তাপমাত্রার গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছে আবহাওয়া দফতরের বাঁকুড়ার কেন্দ্রে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টাতেই তাপমাত্রা চড়ে গিয়েছিল ৪৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বেলা গড়াতেই পারদ ওঠে আরও কয়েক কদম। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
এমনটা যে হতে পারে আগেই সে পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। সেটাই হল। শনিবারের বারবেলায় মরসুমের উষ্ণতম দিনে পৌঁছে গেল বাঁকুড়া।
তাপমাত্রা পৌঁছে গেল ৪৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, স্বাভাবিকের থেকে ৮ ডিগ্রি বেশি। যা রীতিমতো উদ্বেগে ফেলে দিয়েছেন বাসিন্দাদের। প্রশাসনকেও ফেলে দিয়েছে চিন্তায়।
আবহাওয়া দফতরের নথি বলছে, গত বছর পর্যন্ত এপ্রিল মাসে বাঁকুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৭৩ সালের ১৫ এপ্রিল সর্বকালীন রেকর্ড তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৫.২ ডিগ্রি। এ বছর এপ্রিলের গোড়াতেই ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল বাঁকুড়া। গত কয়েক দিন ধরে ৪৬ ডিগ্রির কোঠায় ঘোরাফেরা করছিল। দশমিকের ভগ্নাংশের হিসেবে এ দিন নতুন রেকর্ড গড়েছে সে।
আবহবিদেরা বলছেন, বাঁকুড়া এমনিতেই চরম আবহাওয়ার এলাকা। এপ্রিলে ৪০ ডিগ্রির কোঠা পেরনো তার কাছে এমন কিছু নয়। কিন্তু এ বছর সেই ধাপ বহু আগেই পেরিয়ে এসেছে। বরং ৪০-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস যেন এখন তার নরম মেজাজ বলেই মনে করা হচ্ছে।
এ বার এমন গরম চলছে কেন?
আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, ফি বছর বাঁকুড়ায় গরম পড়লেও তাতে রাশ টানে কালবৈশাখী। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে হাওয়া গরম হয়ে উঠলে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জোলো হাওয়া সেখানে ছুটে যায়। ঠান্ডা ও গরম হাওয়ার মিলনে তৈরি হয় বজ্রগর্ভ উল্লম্ব মেঘ। তা থেকে হওয়া ঝড়বৃষ্টিতে তাপমাত্রায় সাময়িক লাগাম পড়ে। এমন লাগামছাড়া হতে পারে না গরম।
এ বছর জোলো হাওয়ার জোগানদার (বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয়) বাংলা উপকূলে নেই। ফলে পশ্চিমাঞ্চলের হাওয়া গরম হলেও পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প মিলছে না। তাই কালবৈশাখীর মেঘ তৈরি হচ্ছে না। উল্টে ছুটে আসছে ঝাড়খণ্ডের গরম হাওয়া। ফলে বাঁকুড়ার তাপমাত্রায় লাগাম পড়ছে না। সম্প্রতি বাঁকুড়ায় একটি কালবৈশাখী মিলেছিল।
সেই মেঘের জোগানদার ছিল ওড়িশার ঘূর্ণাবর্ত থেকে থেকে বয়ে আসা জোলো হাওয়া। সেই ঘূর্ণাবর্ত দুর্বল হতেই কালবৈশাখীর রেশও মিলিয়ে গিয়েছে।
হাওয়া অফিসের আবহবিদদের একাংশ বলছেন, বাঁকুড়ায় তাপপ্রবাহ বন্ধ হওয়ার এখনই কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা ৪৫-৪৬ ডিগ্রির আশপাশে থাকতে পারে।
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দিনভর এ দিন গরম বাতাসের দাপটে ঘরের মধ্যে পাখার তলায় থেকেও স্বস্তি পাননি। বিকেলে বাতাস নরম হবে বলে যাঁরা ভেবেছিলেন, সন্ধ্যায় তাঁরা দেখেন বাতাস তখনও তেতে। এই অবস্থায় জেলাবাসীকে কী ভাবে সুস্থ রাখা যাবে, তা নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়েছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরকে সজাগ হতে বলা হয়েছে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, স্বাস্থ্য দফতরের ভাণ্ডারে যথেষ্ট পরিমাণে ওআরএস মজুত রয়েছে। এ ছাড়া গরমে ডায়েরিয়া ছড়ানোরও ভয় রয়েছে। তাই শহর থেকে প্রতিটি গ্রামের পানীয় জলের উৎস পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। জীবাণু সংক্রমণ হলেই যাতে দ্রুত ওই টিউবওয়েল মেরামত করা হয়, তাও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে দেখতে বলা হয়েছে।’’
ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ইদগা মহল্লায় ডায়েরিয়া ছড়িয়েছিল। সেখানে স্বাস্থ্য দফতর একটি নলকূপের জলে জীবাণুর অস্তিত খুঁজে পায়। স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, ওই মহল্লার পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে খবর মিলেছে, প্রবল গরমের জেরে পেটের রোগে অসুস্থ হয়ে অনেকেই চিকিৎসা করাতে আসছেন।
বাঁকুড়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, ‘‘আমরা লিফলেট ছড়িয়ে গরমে কেমন জীবনযাত্রা হওয়া উচিত, তা নিয়ে বাসিন্দাদের সচেতন করছি। আশাকর্মীরাও বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মানুষকে সজাগ করছেন।’’ তিনি জানান, জেলার প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, গরমে কোথাও কেই অসুস্থ হয়েছে বলে খবর এলেই সেখানে যেন স্বাস্থ্যকর্মীরা দ্রুত ওআরএস পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
ইতিমধ্যেই জেলার আদালতগুলি সকাল বেলায় এজলাস বসছে। সরকারি স্কুলগুলিও বন্ধ। তবে বেসরকারি স্কুলগুলি অধিকাংশই সকালে শুরু হলেও ছুটি হতে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। অনেকে অভিভাবকেরই দাবি, এই পরিস্থিতিতে সরকারি স্কুলগুলির মতোই বেসরকারি স্কুলগুলিও কিছুদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy