মূর্তি গড়ায় ব্যস্ত। ছবি: কল্যাণ আচার্য
অভাবের সংসারে মূর্তি গড়ে পড়ার যাবতীয় খরচ জোগাড় করে চলেছে অনুমিতা হাজরা। বীরভূমের কীর্ণাহার পূর্বপাড়ার বাসিন্দা এই ছাত্রী এ বার এলাকারই তারাপদ মেমোরিয়াল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। ভাই ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ইতিমধ্যেই অনুমিতা তৈরি করে ফেলেছে দশটি সরস্বতী প্রতিমা।
মূর্তি গড়া অনুমিতাদের পারিবারিক পেশা। বাবা সমরেশ এবং কাকা দেবনাথ হাজরাও মূর্তি গড়েন। গড়ে মাসিক আয় মেরেকেটে দশ হাজার টাকা। তার উপরে গত দু’বছরে করোনার বিধিনিষেধে বাজারে মন্দা চলছে। অথচ, মূর্তি গড়ার আয়ের উপরে নির্ভর করে কার্যত জোড়াতালি দিয়ে চলে আট সদস্যের সংসার-সহ পড়াশোনা। এই অবস্থায় বাবা-কাকাদের আয়ে সব দিক সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না বলে অনুমিতা নিজের পড়াশোনা খরচ জোগাড় করতে মূর্তি গড়ে চলেছে। বছর তিনেক ধরে নিজে হাতে মূর্তি গড়ছে। মূলত সরস্বতীর মূর্তি তৈরি করে। তবে কাপড় পড়ানো এবং চক্ষুদান করতে বাবা কিংবা কাকার সাহায্য নিতে হয়। এ বছর দশটি প্রতিমা নিজে তৈরি করেছে অনুমিতা। গড়ে ৫০০/ ১০০০ টাকা দাম ধরা হয়েছে। স্থানীয় দু’টি ক্লাব এবং পাড়ার পুজোয় তার তৈরি ঠাকুরেরই পুজো হবে। এ ছাড়াও দু’টি মূর্তি নিয়ে গিয়েছে কীর্ণাহার লাগোয়া দু’টি গ্রামে।
এই স্কুলছাত্রীর বাবা সমরেশবাবু জানিয়েছেন, মূর্তি গড়ে শুধু নিজের পড়ার খরচ নয়, সংসারের টুকটাক প্রয়োজনও মেটায়। অনুমিতার কথায়, ‘‘পড়াশোনা বজায় রাখতে কাজ চালিয়ে যেতে চাই। ভাইয়ের পড়াশোনাতেও তা হলে কিছুটা সুরাহা হবে।’’ আজ, সরস্বতী পুজোর দিন সকালেও ঠাকুর বিক্রি করে পুষ্পাঞ্জলি দিতে যাবে অনুমিতা। অনুমিতার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শুভশ্রী মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘স্কুলের ছাত্রী এমন মূর্তি গড়ে, আমাদের জানা ছিল না। তাই আগেই অন্যত্র মূর্তির বরাত দেওয়া হয়েছিল। নিজের পড়াশোনা চালাতে মেয়েটির লড়াকু মনোভাব অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে। আমরা ওর পাশে আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy