Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Santanu Banerjee

স্যর আশুতোষের মূর্তির নীচে শান্তনুর নাম, বলাগড় কলেজে ফলক থেকে মোছা হল বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতার চিহ্ন

পাথরের ওই মূর্তি বসে ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, বুধবার শান্তনুর নামের উপরে প্রথমে স্টিকার সেঁটে দেওয়া হয়। সাদা রং দিয়ে পাকাপাকি ভাবে মুছে দেওয়া হয়েছে তাঁর নাম।

 plaque in Balagarh College

শান্তনুর নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। ছবি: বিশ্বজিৎ মণ্ডল

প্রকাশ পাল
বলাগড় শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৩ ০৬:৩৪
Share: Save:

দু’দফায় টানা ছ’বছর হুগলির বলাগড় বিজয়কৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন নিয়োগ-দুর্নীতিতে ধৃত তৃণমূলের যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় কলেজে স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের একটি আবক্ষ মূর্তির উদ্বোধন করেছিলেন শান্তনু। ওই মূর্তির স্তম্ভের ফলক থেকে শান্তনুর নাম মুছে দিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

পাথরের ওই মূর্তি বসে ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, বুধবার শান্তনুর নামের উপরে প্রথমে স্টিকার সেঁটে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সাদা রং দিয়ে পাকাপাকি ভাবে মুছে দেওয়া হয়েছে তাঁর নাম।

কেন?

কলেজের অধ্যক্ষ প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এত বিশাল পরিমাণ দুর্নীতির সঙ্গে ওঁর যোগের যে অভিযোগ উঠছে, এ সম্পর্কে আমরা জানতামই না। এখন জেনে চোখ ছানাবড়া হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং, ওঁর সঙ্গে কোনও সংস্রব রাখা চলে না।’’

শান্তনু প্রথম বার ওই কলেজের সভাপতি হন ২০১৫ সালে। কলেজ সূত্রে জানা যাচ্ছে, বছর তিনেক আগে, দ্বিতীয় দফায় সভাপতি থাকাকালীন দু’জনকে তৃতীয় শ্রেণির কর্মী পদে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগের দাবি জানিয়েছিলেন শান্তনু। সেই দাবি মানেননি অধ্যক্ষ। তিনি জানিয়েছিলেন, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশ রয়েছে, অস্থায়ী পদে নিয়োগ না করার। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে তাঁরা স্থায়ী পদ দাবি করবেন।

অধ্যক্ষের অভিযোগ, দাবি না-মানায় অখুশি শান্তনু তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। গোটা বিষয়টি অধ্যক্ষ লিখিত ভাবে শিক্ষা দফতর, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং হুগলির তৎকালীন যুব তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবকে জানান। ২০২১ সালে বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী সভাপতি হন।

এতেই অবশ্য কলেজ কর্তৃপক্ষের ‘ঝক্কি’ শেষ হয়নি। ’২১ সালের অগস্টে কলেজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শান্তনু ও প্রাক্তন বিধায়ক অসীম মাঝির ছবি দেওয়া দু’টি ফ্লেক্স নিয়ে বিতর্ক হয়। ওই ফ্লেক্স কলেজ কর্তৃপক্ষ শৌচাগারের সামনে রেখে দিয়েছেন, এই অভিযোগে একদিন শতাধিক লোক অধ্যক্ষ-সহ তিন শিক্ষককে রাত পর্যন্ত ঘেরাও করেন। অভিযোগ, শান্তনুর অনুগামী ছাত্র এবং বহিরাগতেরা ওই কাণ্ড ঘটান। পরিস্থিতি এমন হয়, কলেজ-কর্তৃপক্ষকে ছবি যথাস্থানে লাগিয়ে ঘেরাওকারীদের কথা মেনে মুখ্যমন্ত্রীর ছবির সামনে ক্ষমা চাইতে হয়।

অধ্যক্ষের কথায়, ‘‘আমার সুগার, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। সে দিন গালিগালাজ করা হচ্ছিল। প্রাণের দায়ে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। ওদের তখন কী উল্লাস!’’ মুখ্যমন্ত্রীর ছবি শৌচাগারের সামনে রাখা হয়েছে বলে সেই সময় শান্তনু নিজেও অভিযোগ করেছিলেন। কলেজের সঙ্গে যুক্ত অনেকের দাবি, ওই অভিযোগ সঠিক ছিল না। তাঁর কথা মেনে লোক ঢোকানোয় অসম্মত হওয়া এবং সভাপতি পদ থেকে সরানোর জন্য তদ্বির করার প্রতিশোধ নিতে শান্তনুই ঘনিষ্ঠদের দিয়ে শিক্ষকদের হেনস্থা করান।

সভাপতি হওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা শান্তনুর ছিল কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। কলেজ সূত্রের খবর, ব্রাত্য বসু প্রথম দফায় শিক্ষামন্ত্রী থাকার সময় নিয়ম ছিল, কলেজে সভাপতি হতে ন্যূনতম স্নাতক হতে হবে। পার্থ শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পরে ওই নিয়ম মানা হয়নি। সেই সময়ই শান্তনু সভাপতি হন। কলেজের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চাইব, সেই সাহস তখন আমাদের ছিল না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Santanu Banerjee Balagarh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE