আর কেউ ভেসে উঠল? অপেক্ষায় লোকজন। নিজস্ব চিত্র
ওঁরা ছুটছেন। ছুটেই চলেছেন। কখনও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মর্গে, কখনও বা বালির ঘাট সেতুর এ দিকে ও দিকে। সোমবার যেখানে যাত্রী বোঝাই বাস তলিয়ে গিয়েছিল ভাণ্ডারদহ বিলে, তার আশপাশের পানা-দল পর্যন্ত খুঁজতে বাকি রাখেননি তাঁরা। কিন্তু, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যখন উদ্ধার কাজে এ দিনের মতো ইতি পড়ল, তখনও পর্যন্ত মিলল না তাঁর কোনও খোঁজ। তিনি ঋষিকেশ শর্মা । সোমবার ওই অভিশপ্ত বাসের যাত্রী ছিলেন।
বছর বাইশের ঋষিকেশ জলঙ্গির হোগলারদাঁড় এলাকার বাসিন্দা। ছোট বেলা থেকেই আঁকার হাত ভাল ঋষিকেশের। বিভিন্ন রকম হাতের কাজ এবং ছবি আঁকাকেই পেশা করে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। কাজের সূত্রে তাঁকে আসতে হত বহরমপুরে। সোমবার সকালেও সেই কাজেই তিনি আসছিলেন বহরমপুর। উঠেছিলেন সেই অভিশপ্ত বাসে।
ঋষিকেশের পিসতুতো দাদা চন্দন শর্মা-সহ আরও চার জন মঙ্গলবার দিনভর কখনও বহরমপুর মেডিক্যালের মর্গে, কখনও বা বালিঘাটে বিলপাড়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এই বুঝি ভাইয়ের খোঁজ এল। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাইয়ের খোঁজ না পেয়ে চন্দনরা বাড়ি ফেরেন। চন্দন বলছেন, ‘‘খুব চিন্তায় রয়েছি। কিছুই ভাল লাগছে না। ভাইটার যে কী হল কিছুই বুঝতে পারছি না। উৎকণ্ঠায় বাড়ির কেউ দু’চোখের পাতা এক করতে পারছে না। সোমবার হন্যে হয়ে ভাই ডোমকলের হরিশঙ্করপুর স্কুলের শিক্ষক গোলাম মোস্তফার খোঁজে দৌলতাবাদ-মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ছোটাছুটি করেছেন দাদা মেহেবুব রেজা। মঙ্গলবার সকালে গোলাম মোস্তফার দেহ উদ্ধার হতে মেডিক্যালের মর্গে তাঁর দেহ শনাক্ত করেন। আবার ইসলামপুরের বালুমাটির বাসিন্দা বহরমপুরের ট্রাফিক ওয়ার্ডেন রাফিকুল ইসলাম (৩৩) নিখোজ ছিলেন। এ দিন মর্গের সামনে মাইকে তাঁর মৃত্যুর কথা বলতেই ডুকরে কেদে ওঠেন ভাই আব্দুর রফিক। সোমবার দিনভর ঋষিকেশের পরিবারে কেউ থাকলেন বিলের পাড়ে, কেউ বা টানা পড়ে রইলেন হাসপাতালের মর্গে। হাসপাতালে কোনও দেহ এলে ছুটে গিয়েছেন তাঁরা। আবার, বিল থেকে কোনও দেহ উঠলে ছুটে গিয়ে দেখেছেন চন্দন। উৎকণ্ঠা ছিলই। তবু ভায়ের দেহ না দেখতে পেয়ে হয়তো নতুন আশাতে বুক বাঁধলেন তাঁরা। যদি কোনওভাবে সে ফিরে আসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy