Advertisement
১৭ মে ২০২৪

পুরনো জুটিতে আস্থা রেখেই নতুন মুখ

পুরনো জুটিতে আস্থা রইল। পাশাপাশি জনতার দরবারে হাজির করা হল নতুন জুটিও! আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে জেলার চার গুরুত্বপূর্ণ শহরে পুরবোর্ড গড়ার ক্ষেত্রে এমনই রণকৌশলই নিল শাসকদল তৃণমূল। রবিবার বোলপুরে প্রত্যাশিত ভাবেই সিউড়ি, বোলপুর, সাঁইথিয়া ও রামপুরহাট শহরে বিদায়ী পুরপ্রধানদেরই পুরনো পদে বহাল করার কথা ঘোষণা করলেন দলের জেলা পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম।

চার পুরসভায় পুরপ্রধানদের নাম ঘোষণা করছেন ফিরহাদ হাকিম। রবিবার বোলপুরে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

চার পুরসভায় পুরপ্রধানদের নাম ঘোষণা করছেন ফিরহাদ হাকিম। রবিবার বোলপুরে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০৩:৫১
Share: Save:

পুরনো জুটিতে আস্থা রইল। পাশাপাশি জনতার দরবারে হাজির করা হল নতুন জুটিও!

আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে জেলার চার গুরুত্বপূর্ণ শহরে পুরবোর্ড গড়ার ক্ষেত্রে এমনই রণকৌশলই নিল শাসকদল তৃণমূল। রবিবার বোলপুরে প্রত্যাশিত ভাবেই সিউড়ি, বোলপুর, সাঁইথিয়া ও রামপুরহাট শহরে বিদায়ী পুরপ্রধানদেরই পুরনো পদে বহাল করার কথা ঘোষণা করলেন দলের জেলা পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম। তবে, জল্পনা উড়িয়ে একমাত্র শেষোক্ত দুই শহরে উপপুরপ্রধান বদল করা হল। আর যে দু’জনকে দায়িত্বে বেছে নিলেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, দিনের শেষে সেই সিদ্ধান্ত বিতর্কের পিছু ছাড়ল না। সাঁইথিয়া ও রামপুরহাট শহরে উপপুরপ্রধানের দাবিদার হিসেবে অনেকের নামই ছিল। কিন্তু, শেষপর্যন্ত নতুন দু’জনকেই পুরসভার দ্বিতীয় মুখ করল তৃণমূল। দলীয় নেতৃত্ব অস্বীকার করলেও দলের এই সিদ্ধান্ত অনেকের মধ্যেই ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে বলে ওই দুই শহরের তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ বোলপুর পুরসভার উৎসব মঞ্চে চার পুরবোর্ডের পদাধিকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ করেন ফিরহাদ। তালিকায় দেখা যায় পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধান হিসেবে সিউড়িতে উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় এবং উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, বোলপুরে সুশান্ত ভকত এবং নরেশচন্দ্র বাউড়ির নাম রয়েছে। বিদায়ী বোর্ডে এই দুই জুটি-ই দুই শহরের দায়িত্ব সামলেছিল। প্রত্যাশিত ভাবেই সাঁইথিয়া ও রামপুরহাটে যথাক্রমে অশ্বিনী তিওয়ারি এবং বিপ্লব দত্তকে পুরপ্রধান করা হয়। বড় চমক দেখা যায় সাঁইথিয়ার উপপুরপ্রধানের নাম ঘোষণার সময়। ওই পদের বড় দাবিদার শহরের দুই হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা শান্তনু রায় এবং মানস সিংহের বদলে উপপুরপ্রধান করা হল কাজী কামাল হোসেনকে। কতকটা একই কাণ্ড ঘটনা ঘটেছে রামপুরহাটে বাকিদের হঠিয়ে বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অনুগামী সুকান্ত সরকারের উপপুরপ্রধান হওয়ার ক্ষেত্রেও।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

ঘটনা হল, গত পুরভোটে সাঁইথিয়ায় শান্তনু রায়-ই ছিলেন একমাত্র তৃণমূল কাউন্সিলর। দলের একাংশের দাবি, প্রয়াত কংগ্রেস নেতা নীহার দত্তর পরিবারে ভাঙন ধরিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরদের তৃণমূলে যোগদান করার পিছনেও তাঁর হাত ছিল অন্যতম। এ বারের পুরভোটের আগে থেকেই তাঁর অনুগামীদের মধ্যে ভাবনা ছিল, পুরপ্রধান না হলেও ‘দাদা’র এ বার উপপুরপ্রধান হওয়া একেবারে পাকা! সেই শান্তনুবাবুই কোনও দায়িত্ব না পাওয়ায় কার্যত মুষড়ে পড়েছেন তাঁর অনুগামীরা। দলের সিদ্ধান্তে খুশি? শান্তনুবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দল যা ভাল বুঝেছে, তা-ই করেছে।’’ মুখে কিছু না বললেও তাঁর চোখে মুখে ক্ষোভের ছাপ স্পষ্ট। দাদা মুখে কুপুল আঁটলেও হতাশ হয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামী উজ্জ্বল রুজ বলেই ফেলেন, ‘‘শান্তনু রায়ের হাত ধরেই কার্যত কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ডের ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। শুধু সাঁইথিয়াই নয়, জেলায় এ বার উনি রেকর্ড ভোটেও জিতেছেন। সত্যি বলতে ওঁকে উপপুরপ্রধান কেন, পুরপ্রধান করা উচিত ছিল। কিন্তু, তার কোনওটাই না করে, দল এ কেমন প্রতিদান দিল!’’ একই রকম হতাশ পুরবোর্ডের পদাধিকারী হওয়ার আর এক দাবিদার তৃণমূলের শহর চেয়ারম্যান মানস সিংহের অনুগামীদেরও। আর দলের এ দিনের সিদ্ধান্ত নিয়ে মানসবাবু কোনও মন্তব্যই করতে রাজি হননি।

উল্টো দিকে, অশ্বিনীবাবুকেই ফের পুরপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হলেও রামপুরহাটে এ বার ওই পদের অন্যতম দাবিদার ছিলেন আশিসবাবুর ঘনিষ্ঠ অনুগামী সুকান্ত সরকারও। গতবোর্ডের উপপুরপ্রধান অনিন্দ্যকুমার সাহা ভোটে না লড়ায় এ বার ওই পদে দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে এগিয়ে ছিলেন তাঁদের দু’জনেরই একান্ত অনুগত তথা শহর তৃণমূলের যুব সভাপতি আব্বাস হোসেন। সেই মতো ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত দু’বারের কাউন্সিলর আব্বাস হোসেন প্রথম থেকে নিজেকে উপপুরপ্রধানের দাবিদার বলেও প্রচার চালিয়েছিলেন। ওই দাবিতে গত ৯ মে তাঁর অনুগামীরা শহরে বড় মিছিল বের করে লোকবলও দেখান। অনুগামীদের দাবি ছিল, লোকসভা ভোটে একমাত্র আব্বাসের ওয়ার্ড থেকেই শতাব্দী রায় লিড পেয়েছিলেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুখ হিসেবে তাঁকেই শহরের উপপুরপ্রধান করা হোক। কিন্তু, বোর্ড ভাঙা নিয়ে অশ্বিনীবাবুর সঙ্গে তাঁর পুরনো বিরোধিতাই এত কাছে এসেও উপপুরপ্রধানের কুর্সি দখলে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল বলে দলের একাংশের মত। এরই পাশাপাশি আশিস-ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতার মত, ‘‘অশ্বিনীবাবুর উপরে অনুব্রতর অগাধ আস্থা। তাঁকে হঠিয়ে সুকান্ত সরকারকে পুরপ্রধান করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।’’ তাই প্রথম বার ভোটে জেতা সুকান্তবাবুকেই উপপুরপ্রধান করে বিধায়ক ঘনিষ্ঠদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করা হল বলে তৃণমূল নেতৃত্বের মত।

এ দিকে, দলের এ দিনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কারও কোনও ক্ষোভ বা বিতর্ক থাকতে পারে না বলে তালিকা ঘোষণার আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম। সে ক্ষেত্রে নিজের বক্তব্যে তিনি আরও স্পষ্ট করে দেন, জেলায় অনুব্রতর সিদ্ধান্তই ‘শেষ কথা’। বিক্ষুব্ধদের নাম না করে দলের জেলা পর্যবেক্ষক কার্যত প্রবোধ দিয়ে বলেন, “তৃণমূলে নীতি আছে, অনুশাসন আছে। আছে শৃঙ্খলা। দলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। আমরা সকলে তৃণমূলের কর্মী। কে কোন পদ পেল কি পেল না, তাতে কিছু এসে যাবে না। আমাদের সকলের উদ্দেশ্য মানুষের কাজ করা। পাশে দাঁড়ানো।” ওই প্রসঙ্গেই হুঁশিয়ারির সুরে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ হয়ে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তাঁদের কী হাল হয়েছে! ফিরহাদ বলেন, “দল থেকে বেরিয়ে অনেকেই লড়েছিলেন। কী হল ফলাফল? এ বার বিধানসভা ভোটে জেলায় ১১ তে ১১ করতে চাই আমরা। দলের অনুশাসন মেনে অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বে মানুষের পাশে থেকে আমরা সকলে মিলে তা করে দেখাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE