চাকরি- প্রার্থীদের অবস্থানের ৬০০ দিনে বামফ্রন্টের মিছিল (বাঁ দিকে)। স্কুল সার্ভিস কমিশনের চাকরিপ্রার্থীদের ধর্নায় বিমান বসু। ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির নীচে শুক্রবার (ডানদিকে)। ছবি: নিজস্ব চিত্র, সুমন বল্লভ।
নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক-প্রার্থীদের অবস্থান ৬০০ দিন পার করল। সেই উপলক্ষে শুক্রবার দিনভর অবস্থান-স্থল সরগরম থাকল বিরোধী দলের নেতাদের আনাগোনায়। যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ফের জানিয়ে দিলেন তাঁরা। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য বলেছেন, বিরোধীরা আন্দোলনকারীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু ভুল কিছু হয়ে থাকলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই তা শুধরে নেওয়া হবে।
অবস্থানের ৬০০ দিন উপলক্ষে এ দিন বামফ্রন্টের মিছিল ছিল ধর্মতলা থেকে গান্ধী মূর্তি পর্যন্ত। মিছিলে ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, তপন হোড়, প্রবীর দেব, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়েরা অবস্থানকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবু বলেন, ‘‘টাকার বিনিময়ে চাকরি চুরি হয়েছে! চাকরি-প্রার্থীরা ৬০০ দিন ধরে এখানে বসে আছেন। তাঁদের প্রতি আমাদের সমর্থন আছে প্রথম থেকেই। কেন এত দিন ধরে নিয়োগ হচ্ছে না? অনেকের তো বয়স পেরিয়ে গেল।’’ কেলেঙ্কারির চক্রের দায় মুখ্যমন্ত্রীতেই নিতে হবে বলে দাবি করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম। তাঁর মন্তব্য, ‘‘দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা-মন্ত্রীরা খেলা-মেলায় আছেন। আর সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত।’’
তার আগে প্রদেশ কংগ্রেসের আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, প্রীতম ঘোষ, কৌস্তুভ বাগচী, প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সভাপতি আজ়হার মল্লিক, শাহিনা জাভেদদের নিয়ে একটি প্রতিনিধিদল অবস্থানকারীদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে গিয়েছিল। আর কত দিন রাস্তায় বসে থাকলে সরকারের টনক নড়বে, এই প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। দলের যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ-র নেতৃত্বে বিজেপির একটি দলও গিয়েছিল অবস্থান-স্থলে। অনড় আন্দোলনের জন্য অবস্থানকারীদের কাছে গিয়ে ফুল তুলে দিয়েছেন এসইউসি-র তরুণকান্তি নস্কর, ডিওয়াইও-র অঞ্জন মুখোপাধ্যায়েরা।
আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদল এ দিনই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বলেন, ‘‘কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষার চাকরি-প্রার্থীরা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। এ ছাড়া, অন্যান্য আন্দোলনকারীরাও দেখা করছেন। বিরোধীরা ওদের ভুল বোঝাচ্ছেন! তবে আন্দোলনকারীদের মনে রাখতে হবে, যদি কিছু ভুল হয়ে থাকে, তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই শোধরাবেন। মুখ্যমন্ত্রী তাদের পাশে আছেন।’’ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য বলেছেন, ‘‘আর আগে আন্দোলনকারীদের একটি দল ক্যামাক স্ট্রিটে (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে) দেখা করেছিলেন। সেখানেও শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, আশ্বাস দিয়েছিলেন। তার পরে কিছু হয়েছে? সমস্যার মীমাংসা হলে ভাল!’’
রাস্তায় বসে তাঁদের দিন কাটানোর যন্ত্রণাই এ দিন ধরা পড়েছে চাকরি-প্রার্থীদের কথায়। তাঁদের এক জন, বাপন পাত্রের প্রশ্ন, ‘‘চাকরির দাবিতে এত দিন ধরে বিক্ষোভ বিশ্বে আর অন্য কোথাও হয়েছে কি?’’ দু’বছরের শিশুকে নিয়ে ধর্না-মঞ্চে বসে মুর্শিদাবাদের নাসরিন বানু বলেন, ‘‘আমার ছেলে আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না। তাই ওকে নিয়েই নিয়মিত ধর্নায় আসছি।’’ রামপুরহাটের খুশি সাহা জানান, খবর পেয়েছেন তাঁর বাড়িতে ৮ বছরের ছেলের জ্বর হয়েছে। তবু ৬০০তম দিনে বিক্ষোভ-মঞ্চে থাকবেন বলে বাড়ি যাননি। অভিষেক সেনের কথায়, ‘‘কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষাতে মেধা তালিকায় থাকা সবাই নিয়োগপত্র পেলে আমরা পাব না কেন? নবম থেকে দ্বাদশের মেধা তালিকায় আছেন ৫৫৭৮ জন। সবাইকে নিয়োগপত্র দিতে হবে।’’ চাকরি-প্রার্থীরা জানিয়েছেন, আজ, শনিবার তাঁরা একজোট হয়ে মিছিল করবেন। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে এই শুরু হয়ে মিছিল যাওয়ার কথা ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে।
অবস্থানের ৬০০তম দিনে মঞ্চের পাশে গণনাট্য কর্মীরা পথ-নাটিকার মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতি এবং চাকরি-প্রার্থীদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন। চাকরি-প্রার্থীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy