Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

‘নাকের’ গুঁতো, ঝুলপড়া হস্টেল ভরল রাতারাতি

দু’দিন আগেও ছিল ঝুলপড়া, ধুলোয় ঢাকা ছাত্রী নিবাস। রাতারাতি ভোল বদলে ফেলা সেই ভবনেই শোনা গেল জনা পঁচিশ তরুণীর কলকলানি। পড়া মুখস্ত করার হাঁকডাক, মিঠে গলায় গানের কলি...। বারান্দার তারে মেলা জামাকাপড়। হেঁসেল থেকে ভেসে আসছে মুরগির মাংসের সুবাস। সব মিলিয়ে একেবারে ভরা সংসার।

রায়দিঘি কলেজ সংলগ্ন ছাত্রীনিবাস। — নিজস্ব চিত্র।

রায়দিঘি কলেজ সংলগ্ন ছাত্রীনিবাস। — নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
রায়দিঘি শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫২
Share: Save:

দু’দিন আগেও ছিল ঝুলপড়া, ধুলোয় ঢাকা ছাত্রী নিবাস। রাতারাতি ভোল বদলে ফেলা সেই ভবনেই শোনা গেল জনা পঁচিশ তরুণীর কলকলানি। পড়া মুখস্ত করার হাঁকডাক, মিঠে গলায় গানের কলি...। বারান্দার তারে মেলা জামাকাপড়। হেঁসেল থেকে ভেসে আসছে মুরগির মাংসের সুবাস। সব মিলিয়ে একেবারে ভরা সংসার।

‘খালি ডাল’ কী ভাবে ‘ফুলে ভরল’ সেই কারসাজি অজানা নয় কারও। ভাড়ার যন্ত্রপাতি এনে মেডিক্যাল কলেজের অপারেশন থিয়েটারকে ‘কনে সাজানো’র নজির আছে এ রাজ্যে। মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার (এমসিআই) অনুমোদন পেতে কাউন্সিলের প্রতিনিধিদের সামনে এ হেন নাটক মঞ্চস্থ করে দেখিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। সেই কায়দাতেই এ বার ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের (নাক) সামনে ছাত্রী জুটিয়ে বন্ধ হস্টেলকে চালু দেখানোর ঘটনা ঘটল দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে।

মাস কয়েক আগে জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করেছিলেন রায়দিঘি কলেজ-সংলগ্ন ছাত্রী নিবাসটির। নামকরণ হয় ‘নিবেদিতা ছাত্রী নিবাস।’ ২০১১ সালে বাম জমানার শেষ দিকে হস্টেলের ভবন তৈরি শেষ হলেও নানা কারণে ছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা শুরু হয়নি তারপরেও।

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, দিল্লিতে মানব সম্পদ উন্নয়ন দফতরে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন তাঁরা, সেখানে কলেজের নানা পরিকাঠামোর বিবরণের পাশাপাশি ছাত্রী নিবাসটিরও উল্লেখ ছিল। ফলে প্রতিনিধি দল এলে সবটা গুছিয়ে দেখানোর দায়ও চাপে। পরিকাঠামো, শিক্ষার মান— এ সবের ভিত্তিতে সারা দেশের কলেজগুলির মান নির্ণয় করে ‘নাক’।

‘নাক’-এর সামনে নাক কাটানোর প্রশ্নই নেই!

অতএব কলেজ এবং হস্টেলকে পরিপাটি করে তোলার কাজে নেমে পড়েন কলেজ কর্তৃপক্ষ। আর এই কাজে তাঁরা পাশে পেয়ে যান স্থানীয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীদেরও। নাকের দল এসেছে ২৬ তারিখ। ২৫ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ সকাল পর্যন্ত ছাত্রীদের রাখার বন্দোবস্ত হয়েছে হস্টেলে।

জানা গেল, মেয়েদের মেস থেকে জোটানো হয়েছে জনা পঁচিশ ছাত্রীকে। তাঁদেরই শিখিয়ে-পড়িয়ে দিন তিনেকের জন্য রাখা হয়েছে হস্টেলে। ছাত্রী জোটানো থেকে শুরু করে রাঁধুনি ধরে আনা, বাজারহাট করা, ঘরদোর সাফসুতরো করে অস্থায়ী ভাবে বাসযোগ্য করে তোলা, মায় শৌচালয়ে জলের ব্যবস্থা করা— সবটাই সামলেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছেলেরা।

যা নিয়ে লুকোছাপাও নেই সংগঠনের রায়দিঘি ব্লক সভাপতি উদয় হালদারের। তাঁর কথায়, ‘‘ছাত্রী নিবাসটি খুব শীঘ্রই চালু হবে। নাকের সামনে তারই নমুনা দেখানো হয়েছে।’’ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুদিন সিংহও বলেন, ‘‘নাকের প্রতিনিধি দল ওই হস্টেলে যাবে বলে কিছু ছাত্রীদের অস্থায়ী ভাবে সেখানে রাখা হয়েছে।’’

যদিও গোটা ঘটনা শুনে স্তম্ভিত প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘এ ভাবে ছাত্রীদের এনে রাখাটা তৃণমূলের প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।’’ সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা অবশ্য বলেন, ‘‘হস্টেলটি খুব শীঘ্রই কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। এ জন্য অবিলম্বে
বৈঠক ডাকব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE