এস এস অহলুওয়ালিয়া ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
টিভিতে ঝগড়াটাই দেখা গেল! তৃণমূল-বিজেপি খুনসুটি, গান, আড্ডা সবই থেকে গেল আড়ালে! যখন ছেলেমানুষি করে পিছন থেকে এসে তৃণমূল সাংসদের দু’কাঁধে হাত রেখে বিজেপির সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বললেন, “আর ঝগড়া করবে?” ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে, তৃণমূল সাংসদ এক গাল হেসে জবাব দিলেন, “ও তুমি। দাঁড়াও তোমার হচ্ছে। একটা গান করো না শুনি!” সেকেন্ড মাত্র সময় না নিয়ে দু’কলি গান শুনিয়ে দিলেন বিজেপির মন্ত্রী,-“আমার প্রাণের পরে চলে গেল কে, বসন্তের বাতাসটুকুর মতো।” বঙ্গ রাজনীতিতে সৌজন্যের অভাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। আজ কিন্তু বিপরীত চিত্র দেখেছে সংসদ ভবন।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির জমিতে তৃণমূল-বিজেপি লড়াইয়ের তিক্ততা কতটা, তা প্রায়ই বোঝা যায়। গ্রামগঞ্জে পরস্পরের উপরে খুনোখুনির অভিযোগও বাদ নেই। তার প্রতিফলন দেখা যায় সংসদেও। যেমনটা আজও দেখা গেল। বর্ধমানে এক বৃদ্ধা মহিলার ধর্ষণের ঘটনার কথা আজ লোকসভায় জিরো আওয়ারে তোলেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। সেই প্রসঙ্গকে সামনে রেখে সুরেন্দ্র যখন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করছেন, তখন প্রবল স্বরে আপত্তি করেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেন, এটা ভ্রান্ত অভিযোগ। মেডিক্যাল রিপোর্ট বলছে, মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়নি। এই তর্ক-বিতর্কের পাশাপাশি উত্তপ্ত বাদানুবাদ শুরু হয়ে যায়। যা থামাতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে যান স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। হতাশ হয়ে এক সময় তিনি সুরেন্দ্র ও কল্যাণকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনারা এক কাজ করুন। লোকসভা থেকে বেরিয়ে বাইরের লবিতে গিয়ে যত ইচ্ছে ঝগড়া করুন!”
লোকসভায় কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় বরাবরই আক্রমণাত্মক। কেন্দ্রে ইউপিএ জমানায় তাঁর নিশানায় মূলত ছিলেন বামেরা। এখন বিজেপি। কয়েক দিন আগে সংসদের লবিতেও কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের সঙ্গে সংসদের লবিতে তাঁর তুমুল ঝগড়া হয়। বিষয়টি স্পিকারের দফতর পর্যন্ত গড়ায়।
কিন্তু তৃণমূল-বিজেপি সম্পর্কের শীতের মাঝে আজ হঠাৎ বসন্তের ঝলকও এসেছিল। সুরেন্দ্রকে আক্রমণ করতে গিয়ে এক সময় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বলেন, “সবটাই তো করছেন টিভিতে মুখ দেখানোর জন্য, তাই তো!” কিন্তু তার পর কল্যাণ কী ভাবে আজ আর এক বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের খোশ মেজাজে আড্ডা দিলেন, তা টিভিতে দেখা যায়নি। ঘটনাটি ঘটে সংসদের সেন্ট্রাল হলে। অর্পিতা ঘোষ, দোলা সেন ও কল্যাণবাবু দুপুরে সংসদের সেন্ট্রাল হলে আড্ডা দিচ্ছিলেন। হঠাৎই এসে কল্যাণবাবুর কাঁধে হাত রেখে টিপে দেন বাবুল। তার পর গানও শোনান দু’কলি।
রাজনীতিকদের মতে, এ ঘটনা ইতিবাচক। রাজনীতির ময়দানের বাইরে ব্যক্তিগত স্তরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সুসম্পর্ক থাকবে, সেটাই সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ। দলমত নির্বিশেষে এক সময় সংসদের সেন্ট্রাল হলে সাংসদরা এ ভাবেই খোশ গল্প করতেন। তাঁদের আবার পৃথক পৃথক গোষ্ঠী ও ক্লাব ছিল। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর মতে, মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে এখনও সেই ব্যাপারটা রয়েছে। বিপরীত রাজনৈতিক মতাদর্শ পোষণ করলেও শরদ পওয়ার থেকে কংগ্রেসের বহু রাজ্য নেতার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্য রয়েছে। এমনকী এক কংগ্রেস নেতার উইলের তিনি প্রধান সাক্ষী।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে অবশ্য তা বিশেষ দেখা যায় না। তবে বাবুল আজ বলেন, “রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়। ব্যক্তিগত স্তরে সবার সঙ্গেই ভালো ব্যবহার করে চলার পক্ষে আমি। তাছাড়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের সব সাংসদের সঙ্গে সহযোগিতা করেই চলতে চাই।” বাবুল জানিয়েছেন, শতাব্দী রায় থেকে শুরু করে বেশ কয়েক জন তৃণমূল সাংসদ তাঁদের নির্বাচনী কেন্দ্রে ‘জওহরলাল নেহরু আর্বান রিনিউয়াল মিশনের’ আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ ও কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তাঁর কাছে তথ্য চেয়েছিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেই তথ্য সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy