Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Chandrayaan-3's Moon Landing

মুঠোয় চাঁদ, এ দেশকে আর হেলাফেলার স্পর্ধা কার!

১৯৬৯-এ চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছিল আমেরিকা। যদিও সেই ঘটনাটি নিয়ে বিতর্কও বড় কম নেই। চাঁদে সত্যিই মানুষ নেমেছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে। এবং সেগুলি বিজ্ঞান-ভিত্তিক প্রশ্নও বটে।

Chandrayaan 3

চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান-৩। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৩ ০৬:০৯
Share: Save:

আমাদের সব চেয়ে কাছের মহাজাগতিক বস্তুটি হল চাঁদ। চন্দ্রিমার সৌন্দর্য নিয়ে কোনও কথা হবে না। তা নিয়ে দিস্তে দিস্তে গদ্য-পদ্য লেখা হয়ে গিয়েছে। লক্ষ লক্ষ নারী ও পুরুষের নামকরণের অনুপ্রেরণা ওই চাঁদ। কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাসে চাঁদের ছড়াছড়ি। নর-নারীর ভালবাসা, বিরহ দশা, একাকিত্ব, বাচ্চাদের ভোলানোর জন্য ‘আয় আয় চাঁদমামা, টিপ দিয়ে যা’— ইত্যাকার নানা বিষয়ে চাঁদ আমাদের ভারী কাজে লাগে।

প্রেমিক-প্রেমিকাদের অতি প্রিয় ও পক্ষপাতের বস্তু হল ওই চাঁদ। চাঁদবদনীদের কদর এখনও তুঙ্গে। তোফা একখানা উপমা দিয়েছিলেন বটে সুকান্ত, ‘পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’। লা জবাব। কোনও কোনও জিনিস আছে, যা দূর থেকেই সুন্দর, কাছ থেকে নয়। ওই চাঁদ যেমন। ঊষর, রুক্ষ, আবহমণ্ডলহীন, জলবায়ুহীন, নেড়া একটা জায়গা। তা হোক, ওই চাঁদের চারণ দেখেই নিরূপণ হয় আমাদের ইদ বা একাদশী, ব্রত-প্রায়শ্চিত্ত, নদীর জোয়ার-ভাটা এবং আরও অনেক কিছু।

১৯৬৯-এ চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছিল আমেরিকা। যদিও সেই ঘটনাটি নিয়ে বিতর্কও বড় কম নেই। চাঁদে সত্যিই মানুষ নেমেছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে। এবং সেগুলি বিজ্ঞান-ভিত্তিক প্রশ্নও বটে। সেই ঘটনার অর্ধশতাব্দীরও পরে চাঁদে তিন-তিন বার চন্দ্রযান পাঠাল ভারতের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ। দুঃখের বিষয় হল, স্বাধীনতা লাভের পরে ছিয়াত্তরটা বছর কেটেছে, তবু আজও ‘উন্নয়নশীল’ তকমাটা ঝেড়ে ফেলা গেল না। বরং অগৌরবের যে তকমাটি হালে এ দেশের কপালে জুটেছে, তা হল, পৃথিবীর সব চেয়ে জনাকীর্ণ দেশ। চিনকে অন্য অনেক বিষয়ে হারাতে না পারলেও, এই একটা বিষয়ে

তো পেরেছি!

বিজ্ঞান জিনিসটা এখন ‘গ্লোবাল’। এ দেশের মস্তিষ্কবানেরা বিদেশে গিয়ে উন্নত বিজ্ঞান শিখে হয় ও সব দেশেই থেকে যান, নয়তো কেউ কেউ ফিরে আসেন। যাঁরা ফিরে আসেন, তাঁদের মাথায় ভর করেই রকেট সায়েন্সের এ দেশে অনুপ্রবেশ। নইলে স্বনির্ভর রকেট বিজ্ঞান আয়ত্ত করতে ভারতের হয়তো আরও বহুকাল লেগে যেত। তবে বিদ্যার আমদানিতে লজ্জার কিছু নেই। অগৌরবেরও বিষয় নয়। দুঃখের বিষয় হল, এ দেশে বিশ্বমানের মেধার অভাব নেই। তার অফুরান জোগান। অভাব শুধু পরিকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধার। অর্থের অভাবের কথাটা আর বাহুল্য হবে বলে উল্লেখ করলাম না।

সেই দেশ চাঁদে চন্দ্রযান পাঠাচ্ছে, এবং পর পর তিন বার, এ তো এক বিস্ফোরক সংবাদ! নিজস্ব প্রচেষ্টায় ইসরো ২০১৩ সালে মঙ্গলগ্রহেও মঙ্গলযান পাঠাতে সক্ষম হয়। কিন্তু তা খুব একটা ফল প্রসব করেনি। মঙ্গলযানের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবু সেটা যে মঙ্গলের চার দিকে পরিক্রমা করেছিল, তা কিন্তু প্রমাণিত। আর তখন ভারত ছিল পৃথিবীর মাত্র চতুর্থ দেশ, যারা মঙ্গলে যান পাঠিয়েছিল।

আমরা জানি যে, ২০০৮ সালে চন্দ্রযান-১ এবং ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ চন্দ্রাভিযান করেছিল। দু’টিকেই আংশিক সফল বলা যায়। চন্দ্রযান-২ চাঁদে যে ল্যান্ডার বা যান্ত্রিক মডিউল বা ডাব্বাটি নামাতে চেষ্টা করেছিল, তার নাম ছিল বিক্রম। বিক্রম সারাভাইয়ের নামে। নামিয়েছিল বটে, তবে দুঃখের বিষয়, সেটি চাঁদের মাটিতে আছড়ে পড়ে অকেজো হয়ে যায়। এ বারও চন্দ্রযান চাঁদের মাটিতে নামিয়ে দিয়েছে অনুসন্ধানী যান্ত্রিক মডিউল বা ডাব্বা। এটিরও নামকরণ করা হয়েছে বিক্রম।

আর এটাই একটু, যাকে বলে, ‘ট্রিকি’। চন্দ্রযান থেকে দূর-নিয়ন্ত্রণে বিচ্ছিন্ন হয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে ধীর অবতরণ খুবই উন্নত প্রযুক্তিগত গবেষণার ব্যাপার। এর সাফল্য ভারতকে অবশ্যই নন্দিত করবে। বিশ্বব্যাপী স্তবগান না উঠুক, অন্তত এটা বুঝিয়ে দেবে, এ দেশটা হেলাফেলার নয়। কৃতিত্বের বিষয় এই যে, এই অভিযান ভারতের স্বাবলম্বী প্রচেষ্টার ফল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chandrayaan-3 India ISRO
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE