দিব্যেন্দু অধিকারী।
উৎসবের মরসুম শেষ হলেই রাজ্যে দুই লোকসভা ও একটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তমলুক ও কোচবিহার লোকসভা এবং বর্ধমানের মন্তেশ্বর বিধানসভা আসনে আগামী ১৯ নভেম্বর উপনির্বাচনের ঘোষণা হয়ে গেল সোমবার। ভোট গণনা হবে ২২ নভেম্বর। কমিশন দিনক্ষণ জানানো মাত্রই তৃণমূল দুই কেন্দ্রে তাদের প্রার্থীর নাম জানিয়ে দিয়েছে। বিরোধীরা অবশ্য এখনও নাম ঠিক করে উঠতে পারেনি। উপনির্বাচনে এমনিতেই শাসক দলের পক্ষে পরিস্থিতি সুবিধাজনক থাকে। দ্রুত প্রার্থী ঘোষণা করে শাসক দল প্রস্তুতি পর্বেও বিরোধীদের চেয়ে প্রাথমিক ভাবে এগিয়ে গেল।
নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যে মন্ত্রী হওয়ায় তমলুক লোকসভা আসনটি শূন্য হয়েছিল। ওই আসনে তৃণমূলের তরফে রাশ থাকছে অধিকারী পরিবারের হাতেই। শুভেন্দুর বিধায়ক-ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী তমলুক থেকে লোকসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিন শুভেন্দুকে মন্ত্রী করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন, তরুণ নেতাকেই সে দিন তমলুকে তাঁর উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার ভার দিয়েছিলেন। দিব্যেন্দুর নাম তখন থেকেই আলোচনায় ছিল। কমিশনের ঘোষণার পরে এ দিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ও পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দুর উপস্থি্তিতে আলোচনার পরে দিব্যেন্দুর নাম প্রার্থী হিসাবে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, তমলুকে দিব্যেন্দুর জয় নিশ্চিত। সরকারের উন্নয়ন, অধিকারী পরিবারের জনপ্রিয়তা এবং মমতার উপরে মানুষের আস্থা— এই ত্রিফলায় নিশ্চিত জয় দেখছেন পার্থবাবু।
দিব্যেন্দু এখন দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক। সাংসদ হওয়ার আগে যেখানকার বিধায়ক ছিলেন শুভেন্দুও। তমলুকের মতো খাস তালুক থেকে দিব্যেন্দু লোকসভায় জয়ী হলে দক্ষিণ কাঁথিতে আবার বিধানসভা উপনির্বাচন দরকার হবে। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলনেত্রীর ইচ্ছা, ওই আসন থেকে প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী তথা আমলা মণীশ গুপ্তকে জিতিয়ে বিধানসভায় নিয়ে আসা। যিনি কয়েক মাস আগে যাদবপুরে সুজন চক্রবর্তীর কাছে হেরেছিলেন।
কোচবিহার ও মন্তেশ্বরে উপনির্বাচন হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের মৃত্যুতে। কোচবিহারের তৃণমূল সাংসদ রেণুকা সিংহের মৃত্যুর পরে ওখানে নতুন প্রার্থী কে হবেন, তা অবশ্য এখনও ঠিক হয়নি। শাসক শিবির সূত্রের বক্তব্য, কোচবিহারে বিজেপি-র বাড়বাড়ন্তের জন্য ভোট মেরুকরণের সম্ভাবনা আছে। তাই আরও একটু ভেবেচিন্তে প্রার্থী ঠিক করতে চায় তৃণমূল। আগামী শনিবার কালীঘাটে দলের কোর কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। মেরুকরণের আশঙ্কা করছে বাম শিবিরও। সেখানে প্রার্থী বাছাই নিয়ে সমস্যায় আছে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। তবে নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় চলতি সপ্তাহেই প্রার্থী ঘোষণা সেরে ফেলতে চায় বামফ্রন্ট। তমলুক ও মন্তেশ্বরে লড়বেন সিপিএম প্রার্থীরা। দলীয় সূত্রের খবর, ওই দুই কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম দু’দিনের মধ্যেই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে চূড়ান্ত হবে।
তমলুকে যেমন অধিকারী পরিবারের পরম্পরা, তেমনই মন্তেশ্বরেও আবেগ কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল। অকাল প্রয়াত বিধায়ক সজল পাঁজার ছেলে সৈকতকে সেখানে প্রার্থী হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এক কালে বামেদের শক্ত ঘাঁটি মন্তেশ্বর ২০১১ সালেও দখলে রেখেছিল সিপিএম। এ বার সেই ঘাঁটি দখলের পরে প্রয়াত বিধায়কের ছেলেকে সামনে রেখেই ফের বাজিমাত করতে চাইছে শাসক দল।
উপনির্বাচনে বাম ও কংগ্রেসের আসন সমঝোতা না হওয়াও শাসক দলের কাছে বাড়তি স্বস্তির খবর। যে কারণে কংগ্রেসকেও দুর্বল সংগঠন নিয়ে দুই কেন্দ্রে প্রার্থীর সন্ধান করতে হচ্ছে। কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকে এ দিন উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ প্রাথমিক আলোচনায় এসেছিল। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব বাছাই করে নামের তালিকা পাঠালে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে হাইকম্যান্ড। কোচবিহার আসনটি কংগ্রেস প্রাথমিক ভাবে চেয়েছিল বামেদের কাছে। কিন্তু সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত তাদের ইচ্ছার পক্ষে অন্তরায় হয়েছে। কোচবিহারে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল ৭৪ হাজার ভোট। যেখানে বিজেপি পেয়েছিল দু’লক্ষ ১৭ হাজার ভোট। যে পরিসংখ্যানের মধ্যেই মেরুকরণের ইঙ্গিত স্পষ্ট।
বিজেপি-ও এখনও উপনির্বাচনে প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করেনি। তমলুকে বিজেপি-র টিকিটে লড়তে চেয়েছিলেন লক্ষ্ণণ শেঠ। বিজেপি-তে যোগ দিতে চেয়ে এ দিন তিনি লিখিত আবেদনও করেছেন। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে প্রার্থী করতে উৎসাহী নন। বরং, ওই কেন্দ্রে তারকা-মুখ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নাম দলের বিবেচনায় আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy