বৃহস্পতিবার পুরভোটের ফল প্রকাশের পরে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস।ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
জিতব, আর কিছু জিতে নেব— এই নীতি নিয়ে সাত পুরসভার ভোটে লড়তে নেমেছিল তৃণমূল। শাসক দলের নেতা-কর্মীরা কতটা নীতিনিষ্ঠ, তা শুক্রবারের পুর ভোটের ফলাফলই দেখিয়ে দিয়েছে। সাত পুরসভার সবকটিই তারা জিতে নিয়েছে। দু’টি উপনির্বাচনের ওয়ার্ড ধরে সব মিলিয়ে ১৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ১৪২টিতে। ছ’টি জিতেছে বিজেপি। একটি করে ফরওয়ার্ড ব্লক ও নির্দল প্রার্থী। সিপিএম বা কংগ্রেস কোথাও খাতাই খুলতে পারেনি।
সাত পুরসভার মধ্যে দুর্গাপুর, হলদিয়া ও কুপার্স ক্যাম্পের সব আসনই পেয়েছে তৃণমূল। ধূপগুড়িতে চারটি, বুনিয়াদপুর ও পাঁশকুড়ায় একটি করে আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। অধিকাংশ ওয়ার্ডে যেটুকু লড়াই হয়েছে তা বিজেপির সঙ্গেই। একমাত্র নলহাটি পুরসভায় একটি আসন পেয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক বাম দলগুলির মুখ রেখেছে। সেখানেই আরও একটি আসন পেয়েছেন এক নির্দল প্রার্থী।
বিরোধী অস্তিত্ব প্রায় শেষ হওয়া এই ফলকে মুখ্যমন্ত্রী মানুষের সর্বাত্মক রায় হিসেবেই দেখছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষ যখন রায় দেন, তখন যারা তিন, চার পাঁচ নম্বর হওয়ার জন্য লাফালাফি করে তা অর্থহীন হয়ে যায়। আমি তো দেখলাম কেউ ০.১ শতাংশের কম ভোট পেয়েছে। কেউ আবার ১টা ২টো আসনও পায়নি। মা, মাটি মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’ তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাতে সাত, তৃণমূলের বাজিমাত।’’
আরও পড়ুন: হার একা লড়ে, আত্মঘাতী সুপ্রিয়া
যা শুনে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘বাজিমাত করতে গিয়ে তৃণমূলকে সন্ত্রাসবাজি করতে হয়েছে। না হলে যে সমস্যা ছিল, তা ধূপগুড়ি, বুনিয়াদপুরের ফলই বলে দিচ্ছে।’’ ১৩ অগস্ট ভোটের দিন সবচেয়ে কম রিগিং-ছাপ্পার অভিযোগ এসেছিল উত্তরবঙ্গের ওই দুই পুরসভা থেকেই। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ধূপগুড়িতে তৃণমূল ৪৮.৫১% এবং বিজেপি ৪১.৫৯% ভোট পেয়েছে। বামেরাও সেখানে পেয়েছে ৯.১%। অথচ বোর্ড পেতে এখানে কোনও জোরজুলুম করতে হয়নি শাসক দলকে। বুনিয়াদপুরে বিজেপি ৩০% ভোট পেলেও জিতেছে একটি ওয়ার্ডে।
শাসক দলের অন্দরেই প্রশ্ন, এই ধূপগুড়ি মডেল সর্বত্র অনুসরণ করা হলো না কেন? তা হলে অন্তত এই ফল যে ‘মানুষেরই রায়’ তা প্রমাণে মরিয়া হয়ে ঝাঁপাতে হতো না।
হলদিয়ায় দাঁত ফোটাতে পারেননি বিরোধীরা। যেমন, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৯৫৮টি ভোটের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৪৯২৩টি ভোট। সিপিএম মাত্র ৩২। এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে পাঁশকুড়া, দুর্গাপুর, কুপার্স ক্যাম্পে। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিরোধীদের অবস্থা না হয় খারাপ মেনে নিলাম। কিন্তু ছ’বছরের মধ্যে তৃণমূলের হাল এমন হলো যে একটি পুরসভাতেও জনগণের রায় নেওয়ার হিম্মত দেখাতে পারল না!’’
হিম্মত অবশ্য দেখিয়েছেন বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘নলহাটিতে ১৪টি ওয়ার্ড আমি নিজে দেখেছি, জিতেওছি। বাকি দু’টির ভার দিয়েছিলাম দুই মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ সিংহ ও আরও দু’জনকে। সেটা ভুল হয়েছিল। ওখানে হেরেছি। তবে বলে রাখছি যে দু’টি ওয়ার্ডে হেরেছি সেখানে কোনও উন্নয়ন হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy