Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Dengue

অন্তঃসত্ত্বার ঝুঁকি বেশি, চাই কড়া নজরদারি

তনুজা ছিলেন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পূর্ণিমা ন’মাসের। জ্বরের সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে দু’জনেরই। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হালতুর মেয়ে জেসমিতার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি এখন ‘কোমা’য়।

দেবদূত ঘোষঠাকুর
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৫০
Share: Save:

কারও জ্বর হওয়ার দিন পাঁচেকের মধ্যে পেটে শুরু হচ্ছে অসহ্য যন্ত্রণা।

আবার কারও কারও ক্ষেত্রে হঠাৎ হঠাৎ শুরু হয়ে যাচ্ছে খিঁচুনি।

কলকাতার পূর্ণিমা বিশ্বাস কিংবা হাবড়ার তনুজা বিবির পরিবার বুঝতেই পারেনি, কী ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে পড়েছেন তাদের অন্তঃসত্ত্বারা।

তনুজা ছিলেন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পূর্ণিমা ন’মাসের। জ্বরের সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে দু’জনেরই। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হালতুর মেয়ে জেসমিতার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি এখন ‘কোমা’য়।

চিকিৎসকেরা বলছেন, এ বার ডেঙ্গি ও সংক্রামক জ্বরে মহিলাদের মৃত্যুহার বেশি। শারীরবৃত্তীয় কারণে মহিলাদের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণুর প্রতিক্রিয়া খুবই তীব্র হচ্ছে। ঝুঁকিটা বেড়ে যাচ্ছে অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে।

কেন? পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী জানান, মহিলাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বেশি। অনেক ক্ষেত্রে সেই জন্যই ডেঙ্গির মতো সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। তবে অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াটি উল্টো। গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হুট করে নেমে যায়। তাই সর্দি-কাশি বা অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই অন্তঃসত্ত্বাদের কড়া নজরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

সতর্ক থাকুন

• ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় অন্তঃসত্ত্বাদের উপরে বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন।

• প্রয়োজনে মশারির ভিতরে রাখাই উচিত। পুরো গা-ঢাকা পোশাক পরিয়ে রাখা জরুরি।

• জ্বর হলে প্রথম দিনেই রক্ত পরীক্ষা করে উপসর্গ-ভিত্তিক চিকিৎসা শুরু করা উচিত।

• অন্তঃসত্ত্বাকালীন বেশ কিছু ওষুধ দেওয়া নিষিদ্ধ। সে-দিকে খেয়াল রাখা দরকার।

• জড়িবুটি বা টোটকা চিকিৎসায় ফল খারাপ হতে পারে।

• অন্তঃসত্ত্বার জ্বর হলে কোনও হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে লাগাতার নজরদারি চালানো দরকার।

মোদ্দা কথা, অন্তঃসত্ত্বা হোন বা না-হোন, মহিলাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গির মতো সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। অন্তঃসত্ত্বা হলে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার জন্য। আর অন্য অবস্থায় প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকার জন্য। এ যেন শাঁখের করাত!

অন্তঃসত্ত্বা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে তাঁর শরীর থেকে সেই ভাইরাস গর্ভস্থ সন্তানের মধ্যে চলে যায়। কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা, প্রসবের কিছু আগে মা সংক্রমিত হলে দেখা গিয়েছে, ভূমিষ্ঠ সন্তানও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার ছ’সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বার ডেঙ্গি হলে দেখা যাচ্ছে, মা মৃত সন্তান প্রসব করছেন। ওই সব ক্ষেত্রে দেখা যায়, মায়ের জ্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গর্ভস্থ শিশুর হৃদ্‌ঘাতের হার অত্যধিক বেড়ে গিয়েছে।

অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের বক্তব্য, অন্তঃসত্ত্বার জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তাঁদের কড়া নজরদারিতে রাখলে ঝুঁকি কমে যায়। এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ জানান, ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় লেক টাউনের পূজা কুমারীর জ্বর হওয়ার পরে পরেই তাঁকে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়ে নজরদারি চালানো হয়েছিল। প্রসব আসন্ন জেনে তাঁকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সুস্থ সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। কড়া নজরদারির ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।

অন্তঃসত্ত্বার শরীরে ইবোলা বা জাইকা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে গর্ভস্থ সন্তানের পঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি। ডেঙ্গির ক্ষেত্রে তেমন আশঙ্কা কতটা? অমিতাভবাবুর মন্তব্য, ডেঙ্গির ক্ষেত্রে তেমন আশঙ্কা খুব একটা নেই। তবে কোনও মহিলা গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের আগে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে তাঁর সন্তানের পঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Pregnant Surveillance Mosquitoes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE