Advertisement
১৬ মে ২০২৪

সন্ত্রাসের জবাব দিয়েও ভয়ে থমকে তাহেরপুর

ছাপ্পা মেরে, সাংবাদিক পিটিয়ে তাহেরপুর দখলে রাখতে চেয়েছিল তৃণমূল। পেরে উঠল না। ভোটের বিকেলে যে ওয়ার্ডে ছাপ্পা মারা দেখতে গিয়ে এই প্রতিবেদক ও সহকর্মী আলোকচিত্রী তৃণমূলের গুন্ডাদের হাতে মার খেয়েছিলেন, সেখানেও তারা হেরে গিয়েছে। গত বার নদিয়ার ওই পুরসভায় বামফ্রন্টের সমান আসন পেয়েও এক বিক্ষুব্ধ সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে বোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। কিন্তু পাঁচ বছরে যে উন্নয়নের নমুনা তারা দেখিয়েছে, তাতে সাদা পথে ফের জিতে আসার সম্ভাবনা যে প্রায় নেই, তৃণমূল নেতারা তা ভালই জানতেন।

জয়ের পরে সিপিএমের উল্লাস তাহেরপুরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

জয়ের পরে সিপিএমের উল্লাস তাহেরপুরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

সুস্মিত হালদার
তাহেরপুর শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৫৫
Share: Save:

ছাপ্পা মেরে, সাংবাদিক পিটিয়ে তাহেরপুর দখলে রাখতে চেয়েছিল তৃণমূল। পেরে উঠল না।

ভোটের বিকেলে যে ওয়ার্ডে ছাপ্পা মারা দেখতে গিয়ে এই প্রতিবেদক ও সহকর্মী আলোকচিত্রী তৃণমূলের গুন্ডাদের হাতে মার খেয়েছিলেন, সেখানেও তারা হেরে গিয়েছে।

গত বার নদিয়ার ওই পুরসভায় বামফ্রন্টের সমান আসন পেয়েও এক বিক্ষুব্ধ সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে বোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। কিন্তু পাঁচ বছরে যে উন্নয়নের নমুনা তারা দেখিয়েছে, তাতে সাদা পথে ফের জিতে আসার সম্ভাবনা যে প্রায় নেই, তৃণমূল নেতারা তা ভালই জানতেন।

আর, সেই কারণেই গোড়া থেকে বিরোধী ভোটারদের ভয় দেখানো, ভোটের দিন বুথের সামনে ভিড় করে মুড়ি-মুড়কির মতো ছাপ্পা দেওয়ার চেষ্টা— কিছুই বাদ দেয়নি তৃণমূল। আগের রাতেই পাশের হাঁসখালি ও ফুলিয়া থেকে প্রচুর দুষ্কৃতী জমায়েত করা হয়েছিল। শনিবার, ভোটের দিন সকাল থেকে পুলিশকে কার্যত ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ করে রেখে বিভিন্ন এলাকায় বুথ জ্যাম করা শুরু হয়।

নদিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য মচকানোর পাত্র নন। বরং তাঁর দাবি, ‘‘ভোটের ফলই বলে দিচ্ছে তাহেরপুরে কোনও সন্ত্রাস হয়নি। ও সব সংবাদমাধ্যমের অপপ্রচার ছিল মাত্র।’’

তাহেরপুরে ভোটে দলের দায়িত্বে ছিলেন গৌরীবাবুরই স্নেহধন্য, সদ্য কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপ-নির্বাচনে জিতে আসা সত্যজিৎ বিশ্বাস। ওই জয়ের পরে তাঁকে যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতিও করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর কার্যকারিতা কতটা, হারের পরে দলের অন্দরেই তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিগত পুরবোর্ড কেন ঠিকঠাক কাজ করে উঠতে পারেনি, শহরবাসীকে তার সন্তোষজনক জবাব দেওয়া হয়নি। উল্টে পুরপ্রধানের পদ নিয়ে দলীয় কোন্দল ভোটের কাজে প্রভাব ফেলেছে।

এই সব ফুটোফাটা মেরামত না করে বাইরে থেকে লোক এনে সন্ত্রাস করার চেষ্টা মোটেই ঠিক হয়নি বলে তৃণমূলের অনেক নেতাই এখন ঠারেঠোরে বলছেন। তাঁদের ধারণা, এতে আসলে ব্যুমেরাং হয়েছে, মানুষ খেপে গিয়ে সিপিএমকে আরও ঢেলে ভোট দিয়েছে। যদিও সত্যজিৎবাবু এ সবে আমল দিতে রাজি নন। তাঁর দাবি, ‘‘বাইরে থেকে লোক নিয়ে এলে আমরা হারতাম না। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই এই হার।’’

কিন্তু ভয় যে এখনও তাহেরপুরে চেপে বসে আছে, মঙ্গলবার বিকেলে এলাকায় পা রেখেই তা মালুম হয়ে যায়। পাড়ার ভিতরে-ভিতরে লাল আবির বা লালঝান্ডার কিছু উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও বড় কোনও আয়োজন নেই। বরং শাসকদলের লোকজন এই হার কী ভাবে নেয়, ভোটে না পেরে মারধরের রাস্তায় যায় কি না, তা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

ভোটের বিকেলে যে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে এই প্রতিবেদককে ঘিরে ধরে মারধর করা হয়েছিল, সে দিকে পা বাড়াতেই বাধা দেন সিপিএমের কিছু সমর্থক। নিচু গলায় বলেন, ‘‘দাদা, ওখানে যাবেন না। আপনাকে ওরা চিনে রেখেছে।’’ দলের জেলা কমিটির সদস্য সুপ্রতীপ রায় বলেন, ‘‘ওই সব এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছি।’’

মার খেয়ে ফেরার পরে, শনিবার বিকেলে গৌরীবাবু ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন, খুব লেগেছে কি না। ডাক্তার দেখানোর পরামর্শও দেন। তাহেরপুরের ফল বেরনোর পরে প্রশ্নটা তাই মুখে এসেই গিয়েছিল— ‘‘এই বিপর্যয়ে আপনার খুব আঘাত লাগেনি তো গৌরীবাবু?’’

শুনে মুহূর্তের জন্য থমকে যান প্রৌঢ় নেতা। তার পরেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে ওঠেন, ‘‘গোটা রাজ্যের ফলাফলে আপনারা (আনন্দবাজার) যদি আঘাত পেয়ে থাকেন, তা হলে তাহেরপুরের ফলে আমিও পেয়েছি।’’

আজ, বুধবারই জেলায় আসছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হারের পরে এমন লাগসই জবাব শুনে তিনি খুশি হবেন নিশ্চয়ই?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE