Advertisement
১৭ মে ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

পঞ্চায়েতের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অনেক বিতর্ক, প্রশ্নোত্তরে জবাব খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন

পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমার সময় নিয়ে কমিশনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। কিন্তু রীতি বা নিয়ম কী? সর্বশেষ পরিস্থিতিই বা কী? এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন।

Image of Sukanta Majumder.

সব প্রশ্নের জবাব। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৩ ২০:৪২
Share: Save:

রাজ্য নির্বাচন কমিশন কি ঠিক মতো তার দায়িত্ব পালন করছে? পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার দিন থেকেই নানা বিতর্ক, নানা বিরোধ। যা গড়িয়েছিল আদালতেও। বিরোধীদের দাবি, কমিশন রীতি ভেঙে নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছে। বিপুল সংখ্যক আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। যার সুবিধা পাবে আসলে শাসকদল তৃণমূল।

কলকাতা হাই কোর্টে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ দু’দিনের শুনানিতে মনোনয়নের সময়সীমা নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছিল। প্রস্তাব আকারে কিছু মতামতও দিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার দেওয়া চূড়ান্ত রায়ে এ সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছেড়ে দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হাতেই।

প্রথম চার দিনের (শুক্র, শনি, সোম, মঙ্গল) মনোনয়ন পর্বের পর আরও একটি প্রশ্ন এই প্রসঙ্গে জুড়েছে। তা হল, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের হাজার হাজার আসনের মনোনয়নে অত্যন্ত কম সংখ্যায় মনোনয়ন জমা পড়েছে এখনও পর্যন্ত, বাকি দু’দিনে সত্যিই কি সবার মনোনয়ন ঠিক মতো জমা পড়া সম্ভব? নতুন করে কি মনোনয়নের সময়সীমা বাড়তে পারে এখনও? এমন অনেক প্রশ্নই মানুষের মনে। সে সবের জবাব প্রশ্নোত্তরে খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রশ্ন: মনোনয়নের সময়সীমা নিয়ে কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে কি?

উত্তর: সাত দিন পর্যন্ত মনোনয়নের সময় দিতে পারে নির্বাচন কমিশন। কমিশন প্রথম থেকেই বলে এসেছে, মনোনয়ন থেকে নির্ঘণ্ট প্রকাশ সবই আইন মেনে করা হয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন রুল বুকের বাইরে কিছু করেনি। প্রসঙ্গত, অতীতের থেকে এমন কিছু রদবদলও হয়নি এ বারে। কলকাতা হাই কোর্টের রায়ও কমিশনের বিজ্ঞপ্তিকেই শেষ পর্যন্ত মান্যতা দিয়েছে।

প্রশ্ন: মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য সাধারণত কত দিন সময় দেওয়া হয়?

উত্তর: ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল ২ এপ্রিল। মনোনয়নের শেষ দিন ছিল ৯ এপ্রিল। ২ থেকে ৯ ধরলে মোট ৮ দিন। এ বার ভোট ঘোষণা হয়েছে ৮ জুন। পরের দিন ৯ জুন, সকাল ১০টায় মনোনয়নের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। বলা হয় সে দিন বেলা ১১ থেকে শুরু করে ১৫ জুন বিকেল ৩টে পর্যন্ত মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে। ৯ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ ধরলে মোট ৭ দিন। দুই ক্ষেত্রেই মাঝে একটি করে ছুটির দিন (রবিবার) রয়েছে, যে দিন মনোনয়ন জমা দেওয়া যায় না। গত বারের মতো এ বারও বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত মনোনয়ন জমা নেওয়া হচ্ছে।

প্রশ্ন: ২০১৮-র থেকে আর কি কিছু বদলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন?

উত্তর: হ্যাঁ, একটি ক্ষেত্রে বদলেছে। পাঁচ বছর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট (মনোনয়নের দিনক্ষণ-সহ) ঘোষণা হয়েছিল ৩১ মার্চ। এর পরে একটি দিন বাদ দিয়ে ২ এপ্রিল মনোনয়নের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। নির্বাচন ঘোষণা এবং মনোনয়ন শুরুর মাঝে একটি দিন প্রস্তুতির জন্য সময় পেয়েছিল সব রাজনৈতিক দল।

প্রশ্ন: জাতীয় নির্বাচন কমিশন কী করে থাকে?

উত্তর: গত বিধানসভার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল, ২০২১ সালের ২ মার্চ মনোনয়নের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। সময়সীমা ছিল ৯ মার্চ পর্যন্ত। ২ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত ধরলে মোট ৮ দিন। অর্থাৎ, ঠিক ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের মতোই। কিন্তু এ বারের ভোটের থেকে এক দিন বেশি।

প্রশ্ন: মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিধানসভা নির্বাচন আর পঞ্চায়েত নির্বাচনের মধ্যে কি তুলনা চলে?

উত্তর: মূল ফারাকটাই হল আসন সংখ্যায়। এই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪টি কেন্দ্রের জন্য প্রতিটিতে গড়ে দশ জন প্রার্থী হলেও মোট সংখ্যাটা ২,৯৪০ জন। কিন্তু ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে শুধু জেলাপরিষদের আসন সংখ্যাই ৯২৮। সেখানে গড়ে দশ জন প্রার্থী হতে চাইলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৯,২৮০।

প্রশ্ন: রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে মোট আসন কত?

উত্তর: গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন সংখ্যা ৬৩ হাজার ২২৯। পঞ্চায়েত সমিতি আসন ৯,৭০৩। আর ২০টি জেলা পরিষদে মোট আসন ৯২৮টি। সব মিলিয়ে ভোটগ্রহণ হবে ৭৩,৮৮৭ আসনে। প্রতিটিতে সব রাজনৈতিক দল এবং নির্দল মিলিয়ে গড়ে ১০ জন করে প্রার্থী হলে মনোনয়ন জমা দেবেন ৭,৩৮,৮৭০ জন।

প্রশ্ন: এখন মনোনয়নের কী পরিস্থিতি?

উত্তর: রাজ্য নির্বাচন কমিশন প্রতি দিন রাতে ওই দিন পর্যন্ত মোট কত প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তার হিসাব প্রকাশ করে। মঙ্গলবার অর্থাৎ মনোনয়নের চতুর্থ দিনের শেষের হিসাবে দেখা যাচ্ছে— মোট মনোনয়ন জমা প়ড়েছে ৯৩,৪২৫টি। রাজ্যের প্রধান চারটি দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমা দিয়েছে বিজেপি। ৩৭,৫৬৫টি। সিপিএম জমা দিয়েছে ৩০,২৪৯টি। তৃতীয়ে রয়েছে তৃণমূল। মনোনয়ন জমা পড়েছে ৯,৩২৮টি। কংগ্রেসের জমা পড়েছে ৭,৩৬৯টি।

প্রশ্ন: সব প্রার্থীর মনোনয়ন নেওয়ার বিষয়ে কী বলছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন?

উত্তর: রাজ্য নির্বাচন কমিশন আদালতে মনোনয়ন জমার জন্য একটি দিন সময় বাড়াতে পারে বলে জানিয়েছিল। তবে আদালতের রায়ে নির্দিষ্ট করে কিছু নির্দেশ না দেওয়ায় এখনও তা বাড়ানো হয়নি। কমিশন জানিয়েছে, পঞ্চম দিনের মনোনয়নের পর, এবং ষষ্ঠ বা শেষ দিনের গতিপ্রকৃতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সময়সীমা বৃদ্ধি হবে কি না। তবে কমিশনের মতে, রুল বুক অনুযায়ী আর ১ দিনই তা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Election 2023 West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE