(বাঁ দিকে) সইফুদ্দিন লস্কর এবং শওকত মোল্লা। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করকে খুনের ঘটনায় উত্তপ্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর। এরই মধ্যে তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করলেন শাসকদলের নেতা তথা ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা। বিধায়কের দাবি, ভাঙড়ে দলীয় কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে তাঁর কাছে হুমকি-ফোন আসে। বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালিকেও এ ব্যাপারে তিনি অবগত করেছেন বলেও জানিয়েছেন শওকত।
মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে শওকত দাবি করেন, সকাল ১০টা নাগাদ ভাঙড়ের পথে যাওয়ার সময় তাঁর কাছে হুমকি ফোন এসেছিল। যে নম্বর থেকে ফোনটি এসেছিল বলে দাবি করেছেন বিধায়ক, সেটিও প্রকাশ্যে আনেন তিনি। শওকত বলেন, ‘‘আমাকে ফোন করে বলা হয়েছে, ‘গত কাল খুন করেছিল। তোকেও খুন করে দেব। তুই তৈরি থাকিস।’ আর সেই সঙ্গে কদর্য ভাষায় গালিগালাজ চলছিল। আমাকে বলেছে, হয় ক্যানিংয়ে, নয়তো ভাঙড়ে খুন করবে।’’
সোমবার সকালে বামনগাছি পঞ্চায়েতের বাঙালবুড়ির মোড়ে নমাজ পড়তে যাওয়ার সময় খুন হন সইফুদ্দিন। মসজিদের সিঁড়িতে সবে পা রেখেছিলেন তিনি, এমন সময়ে তাঁর ঘাড়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু পালানোর সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় দু’জন ধরা পড়ে যান স্থানীয়দের হাতে। অভিযোগ, তাঁদের এক জনকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। অন্য জনকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিপিএমের বিরুদ্ধে সইফুদ্দিনকে খুনের অভিযোগ তুলে এলাকার বেশ কয়েক জন বাম নেতা-কর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয় স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ। অন্তত পনেরোটি বাড়ি ও দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। দগ্ধ হয়েছে বাড়ি লাগোয়া খড়ের গোলা। তবে আর কোনও প্রাণহানির খবর মেলেনি। কিন্তু জেলায় এই রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যেই শওকত দাবি করলেন, বিরোধী দলেরই কেউ তাঁকে খুনের হুমকি দিয়েছেন। এর পরেই বিধায়ক বলেন, ‘‘আমি শহিদ হতে ভয় পাই না। এক বার কেন, একশো বার মারলেও কিছু যায় আসে না।’’
বিরোধীদের বিরুদ্ধে খুনের হুমকির অভিযোগ তোলা নিয়ে ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি পাল্টা বলেন, ‘‘যিনি খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন, তিনি তো শাসকদলের বিধায়ক। তাঁর দল ক্ষমতায় রয়েছে। তার পরেও তাঁকে খুনে হুমকি দেওয়ার সাহস হয় কী করে? পুলিশ-প্রশাসন কী করছে? বগটুইকাণ্ডের পর বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ-প্রশাসন সেই কাজ যদি করতে পারত, তা হলে এই ঘটনা ঘটত না।’’
সইফুদ্দিন খুনে রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েছে জয়নগরে। স্থানীয়দের একাংশের মত, সইফুদ্দিনের বাড়বাড়ন্তও এই খুনের কারণ হতে পারে। এক সময়ে তিনি সিপিএম করতেন। ২০১৬-১৭ সাল নাগাদ বামনগাছি পঞ্চায়েতের সিপিএম পরিচালিত বোর্ডের বিরোধিতা শুরু করেন। পরে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৮ সালে তৃণমূল এই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করে। প্রধান নির্বাচিত হন তাঁর স্ত্রী সরিফা। বামনগাছি অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি হন সইফুদ্দিন। বকলমে পঞ্চায়েত চালাতেন তিনিই। জয়নগর ও বকুলতলা থানাতেও তাঁর নিয়মিত যাতায়াত ছিল। নানা বিষয়ে এলাকার এক সিপিএম নেতার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিলেন সইফুদ্দিন। তাঁর খুনের ঘটনায় সিপিএমের বিরুদ্ধেই আঙুল তুলেছিলেন শওকত। দাবি করেছিলেন, “যারা ধরা পড়েছে, তারা সুপারি কিলার। এদের মাথা কে? সে কি বারুইপুরে সিপিএমের পার্টি অফিসে বসে আছে? পুলিশ তাকে খুঁজে বার করুক।”
সিপিএমের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ওঠার পরেই বাঙালবুড়ির মোড় থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে দলুয়াখাকি গ্রামে সিপিএম নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। দাবি, সেই সময় পুলিশ কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। সেখানকার পরিস্থিতি দেখতেই মঙ্গলবার জয়নগরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএমের প্রতিনিধিদল। সেই দলে ছিলেন সুজন চক্রবর্তী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়েরা। কিন্তু সিপিএম নেতারা গ্রামে ঢোকার আগে বামনগাছিতে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। তা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে পুলিশের বচসাও বাধে। প্রকাশ্যে আসা একটি ভিডিয়ো ফুটেজে এক পুলিশ আধিকারিককে ধাক্কা দিতেও দেখা গিয়েছে সুজনকে। সেই ভিডিয়োটির সত্যতা অবশ্য আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। সুজন বলেন, ‘‘তিন দিন সময় দিলাম। এর মধ্যে গ্রামের পরিবেশ শান্ত করতে হবে। নইলে সর্বশক্তি নিয়ে আমরা ঝাঁপাব।’’ সিপিএমের দাবি, দলুয়াখাকি তৃণমূলের কব্জায় নেই। সেই কারণেই সোমবার সেখানে হামলা চালানো হয়েছে। মঙ্গলবার জয়নগর যেতে চান নওশাদও। তিনিও গোচারণে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। তাঁকেও পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বচসায় জড়াতে দেখা গিয়েছে। কিসের ভিত্তিতে তাঁকে আটকানো হচ্ছে, তা পুলিশের কাছে জানতে চান নওশাদ। কিন্তু পুলিশের তরফে তাঁকে নথি দেখানো হয়নি। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই নওশাদ ও সিপিএম নেতাদের দলুয়াখাকি যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy