অসমে বাঙালিদের উপর যা হচ্ছে, তার নেতিবাচক প্রভাব পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির উপর এসে পড়বেই। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের কাছে সরাসরি এই ‘আতঙ্ক-বার্তা’ পাঠিয়েছেন বিজেপি-ঘনিষ্ঠ বাঙালি বিদ্বজ্জনেদের একাংশ। সেখানে বলা হয়েছে, তিনসুকিয়ায় পাঁচ বাঙালিকে হত্যার ঘটনা অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি হিন্দুদের উপর প্রভাব ফেলবে। পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভায় ছড়িয়ে থাকা বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুরা এই ঘটনায় ভীত এবং নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। অথচ এঁরাই বিজেপির সমর্থনের ভিত হতে পারতেন। বস্তুত, বিজেপির বাঙালি বিদ্বজ্জনেদের একাংশের মতে, অসমের ১৪টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৮টিতে অসমিয়া ভোট জয়-পরাজয় নির্ধারণ করতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনে বিজেপিকে ভাল ফল করতে হলে বাঙালি হিন্দুদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-কাণ্ডের পর থেকেই বিজেপিকে ‘বাঙালি বিরোধী’ তকমা দিয়ে প্রচার শুরু করেছে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বামেরা। তার মোকাবিলায় বিজেপি হাতিয়ার করছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংক্রান্ত প্রচার। কিন্তু তিনসুকিয়া-কাণ্ড তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বামেদের হাতে বিজেপির বিরুদ্ধে আরও বড় হাতিয়ার তুলে দিয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে এই পরিস্থিতিতে বিজেপির বাঙালি নেতারা কিছুটা উদ্বিগ্ন। বিজেপির যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সম্পাদক এবং অসমের পর্যবেক্ষক সৌরভ সিকদার বলেন, ‘‘তিনসুকিয়ার ঘটনা মর্মান্তিক। তবে অসমে বাঙালিদের তাড়ানো হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গে যে হাওয়া তোলার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী, তা ভিত্তিহীন। বিজেপি কখনওই বাঙালি বিরোধী নয়। তবে তৃণমূলের ওই প্রচারে বাঙালি ভোটাররা বিভ্রান্ত হতে পারেন। যাতে না হন, তার জন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে।’’
অসমের বাঙালি বিজেপি এবং আরএসএস নেতৃত্বের একাংশও তিনসুকিয়া-কাণ্ডে ‘অসন্তুষ্ট’। ওই অংশের অভিযোগ, আসু এবং অগপ থেকে আসা নেতারাই এখন তাঁদের দলে ক্ষমতাবান। তাঁরা প্রকাশ্যেই বাঙালি বিরোধী নানা মন্তব্য করছেন। কিন্তু দলীয় নেতৃত্ব তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। অথচ কোনও বাঙালি বিধায়ক এই পরিস্থিতিতে দুঃখের কথা প্রকাশ করলে তাঁকে দল ‘সতর্ক’ করছে। অর্থাৎ, অসমে বিজেপির ভিতরেও বাঙালি এখন কোণঠাসা।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে দাবি করছেন, তিনসুকিয়ার ঘটনার কোনও প্রভাব পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে পড়বে না। আর বিজেপির মধ্যেও এ নিয়ে কোনও উদ্বেগ বা অসন্তোষ নেই। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘খুন মাত্রেই অন্যায়। খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু তিনসুকিয়ার ঘটনার কোনও প্রভাব পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে পড়বে না। আর বিজেপি মোটেই বাঙালি বিরোধী নয়। তৃণমূল অসমের উগ্রপন্থীদের কাণ্ডকে ঢাল করে পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের উগ্রবাদী কাজ আড়াল করতে পারবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy