Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Coal Smuggling

অভিযানের আঁচ কয়লার দামেও, প্রভাব ইটভাটায়

পূর্ব বর্ধমানের বহু ইটভাটায় পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, কুলটি থেকে কয়লা আসে।

পূর্ব বর্ধমানের কালনার একটি ইটভাটায়।

পূর্ব বর্ধমানের কালনার একটি ইটভাটায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২১ ০৭:৫১
Share: Save:

কয়লার আগুনে পুড়ে রাঙা হয় ইট। কিন্তু কয়লা পাচার নিয়ে সিবিআই অভিযানের জেরে আপাতত ঢিমে ইটভাটার আগুন, দাবি ব্যবসায়ীদের।

সিবিআই অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন কয়লা কারবারের ‘চাঁই’রা। ফলে, ‘অবৈধ’ কয়লা সরবরাহের পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে ‘জটিলতা’। ইটভাটা ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, কয়লা আগের মতো দামে না পাওয়ায় বেড়ে গিয়েছে তাঁদের উৎপাদন খরচ।

পূর্ব বর্ধমানের বহু ইটভাটায় পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, কুলটি থেকে কয়লা আসে। ইটভাটা কারবারিদের দাবি, এক লক্ষ ইট তৈরি করতে ২০-২২ টন ভাল মানের কয়লা লাগে। ‘হার্ড’ কয়লা (পাথর মেশানো) হলে প্রয়োজন হয় আর একটু বেশি। খোলা বাজারে ইসিএলের কয়লার দর প্রতি টন ৮-৯ হাজার টাকা। সেখানে ‘অবৈধ’ কয়লা মেলে হাজার পাঁচেক টাকায়। এত দিন বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই সেই কয়লা কিনে কাজ চালাতেন। কিন্তু এখন তার দামও তিন-সাড়ে তিন হাজার টাকা বেড়ে গিয়েছে। ফলে, বহু ব্যবসায়ী বৈধ কয়লা কেনার দিকে ঝুঁকছেন।

‘অবৈধ’ কয়লার দাম বাড়ছে কেন? কারবারিদের দাবি, খনি অঞ্চলে ‘অবৈধ’ কয়লা উঠছে না, এমনটা বলা যাবে না। তবে সেই কয়লা পরিবহণের ‘শৃঙ্খলে’ বিঘ্ন ঘটেছে বলে অভিযোগ। ইটভাটা ব্যবসায়ীদের অনেকের দাবি, কয়লা সরবরাহের ব্যবস্থার জন্য প্রতি জেলায় কয়লা কারবারের ‘চাঁই’দের এজেন্ট রয়েছে। ট্রাকে ১৪ টন পর্যন্ত কয়লা পরিবহণের অনুমতি থাকলেও এত দিন প্রায় ৩০ টন কয়লা আনা হত। খনি এলাকা থেকে কয়লা আনতে রাস্তায় সহায়ক ছিল ‘প্যাড’ (নির্দিষ্ট টাকায় কেনা রশিদ, যা দেখালে অবৈধ কয়লা বা বালি পরিবহণে ঝঞ্ঝাট পোহাতে হয় না)। কিন্তু সিবিআই অভিযানের ফলে কারবারের চাঁইরা ‘বেপাত্তা’ হয়ে যাওয়ায় সেই ‘ব্যবস্থা’ এখন আর মসৃণ ভাবে কাজ করছে না বলে দাবি।

কয়লা পরিবহণে জড়িতদের অনেকের দাবি, নিচুতলার পুলিশকর্মীদের যে অংশ আগে ‘প্যাড’ দেখে ছাড় দিত, এখন তা দিচ্ছেন না। ছাড় পাচ্ছে না বাড়তি বোঝাই করা কয়লাও। ফলে, পরিবহণ খরচ বেড়েছে। এক ট্রাক চালকের দাবি, ‘‘আগে ৬০০০ টাকার প্যাড কিনলে নিশ্চিন্তে কলকাতা পর্যন্ত যাতায়াত করা যেত। সেই প্যাড এখন রাস্তায় বিশেষ গ্রাহ্য হচ্ছে না। ওভারলোডিং-ও ছাড় পাচ্ছে না। তাতে প্রায় তিন গুণ খরচ বেড়েছে।’’ কয়লার দামে এরই প্রভাব পড়ছে বলে অভিযোগ।

ইটভাটা মালিকদের দাবি, অতিমারির কারণে গত বছর দীর্ঘ সময় ব্যবসা বন্ধ ছিল। এ বছর ব্যবসা শুরুর মুখেই কয়লার দাম বাড়তে থাকায় খরচ বেড়েছে। নির্মাণ ব্যবসায়ীদের দাবি, এর জেরে যে ইট ১২-১৩ টাকায় মিলত, তার দাম এক-দেড় টাকা বেড়েছে। যদিও ‘বেঙ্গল ব্রিক ফিল্ড অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্যের এক কর্তার দাবি, ‘‘রাজ্যে সাড়ে সাত হাজার ইটভাটা আছে। কয়লার দাম বাড়লেও ইটের দাম সে ভাবে বাড়েনি।’’

দুই বর্ধমানের পুলিশকর্তাদের দাবি, বেআইনি কয়লা পরিবহণে কোনও ছাড় দেওয়া হয় না। আগের মতোই এখনও নিয়মিত অভিযান চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

brick kiln Coal Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE