নবান্ন। — ফাইল চিত্র।
একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকতে শুরু করেছে। এ বারে ভোটের আগে এই নিয়ে প্রচারে নামছে রাজ্য। প্রশাসন সূত্রে খবর, কেন্দ্রের না দেওয়া টাকা যে তৃণমূলের সরকারই মিটিয়ে দিল, এই মর্মে প্রচার করা হবে। সে জন্য রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সব জেলা মিলিয়ে প্রায় ৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ করার ক্ষেত্রে দুর্নীতির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম অভিযোগ ছিল, এই কাজ যেখানে হচ্ছে, সেখানে কেন্দ্রের নামে হোর্ডিং লাগাচ্ছে না রাজ্য। দিল্লির চাপে একটা সময়ে রাজ্যের কয়েকটি এলাকায় এমন হোর্ডিং লাগানোও শুরু হয়। এখন যে হেতু রাজ্যই তাদের তহবিল থেকে টাকা দিচ্ছে, তাই সে কথা ফলাও করে প্রচারে হোর্ডিং লাগানো শুরু করতে চায়। এর ফলে কি কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির উপরে রাজনৈতিক চাপ বাড়বে না?
মুখে স্বীকার না করলেও দলের একাংশের মত, বাড়বে। এমনিতেই বকেয়া নিয়ে তৃণমূলের লাগাতার আন্দোলনের দলের উপরে চাপ তৈরি হয়েছে। এ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষ্ণনগরের জনসভা থেকেও বিষয়টির উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘এই রাজ্যে মনরেগা (একশো দিনের কাজের প্রকল্পে) ২৫ লক্ষ ভুয়ো জব কার্ড তৈরি করা হয়েছে। যে জন্মায়নি, তারও কার্ড তৈরি করেছে। যে পয়সা গ্রামের গরিব মজদুরের পাওয়ার কথা ছিল সেটা তৃণমূলের তোলাবাজেরা লুট করেছে।’’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, গ্রামের ভোটে বঞ্চনার অভিযোগে যে চাপ বাড়ছে, সেটা প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই বোঝা যাচ্ছে। তাই বাকি বিজেপি নেতাদের মতো তিনি এই নিয়ে কার্যত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যে দিন প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলছেন, সে দিনই জানা গেল, বকেয়া দেওয়া নিয়ে প্রচারে প্রায় ৭৪ কোটি টাকা খরচ বরাদ্দ করেছে
রাজ্য সরকার।
সূত্রের খবর, এর মধ্যেই শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা-চিঠি বিলি হয়েছে। প্রতিটি গ্রাম সংসদে দেওয়া হয়েছে ফ্লেক্স। পঞ্চায়েত ভিত্তিক জনসচেতনতা সভা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনকে। এ সব কাজের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত প্রতি ২ লক্ষ টাকা, ব্লকে দেড় লক্ষ টাকা করে এবং প্রতি মহকুমায় ৩ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭৩ কোটি ৯৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
ইতিমধ্যে জলপাইগুড়ি পেয়েছে ১.৮২ কোটি, ঝাড়গ্রাম ১.৭৩ কোটি, মালদহ ৩.২০ কোটি, মুর্শিদাবাদ ৫.৫৪ কোটি, নদিয়া ৪.০৯ কোটি, উত্তর ২৪ পরগনা ৪.৪৩ কোটি টাকা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সবস্তর মিলিয়ে মোট ৪ কোটি ৯৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পেয়েছে। জেলাশাসক তানভির আফজল মানছেন, ‘‘রাজ্য সরকারের তরফে নির্ধারিত টাকা জেলা প্রশাসন পেয়েছে। শীঘ্রই ব্লক এবং মহকুমাকে সেই টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’
নন্দীগ্রামের নেতা তথা বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক মেঘনাদ পালের কটাক্ষ, ‘‘জনগণের টাকায় তৃণমূল দলীয় প্রচার করছে। এর থেকে লজ্জার কিছু হতে পারে না।’’ তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা, ‘‘টিভি, খবরের কাগজ খুললেই তো সরকারি বিজ্ঞাপনে মোদীর ছবি। একশো দিনের শ্রমিকদের টাকা না দিয়ে বিজ্ঞাপন বাবদ খরচ করছে মোদী সরকার। বিজেপির মুখে এ সব মানায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy