মগরাহাটের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের দাবি জানালেন নির্যাতিতা কিশোরী আয়েশার (নাম পরিবর্তিত) মা। বুধবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তাঁর কাছেই পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের দাবি জানান আয়েশার মা। তাঁর অভিযোগ, অপহৃত আয়েশার ঠিকানা জানার পরেও পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ কোনও তৎপরতা দেখায়নি। তার পর আজ, বৃহস্পতিবার আয়েশার মা বলেন, ‘‘এত মেয়ে যে পাচার হয়ে যাচ্ছে, সেই পাচারকারীদের শাস্তি চাই। আমি যেমন কাঁদছি, আমার মতো আরও পাঁচটা মেয়ের মা-ও কাঁদছে। যারা এই মেয়েদের নিয়ে ব্যবসা করছে, তাদের শাস্তি দিতে হবে।’’
দিল্লির গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে মেয়ের খোঁজ মেলার পর আয়েশার মা ছুটে এসেছেন রাজধানীতে। হাসপাতালেই থাকছেন। সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট আগেই জানিয়েছিলেন, সুবিচারের আশায় আয়েশার মাকে নিয়ে তিনি রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করবেন। বুধবার বৃন্দার সাহায্যেই আয়েশার মা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। নির্যাতিতার অন্যান্য আত্মীয়, ‘আমরা আক্রান্ত’-র সদস্য মইদুল ইসলামরা জাতীয় মহিলা কমিশন ও দিল্লি মহিলা কমিশনের কাছেও দরবার করেছেন।
নির্যাতিতার মা ও অন্যান্যদের কাছে রাজনাথ অবশ্য হতাশাই প্রকাশ করেছেন। জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে তিনি চিঠি লিখতে পারেন। কিন্তু রাজ্য সরকার তাঁর কোনও চিঠির জবাব দেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করে না। তবে তদন্ত ও কিশোরীকে সাহায্যের বিষয়ে কী করা যায়, সে বিষয়ে তিনি স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, প্রাথমিক ভাবে আইন-শৃঙ্খলা যে হেতু রাজ্যের বিষয়, তাই এ বিষয়ে রাজ্যকে এড়িয়ে কিছু করা কঠিন।
মগরাহাটের দশম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশাকে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ডায়মন্ড হারবারের হাসপাতাল থেকে অপহরণ করা হয় বলে তার পরিবারের অভিযোগ। সে দিন অসুস্থ বৌদির সঙ্গে হাসপাতালে গিয়েছিল আয়েশা। এক বছর ধরে নির্যাতনের পর শরীরে এইচআইভি ভাইরাস নিয়ে এখন সে দিল্লির হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। আয়েশার মায়ের আক্ষেপ, ‘‘এই বছরই মাধ্যমিক দেওয়ার কথা
ছিল মেয়ের। টেস্ট পরীক্ষাও দিয়েছিল। তার পরেই যে কী হয়ে গেল!’’
আয়েশার মায়ের অভিযোগ, মেয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার পরে মগরাহাট বা ডায়মন্ড হারবার থানায় গেলে ওরা কিছুই করেনি। একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল। পাঁচ মাস আগে মেয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। সে সময় ওকে দিল্লিতে আটকে রাখা হয়েছিল।
আয়েশার পরিবারের দাবি, যখন আয়েশার ফোন আসে, তখন তারা থানাতেই ছিল। মেয়ের সঙ্গে পুলিশ অফিসারদের কথাও বলানো হয়। দিল্লির গগন বিহারের কত নম্বর গলির, কত নম্বর বাড়িতে আয়েশাকে আটকে রাখা হয়েছিল, যে ওকে আটকে রেখেছিল, সেই আসলাম ওরফে জব্বারের ফোন নম্বর, মোটরবাইকের নম্বরও দিয়েছিল কিশোরী। ‘‘তার পরেও পুলিশ কিছু করেনি। এত দিন ধরে ওরা কেন কিছু করল না?’’— প্রশ্ন আয়েশার মায়ের। জব্বারকে অবশ্য পাকড়াও করেছে গাজিয়াবাদ পুলিশ। তা-ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে।
এখন বাংলার পুলিশ কী করছে? আয়েশার পরিবার দিল্লি আসার পরে তদন্তকারী অফিসার সুদীপ দত্তের নেতৃত্বে ডায়মন্ড হারবার থানার একটি দল দিল্লিতে এসে পৌঁছয়। আইন মাফিক ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬৪ নম্বর ধারায় নির্যাতিতার বয়ান নথিবদ্ধ করে দলটি আজকেই ফের কলকাতার ট্রেন ধরেছে। পুলিশের পরিকল্পনা, এর পর স্থানীয় আদালতে ধৃত জব্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করা হবে। তার পর ফের দিল্লিতে এসে জব্বারকে ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন জানানো হবে।
তবে এই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে একহাত নিয়েছেন বৃন্দা কারাট। অভিযোগ করেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত এই মামলায় পক্সো (প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স) আইন প্রয়োগ করা হয়নি। কর্তব্যে গাফিলতি করলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’ তিনি আরও জানান, মেয়েটির চিকিৎসার খরচ এবং পরিবারের জন্য কোনও সুরাহার বন্দোবস্ত করেনি রাজ্য। রাজ্যের তরফে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্যও কাউকে পাঠানো হয়নি। বৃন্দার কথায়, ‘‘দিল্লিতে তো রাজ্য সরকারের রেসিডেন্ট কমিশনারের অফিস রয়েছে। আজ পর্যন্ত কেউ এই গরিব পরিবারের জন্য কিছু করেনি।’’
রাজ্য সরকার সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, শনিবার থেকেই রেসিডেন্ট কমিশনারের দফতরের তরফে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। একটি সরকারি প্রতিনিধি দল হাসপাতালেও গিয়েছে। হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে মেয়েটির ঠিক মতো চিকিৎসার জন্য এবং তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য স্থানীয় থানায় অনুরোধও জানানো হয়েছে। তবে হাসপাতালের চিকিৎসার খরচ বহন করার কোনও নির্দেশ এখনও পর্যন্ত নবান্ন থেকে আসেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy