মা: মেয়ের ছবি হাতে স্বপ্নার মা বাসনা বর্মণ। নিজস্ব চিত্র
উৎসব চলছেই। কখনও বাড়ির সামনে তাসা বাজছে, কখনও বা হুটার। যে গ্রামের রাস্তায় দু’জন পাশাপাশি হাঁটার জায়গাও নেই, সেখানে লাল-নীল বাতি লাগানো গাড়ির ঘনঘন আসছে। শুধু ভিআইপিরাই নয়, জলপাইগুড়ি শিলিগুড়ি থেকে ক্রীড়াপ্রেমী এমনকি সাধারণ বাসিন্দারাও স্বপ্নার বাড়িতে এসে সোনা জয়ের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
পাতকাটার রাস্তা থেকে গলিতে ঢুকে যেতে হয় স্বপ্নাদের বাড়ি। গলির মুখে থাকা চায়ের দোকানের আড্ডায় জমাট ভিড়। অপরিচিত কাউকে দেখলেই ভিড় থেকে প্রশ্ন আসছে, “স্বপ্নার বাড়ি যাবেন তো? ওই ডান দিকে ঘুরে যান।” জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া পাতকাটা গ্রামে পা রেখেই বৃহস্পতিবার ঘনঘন মালুম হচ্ছে, এ হল স্বপ্নার গ্রাম। যেখানে বুধবার রাত থেকে উৎসব শুরু হয়েছে।
গতকাল সোনা পাওয়ার পরে রাতটা ঘোষপাড়ায় স্বপ্নাদের বাড়িতে উৎসবে কেটেছে। সকাল হতেই একের পর এক অনেকে এসে স্বপ্নার মা এবং বাবাকে সংবর্ধনা জানিয়ে যান। সকাল থেকেই বাড়িতে ছিল সাজো সাজো রব। বাড়ির উঠোনে টেবিল পেতে চেয়ার রাখা হয়েছিল।
সকাল দশটা বেজে ২৫ মিনিটে প্রথম আসেন উত্তরবঙ্গ পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি ফুলের তোড়া এবং মিষ্টির বাক্স স্বপ্নার মা বাসনা বর্মণের হাতে তুলে দেন। স্বপ্না আগেই বঙ্গরত্ন পেয়েছিল সেকথা তিনি উল্লেখ করেন। বাড়ির খোঁজখবর করেন। স্বপ্না কবে আসবেন তা জানতে চান। বাসনাদেবী তাঁকে জানান, বুধবার রাত বারোটার সময় তাঁর সঙ্গে স্বপ্নার কধা হয়েছে। স্বপ্না ৩ তারিখে কলকাতায় ফিরবে। তিনি গৌতমদেবকে জানান তার স্বামী অসুস্থ। তিনি চা পাতা তোলার কাজ করে স্বপ্নাদের মানুষ করেছেন।
ইতিমধ্যে পর্যটন মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বাসনাদেবী মুখ্যমন্ত্রীকে নমস্কার করে কথা শুরু করেন। তিনি স্বপ্না কবে আসবেন, তা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান। তাঁর স্বামী এবং পরিবারের অবস্থা সম্বন্ধে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কাছে খোঁজখবর করেন।
বাসনাদেবী জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, তিনি পরে যোগাযোগ করবেন। বাসনাদেবী বলেন, ‘‘আমি তাঁর কাছে কিছু চাইব না। বাকিটা রাজ্য সরকারের বিষয়।’’ গৌতম দেব বলেন, “এটা খুবই গর্বের বিষয় যে এরকম একটা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে স্বপ্নার মতো মেয়ে সাফল্য পেয়েছে। ও আরও দূরে যাবে।”
বেলা ১২ টার সময় যান শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী। তিনিও বাসনাদেবীর হাতে ফুলের তোড়া দেন। তিনি বলেন, ‘‘তিন দিন ধরে জলপাইগুড়ি জেলা স্বপ্নার সাফল্যের জন্য উৎসব চলবে। উদ্যোগ নেবে জেলা প্রশাসন এবং আমরা সকলে। আমি জেলাশাসকের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলব। স্বপ্না এলে সংবর্ধনার আয়জন করা হবে।”
এ দিন পাতকাটা এলাকা থেকে এক বিরাট বাইক মিছিল বার হয়। স্বপ্নার স্কুল কালিয়াগঞ্জ উত্তমেশ্বর হাইস্কুলের শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীরা ব্যান্ডপার্টি নিয়ে বিরাট মিছিল করে স্বপ্নাদের বাড়িতে আসে। এ ছাড়া জেলাপরিষদের সভাধিপতি থেকে এলাকার গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য সকলেই স্বপ্নাদের বাড়িতে এসে তার বাবা এবং মাকে সংবর্ধনা জানিয়ে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy