চোর ঠেকাতে এ বার ‘রক্ষাকবচ’ ব্যবহার করবে বিদ্যুৎ দফতর।
রাজ্য জু়ড়ে হুকিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ঠেকাতে চেষ্টার কসুর করেন না বিদ্যুৎ কর্তারা। কিন্তু কোনও কিছুই তেমন কাজে লাগে না। উল্টে চুরির বহর দিন দিন বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন এক অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছেন বিদ্যুৎ বণ্টন কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের সর্বত্র লো-টেনশন খোলা তার বদল করে সেখানে মোটা রবার দিয়ে মোড়া ইনসুলেটেড কেবল লাগানো হবে। এই কেবলের পোশাকি নাম ‘এরিয়াল বাঞ্চড কেবল’ বা এবিসি। এর বিশেষত্ব হল, বিদ্যুৎবাহী মূল তারে হুকিংয়ের তার লাগাতে গেলে মোটা রবারের আস্তরণ কাটতে হবে। যা একই সঙ্গে কঠিন এবং বেশ বিপদজনক। ইতিমধ্যেই এই কেবল পরীক্ষামূলক ভাবে লাগিয়ে সুফল পেয়েছেন বিদ্যুৎ কর্তারা।
কী রকম? বীরভূমের লাভপুর ও আশেপাশের কয়েকটি অঞ্চলে গত বছর ইনসুলেটেড কেবল লাগানো হয়। তার আগে ওই অঞ্চলে ঘন ঘন ট্রান্সফর্মার বিকল হত। অথচ সাবস্টেশন হয়ে ট্রান্সফর্মার দিয়ে যত ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হত, তার অর্ধেক টাকাও বণ্টন সংস্থার ঘরে ঢুকত না! ইনসুলেটেড কেবল লাগানোর পরে ছবিটা বদলে গিয়েছে। এখন আর যখন-তখন ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে যায় না। উল্টে গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে ৩০০-র বেশি। এক বিদ্যুৎ কর্তা জানান, আগে যে সব ট্রান্সফর্মারে ক্ষতির হার ছিল ৬০-৭০ শতাংশ, এখন তা কমে ১০-১৫
শতাংশ হয়েছে।
সল্টলেকের বিদ্যুৎ ভবনে, বিদ্যুৎ চুরির তালিকায় প্রথম দিকে নাম রয়েছে যে সব জেলার, সেখানে এই কেবল লাগানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই পাঁচ হাজার কিলোমিটার ইনসুলেটেড কেবল লাগানো হয়ে গিয়েছে। এর খরচ বহন করেছে বণ্টন সংস্থাই। ঠিক হয়েছে, সব জেলাতেই ধাপে ধাপে খোলা তারের লো-টেনশন লাইন বদলে দিয়ে সারা রাজ্যে ২৩ হাজার কিলোমিটার ইনসুলেটেড কেবল লাগানো হবে। খরচ হবে ১১০০ কোটি টাকা। বণ্টন সংস্থা সূত্রে খবর, সম্প্রতি এই পরিকল্পনার খসড়া পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের কাছে এবং অনুমোদনও মিলেছে। কেন্দ্রও বিদ্যুতের ক্ষতি কমাতে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু-সহ একাধিক
রাজ্যকে এই ধরনের পরিকাঠামো তৈরির কথা বলেছে।
রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তারা বলছেন, ইনসুলেটেড কেবল লাগালে এক দিকে যেমন হুকিং বন্ধ হবে, পাশাপাশি রাজস্বও বাড়বে। ঘিঞ্জি এলাকায় খোলা তারে অনেক সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ইনসুলেডেট তারে সেই আশঙ্কাও প্রায় থাকবে না।
রাজ্যে ক্ষমতায় এসে সবার ঘরে আলো প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রকল্পে বিদ্যুৎ দিতে গিয়ে বণ্টন সংস্থার গ্রাহক সংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়েছে। ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ খরচ করবে, এমন পরিবারের জন্য রাজ্য মাসুলের উপরে ভর্তুকিও দেবে বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু এত করেও বিদ্যুৎ চুরি রোখা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, এই তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, এবং দুই ২৪ পরগনা। এই সব জেলায় এমন জায়গাও রয়েছে, যেখানে ১০০ টাকার বিদ্যুৎ বিক্রি করলে বণ্টন সংস্থার ঘরে আসে ৮০ টাকা! ইনসুলেটেড কেবল লাগালে এই ক্ষতির হার কমবে বলে বিদ্যুৎ কর্তাদের দাবি।
বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিভিন্ন ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে প্রচার চালানো হচ্ছে, যাতে মানুষ আইনি পথে বিদ্যুৎ পরিষেবা নেন। আমাদের দলের বিধায়ক, সাংসদ-সহ জনপ্রতিনিধিরাও মানুষকে বোঝাচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy