শক্তিনগর জেলা হসপিটালে রোগীর মৃত্যুর পর বিক্ষোভ। ছবিটি রোগীর দিদি ও বোনের। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।
কিছু ক্ষণ আগে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু দিদির মৃত্যু মানতে পারছিলেন না বছর একুশের শিউলি সরকার। নদিয়ার শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও সময়ে চিকিৎসা পাননি দিদি পূজা— এই আক্ষেপই কুরে খাচ্ছিল তাঁকে।
কিন্তু একা মা-মেয়ে তাঁরা কী করবেন! লোকবল নেই, কী ভাবে তাঁদের আর্তি পৌঁছবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে? মরিয়া হয়েই নিজের হাত কেটে রক্ত দিয়ে পোস্টার লিখে জবাব চেয়ে হাসপাতালে ঘুরেছেন শিউলি। যা দেখে চমকে গিয়েছেন অন্য রোগীর পরিজন থেকে শুরু করে হাসপাতালের লোকজন।
পূজার মায়ের অভিযোগ, শনিবার দুপুরে মেয়েকে ভর্তি করা হলেও রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ডাক্তার দেখেননি। রবিবার সকালে দু’টি ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরে মেয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং মারা যায় বলে তাঁর দাবি। এর পরেই রক্ত দিয়ে পোস্টার লেখেন শিউলি। দিদির মৃত্যুতে সরাসরি ‘ভুল চিকিৎসা’র অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এমন অভিনব প্রতিবাদ এ রাজ্যে কার্যত বিরল।
কেন এই রাস্তা বেছে নিলেন?
সোমবার শিউলি বলেন, ‘‘প্রতিবাদে ফেটে পড়তে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু শুধু কাগজে-কলমে অভিযোগ করলে আদৌ কি সুরাহা হবে! মনে হচ্ছিল, গোটা ব্যবস্থাটাকেই নাড়া দেওয়া জরুরি। হঠাৎই মাথায় ভাবনাটা আসে।” এক ছুটে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে দোকান থেকে সাদা কাগজ আর ব্লেড কিনে আনেন। সেই ব্লেড দিয়ে চেটো কেটে রক্ত দিয়ে বড় বড় করে লেখেন— ‘আমার দিদিকে মেরেছে ডাক্তার’।
মনোবিদ মোহিত রণদীপের মতে, ‘‘মানুষ যখন খুব অসহায় বোধ করে, যখন ধরে নেয় যে তার আর্তি কেউ শুনছে না, তখনই সে এ রকম মরিয়া হয়ে যেতে পারে। যে কোনও রক্তপাতই মানুষকে ধাক্কা দেয়। তাই রক্ত দিয়ে লিখলে চারপাশটাকে ধাক্কা দেওয়া যাবে, এই আশাতেই সম্ভবত ওই তরুণী এই পথ বেছে নিয়েছেন।”
ধাক্কাটা ঠিক জায়গায় গিয়ে লেগেছে কি?
শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল সূত্রের খবর, এই নিয়ে হইচই শুরু হয়ে যাওয়ার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি তৈরি করেছেন। সোমবার হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত সরকার বলেন, ‘‘অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত করা হচ্ছে। সেই মতো পদক্ষেপও করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy