জিপের ছাদে মালপত্র চাপিয়ে তৈরি চালক। ঠাসাঠাসি করে বসে পড়েছেন যাত্রীরাও। গাড়ি এগোচ্ছে না। স্টিয়ারিঙে বসেই মোবাইল থেকে পরপর নম্বর ডায়াল করছেন। প্রতিবারই একই প্রশ্ন করছেন—‘‘বন্ধ নেই তো?’’ তিন চার জনকে ফোন করে নিশ্চিন্ত হয়ে চালক স্টিয়ারিং ঘোরালেন। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিঙের পথে এগিয়ে চলল গাড়ি। এ ভাবেই সকালের অনিশ্চয়তাটুকু কাটিয়ে শুক্রবার দিনভর স্বাভাবিক ছন্দ বজায় থাকল দার্জিলিঙে।
কয়েক মাস আগেই কিন্তু অন্য ছবি দেখেছিল পাহাড়। ৮ জুন পাহাড়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিন গোলমালের পরে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ সরাসরি রাস্তায় নেমে বলেছিলেন, পর্যটকেরা পাহাড় ছেড়ে চলে গেলেই ভাল। পর্যটন মরসুমে পাহাড় খালি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ দিন গুরুঙ্গই আক্রান্ত হন ও এক পুলিশ অফিসার মারা গিয়েছেন শুনেও ঝলমলে দিনে খোশমেজাজেই ছিলেন পর্যটকেরা।
পাহাড়বাসীদের বক্তব্য, ১০৪ দিনের বন্ধের ‘ক্ষত’ জনজীবনে এত গভীর দাগ কেটেছে যে, আবার ভয় পেতেও ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। ভয় পেয়ে ফের দোকানপাট বন্ধ কর ফেললে সংসার টানা যাবে না। বন্ধের পরে কিছু পর্যটক এসেছেন। পাহাড়বাসী এখন চান, সেই স্রোতই বজায় থাকুক।
তাই সিংলার জঙ্গলে গুরুঙ্গ বাহিনীকে ধরতে পুলিশি অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সকালে দার্জিলিঙের এইচ ডি লামা রোডের হোটেলের সামনে জড়ো হন এলাকার ব্যবসায়ীরা। আলোচনা করে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, দোকান বন্ধ হবে না। পাহাড়-সমতলের ট্যুর অপারেটরদের এক মুখপাত্র সম্রাট সান্যালের কথায়, ‘‘এখন দার্জিলিং অনেকটাই বদলেছে। হঠাৎ করে আর বন্ধ হবেও না।’’
পাহাড়ের মানুষও জানাচ্ছেন, জুন থেকে অক্টোবরে পাহাড় অনেকটাই বদলেছে। ১৪ জুন গুরুঙ্গের খোঁজে পাতলেবাসে পুলিশি অভিযানের খবর পেয়েই দোকান বন্ধ হতে শুরু করেছিল চকবাজার থেকে চৌরাস্তায়। অঘোষিত বন্ধ শুরু হয় পাহাড়ে। তার পর দিন থেকেই মোর্চা বন্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু সে দিন যে মোর্চা নেতা রাস্তায় নেমে বন্ধ ঘোষণা করেছিলেন, সেই বিনয় তামাঙ্গ এখন জিটিএ-র প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান। তাঁর অনুগামীরাই এ দিন রাস্তায় নেমে অভয় দেন ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের। তাঁদের চিনিয়ে দিলেন স্টেশন লাগোয়া একটি দোকানের মালিক। বললেন, ‘‘ভয় ছিল, আবার বুঝি বন্ধ ডাকা হবে। তার পরে বিনয়ের অনুগামীরা এসে দাঁড়াতে সাহস পাই। আবার বন্ধ হলে খেতে পেতাম না।’’ দার্জিলিঙের রাস্তায় এ দিন কড়া পুলিশি টহলও ছিল।
নিহত এসআইয়ের দেহ থানা চত্বরে আনতেই ভিড় ভেঙে পড়ে। থানা থেকে উতরাই বেয়ে নামতে নামতে এক মহিলা বললেন, ‘‘শুনলাম ওই অফিসারের ছ’মাস আগে বিয়ে হয়েছে। আমরা দার্জিলিংবাসীরা ওর পরিবারকে কী জবাব দেব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy