Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Air pollution

Air pollution: মহাদূষণের মানচিত্রে এ বার শিলিগুড়ি

পরিবেশকর্মীদের মতে, খাস কলকাতার বাইরেও যে বায়ু দূষণ রোধে কিছু করা উচিত তা কালীপুজোর রাত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

শিলিগুড়ির পাশাপাশি দূষণে উঠে এসেছে পশ্চিম বর্ধমানের দুই শহর, আসানসোল এবং দুর্গাপুরের নামও।

শিলিগুড়ির পাশাপাশি দূষণে উঠে এসেছে পশ্চিম বর্ধমানের দুই শহর, আসানসোল এবং দুর্গাপুরের নামও। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২১ ০৪:৩৪
Share: Save:

বায়ু দূষণের নিরিখে এত দিন কলকাতা এবং হাওড়া পরিবেশকর্মীদের মাথাব্যথার কারণ ছিল। এ বার সেই তালিকায় শিলিগুড়িও ঢুকতে চলেছে? কালীপুজোর রাতে শিলিগুড়ি শহরের দূষণ দেখে এমন আশঙ্কা করছেন অনেকে। ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-এর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার বি টি রোড এবং হাওড়ার ঘুসুরিতে বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার মাত্রা ছিল প্রতি ঘন মিটারে ৫০০ পিপিএম। শিলিগুড়িতে সেই মাত্রা ছিল প্রতি ঘন মিটারে ৪৯০ পিপিএম। তার ফলেই এই প্রশ্ন উঠেছে।

শিলিগুড়ি শহরে এই মাত্রার দূষণ দেখে পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসুর মন্তব্য, ‘‘মানুষ কতটা অসচেতন তা এই রিপোর্ট দেখার পরে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। শীতকালীন আবহাওয়ায় বাজির ধোঁয়া কুয়াশার সঙ্গে মিশে অনেক ক্ষণ স্থায়ী হয়। যা পরিবেশের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক।’’

প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গের সব থেকে বড় শহর শিলিগুড়ি। জনবসতিও যথেষ্ট ঘিঞ্জি। পরিবেশকর্মীদের মতে, খাস কলকাতার বাইরেও যে বায়ু দূষণ রোধে কিছু করা উচিত তা কালীপুজোর রাত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। শুক্রবার রাতে অবশ্য অনেকটাই কম ছিল ওই ধূলিকণার মাত্রা। সর্বোচ্চ পর্যায়ে তা ছিল প্রতি ঘন মিটারে ২৯৮ পিপিএম। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এই দূষণে মূল দায়ী বাজি। তাই খাস কলকাতার বাইরে নিষিদ্ধ বাজি রুখতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

কালীপুজোর রাতে কলকাতার যাদবপুর-সহ অন্যান্য এলাকাতেও ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার মাত্রা ৪০০ পিপিএম-এর উপরে ছিল। তা মারাত্মক খারাপ বলেই সূচকে উল্লেখ করা হয়েছে। শুক্রবার তার থেকে কিছুটা কমলেও রবীন্দ্র ভারতী, যাদবপুর, বালিগঞ্জ, বিধান নগরে বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার সর্বোচ্চ মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৩০০ পিপিএম-এর উপরে উঠেছিল। তবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার বক্তব্য, শুক্রবার বায়ু দূষণ সূচক (যা সামগ্রিক ভাবে বায়ুর গুণমানকে তুলে ধরে) তুলনায় ভাল ছিল। হেমন্ত এবং শীতকালে গভীর রাতে কম তাপমাত্রায় সূক্ষ্ম ধূলিকণা জমাট বাধে। সূর্য ওঠার পর থেকেই তা কমে যায়।

পর্ষদ সূত্রের খবর, বাজির দূষণ দেখার পর এ বার তারা এলাকাভিত্তিক সমীক্ষা করার পরিকল্পনা করেছে। তাতে এই দূষণের ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। তবে সমীক্ষাটি শুধু কলকাতায় হবে নাকি রাজ্য জুড়ে তা এখনও নিশ্চিত নয়।

শিলিগুড়ির পাশাপাশি দূষণে উঠে এসেছে পশ্চিম বর্ধমানের দুই শহর, আসানসোল এবং দুর্গাপুরের নামও। শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে বায়ুদূষণ সূচক ছিল, ১৪৯, যা ‘মধ্যমানের’। ওই সময়েই দুর্গাপুরের বাতাসের গুণমান ছিল, ২৭১, যা ‘খারাপ। তবে কালীপুজোর রাতে আসানসোল ও দুর্গাপুরে ওই সময়ে বাতাসের গুণমান ছিল যথাক্রমে, ২৪১ (‘খারাপ’) এবং ২৯৮ (‘খারাপ’)। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আসানসোল আঞ্চলিক শাখা জানিয়েছে, তাদের ‘কন্ট্রোল রুম’-এ আসানসোল থেকে বৃহস্পতিবার একটি অভিযোগ এসেছিল। হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় কালীপুজোর রাতে শব্দ ও বায়ুদূষণের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে খোদ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মন্তব্য করেছে। সেখানে বাতাসে প্রতি ঘন মিটারে ধূলিকণার সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ২২০ পিপিএম। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে খবর, বাঁকুড়ায় বুধ, বৃহস্পতিবার বাতাসের গুণমানের সূচক ছিল ১৬৫ ও ১৭৭, যা দূষণের সহনীয় মাত্রার মধ্যে পড়ে। কিন্তু শুক্রবার তা দাঁড়ায় ২০২, যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। হুগলিতে বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার রাতে বায়ু ও শব্দদূষণের মাত্রা কম ছিল। শুক্র ও শনিবার রাতে দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমানের কিছু জায়গায় বাজি ফেটেছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ গবেষক সন্তু ঘোষ বলেন, ‘‘পরিবেশ-বান্ধব বাজি কাঁঠালের আমসত্ত্ব। বাজি ফেটেছে, দূষণও হয়েছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE