Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Raniganj

জোশীমঠের মতো অবস্থা হতে পারে রানিগঞ্জের, ২০ হাজার মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ মমতার

মেঘালয় রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠের পরিস্থিতির কথা। এই প্রসঙ্গেই মমতা তুলে ধরেন রানিগঞ্জে ধসের ঘটনা।

রানিগঞ্জের কয়লাখনি অঞ্চল নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

রানিগঞ্জের কয়লাখনি অঞ্চল নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও আসানসোল শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:২৮
Share: Save:

জোশীমঠের মতো পরিণতি হতে পারে পশ্চিম বর্ধমানের কয়লাখনি অঞ্চল রানিগঞ্জেরও। মঙ্গলবার এই আশঙ্কার কথা শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন করে বাড়ি তৈরি করে না দিলে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাঁর। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগও তুলেছেন তিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে মেঘালয় রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা। এই প্রসঙ্গেই মমতা তুলে ধরেন রানিগঞ্জে ধসের ঘটনাও। তিনি বলেন, ‘‘অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি জোশীমঠে। আগে বন্দোবস্ত করলে এই দিন দেখতে হত না। একই অবস্থা রানিগঞ্জে। গত ১০ বছর ধরে এটা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আমরা লড়াই করছি। যে টাকা দেওয়ার কথা ছিল, কিছুই দেয়নি। ধস নামলে ২০ হাজার মানুষ মরে যেতে পারে যদি আমরা ঘর না বানিয়ে দিই। আজ পর্যন্ত টাকা দিল না। আমাদের যা ছিল তা দিয়েই বানিয়েছিল। কিন্তু আরও টাকা লাগবে। অন্তত ৩০ হাজার মানুষ প্রভাবিত হতে পারেন।’’

সম্প্রতি জোশীমঠে ধস এবং ফাটলের জেরে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ পরিস্থিতি। সেখানে ভেঙে ফেলতে হয়েছে একাধিক বাড়ি এবং হোটেল। পাহাড়ি ওই এলাকার মতো ধসের দৃশ্য বার বার দেখা গিয়েছে সমতলের রানিগঞ্জেও। মাটির ফাটল থেকে অনেক বার বেরোতে দেখা গিয়েছে ধোঁয়া এবং আগুন। আবার কোথাও কোথাও ধসও নেমেছে। যদিও, জোশীমঠের তুলনায় রানিগঞ্জের পরিস্থিতির ভয়াবহতা দৃশ্যত অনেকটাই কম। রানিগঞ্জ ধসপ্রবণ এলাকা মানলেও, জোশীমঠের সঙ্গে তুলনা টানতে নারাজ স্থানীয় বাসিন্দারা। রানিগঞ্জের বাসিন্দা তথা ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতা রামপ্রসাদ খৈতানের কথায়, ‘‘উত্তরাখণ্ডের সঙ্গে রানিগঞ্জের তুলনা টানব না। আমরা জানি, রানিগঞ্জ ধস কবলিত শহর। রোজ ধস নামছে শহরে। কিন্তু এটা মানতে হবে, গত কয়েক বছরে বেআইনি ভাবে প্রচুর কয়লা উত্তোলন হয়েছে। আমরা চাই, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউ জ়িল্যান্ডের মতো এখানেও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খননকার্য চলুক। আমাদের শহরটাকে বাঁচাতে হবে। আমরা জানি না কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার কিসের অপেক্ষা করছে?’’

একই সুর আসানসোলের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ তথা আসান দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বংশগোপাল চৌধুরীরও। তিনিও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের পক্ষে সওয়াল করেছেন। কেন্দ্রকে বিঁধে বংশগোপালের বক্তব্য, ‘‘শিল্পাঞ্চলে ধস নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও দিনই মাথা ঘামায়নি। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের উচিত এই এলাকার ভূতাত্ত্বিক রিপোর্ট অনুযায়ী ধস রুখতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা ঠিক করা। বৈজ্ঞানিক ভাবে কয়লা তুলতে হবে। এ সব বিষয় কেন্দ্রীয় সরকারকে বোঝানোর দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্যকে। কিন্তু রাজ্য জুড়ে বেআইনি ভাবে কয়লা উত্তোলন নিয়ে এখন বড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কয়লাখনির সঙ্গে উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতির কোনও সম্পর্ক নেই। ওখানে প্রকৃতির উপর অবহেলা আছে হয়তো।’’

খনি বিশেষজ্ঞ অনুপ গুপ্তের মতে, ‘‘অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যে ভাবে কয়লা উত্তোলন হচ্ছে তার জন্য রানিগঞ্জ কয়লা অঞ্চলে ধস দেখা যায়। এই সব এলাকা ধসপ্রবণ বলে আগেই চিহ্নিত হয়েছিল। কেবলমাত্র রেললাইনের পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং রানিগঞ্জ কয়লা খনির কিছু অংশ বাদ দিলে প্রায় সমস্ত এলাকাই ধসপ্রবণ। ১৪-১৫ বছর আগে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর ধস নামে। নিমচাতে এখনও আগুন রয়েছে। বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থা মিথেন উত্তোলন করছে। যার ফলে ওই মিথেন গ্যাস থেকে আগুন লাগার যে সম্ভাবনা ছিল তা অনেকটাই কমে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Raniganj Coal Mining Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE