Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Dhupguri By-Election

ধূপগুড়ির ফলঘোষণা শুক্রবার, ঈশ্বরের দিকে তাকিয়ে তিন পক্ষই, কী বলছেন স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র?

গত বিধানসভা নির্বাচনে জেতা আসন ধরে রাখার লড়াই বিজেপির। অন্য দিকে, হারানো জমি ফিরে পেতে চায় তৃণমূল। দুই দলের অঙ্কেই থাকছে সিপিএম। প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্রই নাকি ঠিক করবেন কে জিতবে।

TMC and BJP thinking CPM will be the main factor in Dhupguri by election

ঈশ্বরচন্দ্র রায়। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:০৯
Share: Save:

কে জিতবে? সাধারণ ভাবে ফল ঘোষণার আগে সব দলই বলে, ‘আমরা’। কিন্তু ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে সব দলেরই যা বক্তব্য, তাতে মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়। গণনা শুক্রবার। আর বৃহস্পতিবার রাজ্যের শাসক তৃণমূল থেকে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির বক্তব্য, ঈশ্বরচন্দ্র কেমন ভোট পাবেন তার উপরেই নির্ভর করছে ফল। এমনকি, সিপিএমও বলছে সংগঠনের জোরে না হলেও প্রার্থীর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি বদলে দেবে এই ফল। আর স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বললেন, ‘‘সবাই বলছে আমি অন্যের ভোট কাটব। আসলে আমি যা পাব সে তো আমারই ভোট। আমার ভরসা ভোটার ভগবান। আর ভরসা শান্তিপূর্ণ আবহ। এই নির্বাচনে জিতে গিয়েছে ভোটগ্রহণের দিনের পরিবেশ। ইদানীং কালে কখনও এমন পরিবেশ পাননি ধূপগুড়ির ভোটাররা।’’

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হন বিজেপির বিষ্ণুপদ রায়। তাঁর মৃত্যুতেই এই উপনির্বাচন। পাহাড় লাগোয়া ধূপগুড়ি বিধানসভায় লড়াই এ বার ত্রিমুখী। তিন জনই রায়। রাজবংশী তিন জনই। কারণ এই আসনের ভোটারদের বড় অংশই রাজবংশী। সেই অঙ্ক মাথায় রেখেই বরাবর সব দল প্রার্থী দেয় এখানে। ১৯৭৭ সাল থেকেই বিধানসভায় রাজবংশী প্রতিনিধি পাঠিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার এই আসন। এই উপনির্বাচনে কাশ্মীরে নিহত জওয়ানের স্ত্রী তাপসী রায় বিজেপি প্রার্থী। তৃণমূলের প্রার্থী অধ্যাপক নির্মলচন্দ্র রায়। কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী তথা প্রাক্তন শিক্ষক ঈশ্বরচন্দ্র।

এই ঈশ্বরের দিকে তাকিয়েই ফলের অঙ্ক কষছে তৃণমূল ও বিজেপি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ন্ত রায় জলপাইগুড়ি আসনে ১,৮৪,০০৪ ভোটে জেতেন। ধূপগুড়ি বিধানসভাতেও এগিয়ে ছিল তারা। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জেতে ৪,৩৫৫ ভোটে। দলের ভোটপ্রাপ্তির হার ছিল ৪৫.৬৫ শতাংশ। আর তৃণমূল পেয়েছিল ৪৩.৭৫ শতাংশ। অনেক পিছিয়ে থাকা সিপিএম পেয়েছিল ৫.৭৩ শতাংশ ভোট। কিন্তু সদ্য শেষ হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই অঙ্ক আর এক নেই। জেলা পরিষদ স্তরে তৃণমূল পেয়েছে ৪৭.৬০ শতাংশ ভোট। সেখানে বিজেপি পেয়েছে ৩৯.২০ শতাংশ আর বাম-কংগ্রেস জোটের দখলে ১২.১০ শতাংশ ভোট। এটা থেকে একটা সহজ অঙ্কে আসা যায় যে, তৃণমূলের ভোট কিছুটা বৃদ্ধির পাশাপাশি রামের ভোট অনেকটাই বামে এসেছে। এই ক্ষয় মেরামতি কি বিজেপি উপনির্বাচনে করতে পারবে?

এমন অঙ্ক নিয়েই ভোটের লড়াই শুরু করে বিজেপি। সর্বশক্তি দিয়ে লড়েছে দল। সপ্তাহখানেক এই এলাকায় পড়ে ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিন দিন থেকেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শেষ বেলায় প্রচারে এসেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। তবে এই আসনে লড়াইয়ের মূল দায়িত্বে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মণ। দলের হয়ে আশার কথা বললেও তিনি ঈশ্বরচন্দ্রের উপরে ভরসার কথাও শোনালেন। দীপক বলেন, ‘‘গত বিধানসভা নির্বাচনে আমরা যখন জিতেছিলাম, তার তুলনায় আমাদের সাংগঠনিক উন্নতি অনেকটাই হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ধূপগুড়িতে আমাদের ফল আশব্যাঞ্জক ছিল। ফলে এ বারে আমরা ব্যবধান বাড়িয়ে জিতব।’’ কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে তো বামেদের দখলে অনেকটা ভোট বেড়ে গিয়েছিল? দীপক বলেন, ‘‘এ বার সিপিএমের ভোট তৃণমলে যাবে। ওদের বোঝাপড়া হয়েছে। তবে তাতেও বিজেপির কোনও সমস্যা নেই। আমাদের জয় নিশ্চিত।’’ দীপক এমনটা বললেও স্থানীয় বিজেপি নেতারা বলছেন, সিপিএম কতটা ভোট পায় তার উপরেই নির্ভর করছে ফল। যদি বেশি ভোট কেটে নেয় তবে সমস্যা হবে।

অন্য দিকে, তৃণমূলের দাবি জয় তাদের নিশ্চিত। সেই জয়ের অঙ্কেও রয়েছে সিপিএমের ভোট। তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপ বলেন, ‘‘আমরা ২০২১ সালে যত ভোটে হেরেছিলাম তার দ্বিগুণ ভোটে জয়ী হব।’’ তবে ঈশ্বরচন্দ্রকে অস্বীকার করতে পারছেন না। তিনি বললেন, ‘‘সিপিএম ভাল প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু তিনি কংগ্রেসের ভোট পাবেন না। কারণ, স্থানীয় কংগ্রেসের নেতা কর্মীরা সিপিএমের হয়ে সে ভাবে প্রচার করেনি। আর ২০১৬ সালের পর থেকে এখানে বামেদের ভোট ক্রমশ তলানিতে ঠেকেছে। এ বার আরও কমবে।’’

সিপিএম সেটা মানতে রাজি নয়। দলের জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য বলেন, ‘‘ধূপগুড়ির ভোটের ফল নিয়ে আমরা আশাবাদী। ওখানে আমাদের বৃদ্ধি ঘটবে। ২০২১ সালের তুলনায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের ভোট অনেকটাই বেড়েছে। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের ভোট রয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে গায়ক ও শিক্ষক হিসাবে আমাদের প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়ের জনপ্রিয়তা রয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা আশাবাদী।’’ সলিল স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলের সংগঠনের পাশাপাশি ঈশ্বরচন্দ্রের ভাবমূর্তির উপরেও বাজি ধরেছে সিপিএম। সবটা শুনে ঈশ্বরচন্দ্র বলছেন, ‘‘সবাই আমার কথা বলছে। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে আমি শুধু ভোট কাটাকাটি করব না। আমি সবার ভোটও পাব।’’

বাংলায় শুধু ধূপগুড়ি হলেও শুক্রবার ফল ঘোষণা হবে ত্রিপুরার বক্সনগর ও ধনপুর বিধানসভার উপনির্বাচনেরও। গত বিধানসভা ভোটে এর মধ্যে ধনপুর ছিল বিজেপির দখলে। বক্সনগর জিতেছিল সিপিএম। বিজেপি নেত্রী তথা কেন্দ্রের মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক ভোটে জেতার পর বিধায়ক পদ ছেড়ে দেন। বক্সনগরের সিপিএম বিধায়ক শামসুল হক প্রয়াত হয়েছেন। সেই কারণে দুই বিধানসভায় উপনির্বাচন হয় ত্রিপুরায়। যদিও সিপিএম ইতিমধ্যেই ভোট লুটের অভিযোগ তুলে জানিয়েছে তারা গণণা বয়কট করবে। এ ছাড়া ঝাড়খণ্ডের ডুমরি, কেরলের পুতুপল্লি, উত্তরপ্রদেশের ঘোসি, বাগেশ্বর বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশ হবে শুক্রবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dhupguri TMC BJP Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE