বিধানসভায় বাৎসরিক পুষ্প প্রদর্শনীর উদ্বোধনে উপস্থিত রাজ্যপাল, স্পিকার, মন্ত্রী। সেই মঞ্চেই আচমকা পড়ুয়াদের কণ্ঠে গীতার স্তোত্রপাঠ! সরকারি অনুষ্ঠানে ধর্মগ্রন্থ পাঠের এমন ঘটনাকে ঘিরে বাধল বিতর্ক।
ডিসেম্বরের শেষে বিধানসভার উদ্যানে পুষ্প প্রদর্শনীর রেওয়াজ বহু দিনের। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে গীতাপাঠের আসর এই প্রথম। ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিন পার্ক স্ট্রিটে বড়দিনের উৎসবের সূচনা করছেন, সে দিনই বিধানসভার মধ্যে ঘটেছে এমন ঘটনা। স্কুলপড়ুয়াদের কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ শুনেই প্রবল আপত্তি জানিয়েছে বামেরা। এমন উদ্যোগ ‘অসাংবিধানিক’ না হলেও এর মধ্যে রাজনৈতিক বার্তা দেখতে পাচ্ছে কংগ্রেসও। স্পিকার অবশ্য মনে করছেন, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতিকে জড়ানো উচিত নয়।
বিধানসভার অনুষ্ঠানের পরেই বিকাশ ভবনে পাশ-ফেল নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ডাকা বৈঠক ছিল। পরিষদীয় মন্ত্রী হিসাবে পার্থবাবুই বিধানসভার অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। শিক্ষা সংক্রান্ত বৈঠকের অবসরে সুজনবাবুরা বিষয়টি নিয়ে পার্থবাবুর কাছে প্রশ্ন তোলেন। পরিষদীয় মন্ত্রী তাঁদের জানান, এই বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। সুজনবাবু পরে বলেন, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানে গীতা বা বেদপাঠ কেন হবে? কখনও তো এমনও হয়নি! বিজেপি-শাসিত রাজ্যে যেমন হয়, এখানেও তেমন শুরু হল? শাসক পক্ষ কি দিল্লিকে বার্তা দিতে চাইছে যে, দেখো আমরাও তোমাদের পথে এগোচ্ছি?’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘এটা সংবিধান-বিরোধী নয়। তবে আমি এতে অন্যায়ের কিছু না দেখলেও মানুষ সন্দেহ করছেন। মুখ্যমন্ত্রী এক দিকে কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব রাখার কথা বলছেন। আর অন্য দিকে নানা কেলেঙ্কারি থেকে বাঁচতে তাঁরা কি ক্রমাগত বিজেপি-ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন?’’
পরিষদীয় মন্ত্রী এই বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বিতর্ক উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘গীতা সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত। একটা অনুষ্ঠানে গীতাপাঠ হলে কার কী জাত গেল, বুঝতে পারছি না! সব কিছুকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত নয়।’’ আগে তো কখনও এমন হয়নি? স্পিকারের জবাব, ‘‘আগে হয়নি বলে কখনও হবে না, তার কোনও মানে আছে? অনেক কিছুই তো আগে হয়নি। এখন হচ্ছে।’’
স্পিকারের জবাব শুনে সুজনবাবু আবার বলেছেন, ‘‘তা হলে তো এর পরে সরকারি অনুষ্ঠানে কোরান বা বাইবেল পাঠের দাবি উঠবে। সে সবও মানতে হবে!’’ বিরোধীদের মতে, গুজরাতে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে রাহুল গাঁধী যেমন মন্দিরে মন্দিরে ঘুরেছেন, এ রাজ্যে মমতার সরকারও তেমন ‘নরম হিন্দুত্বে’র কৌশল নিয়েছে। তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ প্রবল। সেই অভিযোগকে সামনে রেখে হিন্দুদের মধ্যে বিরূপ মনোভাবের ফায়দা নিতে চাইছে বিজেপি। শাসক পক্ষ তাই রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী, লোকনাথ উৎসব থেকে গীতাপাঠ— কিছুই বাদ রাখছে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy