ড ভারতের কথা বলা যায় না,’’ বলছেন যদিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষিকা সায়ন্তনী পাল। ইতিহাসবিদদের বক্তব্য, কোনও একটি ভূখণ্ডকে সাময়িক ভাবে দখলে আনা এবং জাতীয়তাবাদ এক জিনিস নয়। জাতীয়তাবাদের ধারণা ষোড়শ শতকের আগে ইউরোপেও ছিল না। ভারতে সেটা এসেছে আরও পরে। তাই মৌর্য সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সেটাকে মেলানো যায় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE