Advertisement
২১ মে ২০২৪
শাসকের আজ সব চাই

অশান্তির ভয় নিয়েই ভোট চার এলাকায়

গত পাঁচ বছর পুরসভা দখলে রাখা সত্ত্বেও লোকসভা ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। বিধাননগরটা আমাদের ধরে রাখা চাই! অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও লোকসভা ভোটে জিতেছেন বাবুল সুপ্রিয়। দলেও সমস্যা ছিল তীব্র। কিন্তু এ বার আর বাবুলদের ছাড়া নয়! আসানসোল আমাদেরই চাই!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪৩
Share: Save:

গত পাঁচ বছর পুরসভা দখলে রাখা সত্ত্বেও লোকসভা ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। বিধাননগরটা আমাদের ধরে রাখা চাই!

অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও লোকসভা ভোটে জিতেছেন বাবুল সুপ্রিয়। দলেও সমস্যা ছিল তীব্র। কিন্তু এ বার আর বাবুলদের ছাড়া নয়! আসানসোল আমাদেরই চাই!

পুরসভা হাতছা়ড়া হয়েছে ক’মাস আগে। ঘুরে দাঁড়িয়ে অশোক ভট্টাচার্যদের শিক্ষা দিতে হবে! শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদটা তাই আমাদের চাই!

সব ইচ্ছাই শাসক দল এবং রাজ্য প্রশাসনের সর্বময় নেত্রীর! তৃণমূলের রাজ্য স্তরের নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ইচ্ছা-তালিকা। তাঁরাও তাই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন আসরে। কয়েক মাস আগে রাজ্যের ৯১টি পুরসভার নির্বাচনে একচ্ছত্র দাপট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাঁদেরই। লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যান যা-ই বলুক, ধারে-ভারে প্রায় সর্বত্রই তাঁরা এগিয়ে। তবু কোনও ঝুঁকি নেওয়া নেই! সামনে বিধানসভার লড়াই। বিরোধীদের কোনও অক্সিজেন পেয়ে যেতে দেওয়া চলবে না! জিততে হবে যে করেই হোক। এবং সেটা যথাসম্ভব নিরঙ্কুশ করতে হবে! এই লক্ষ্য সামনে রেখেই আজ, শনিবার উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গে অকাল ভোটের ময়দানে নামছে শাসক দল। যার ফলাফল জানা যাবে ৭ অক্টোবর।

হিসাব মতো, নবগঠিত দু’টি পুর-নিগম বিধাননগর ও আসানসোলের সঙ্গে হাওড়়া পুর-নিগমে নতুন অন্তর্ভুক্ত বালি অংশের ওয়ার্ডগুলির ভোট আজ। রাজারহাটের সঙ্গে সল্টলেক জু়ড়ে বিধাননগর পুর-নিগমে ৪১টি, আসানসোলের সঙ্গে রানিগঞ্জ, কুলটি, জামুড়িয়া প্রভৃতি জু়ড়ে ১০৬টি এবং বালির ১৬টি ওয়ার্ডে জনাদেশ নেওয়ার পালা। ৯টি আসন বিশিষ্ট শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচনকে তো বলা হচ্ছে শিলিগুড়ির ‘দ্বিতীয় ডার্বি ম্যাচ’! এর সঙ্গেই নানা জেলায় ছড়িয়ে থাকা জেলা পরিষদের দু’টি, পঞ্চায়েত সমিতির ৩২টি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের ৩২২টি আসনের উপনির্বাচনও আছে। তবে তার মধ্যে যাবতীয় উত্তেজনা আড়াইখানা পুর-নিগম এবং মহকুমা পরিষদের ভোট নিয়েই। উত্তেজনা এমনই তুঙ্গে যে, সুষ্ঠু ভাবে আজ সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারবেন কি না সব জায়গায়, তা-ই নিয়েই ঘোরতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বিরোধীরা! কেন্দ্রীয় বাহিনী এই ভোটে নেই। রাজ্য পুলিশও যে কয়েক মাস আগের পুরভোটের মতো নিধিরাম সর্দারের ভূমিকায় থাকবে, তা-ও ধরেই নিয়েছে বিরোধীরা।

বস্তুত, এই আশঙ্কা থেকেই আজকের ‘মিনি-ভোটে’ও ঘুরেফিরে আসছে ‘শিলিগুড়ি মডেলে’র প্রসঙ্গ। শিলিগুড়ি পুরসভার ভোটের দিন সিপিএমের অশোকবাবুর কৌশল ছিল, ভোটারদের বুথ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে ঝান্ডা ছাড়াই জোট বাঁধতে হবে সব বিরোধী দলকে। ভোটারেরা যাকে খুশি ভোট দেবেন। কিন্তু ভোট দিতে যাওয়ার পথে বাধা পেলে সব বিরোধী এককাট্টা হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। সেই কৌশলে সাফল্য পেয়েছিলেন অশোকবাবু। তাই এ বার মহকুমা পরিষদ তো বটেই, আসানসোল থেকে সল্টলেকে গিয়ে ঝান্ডা না দেখে সম্মিলিত প্রতিরোধের আহ্বানই জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। একই কথা বলেছেন বিজেপি-র

রূপা গঙ্গোপাধ্যায় থেকে বাবুল সুপ্রিয়। আসানসোলে বাবুল এই নিয়ে সিপিএমের বংশগোপাল চৌধুরী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে কথাও বলে রেখেছেন। বিধাননগরে সিপিএমের গৌতম দেব এবং কংগ্রেসের অরুণাভ ঘোষেরা এই লক্ষ্যে রীতিমতো ‘সিটিজেন্স ফোরাম’ তৈরি করে নিয়েছেন।

তবে প্রতিরোধের ডাক দেওয়া এক এবং বাস্তবে সত্যিই তা করা আর এক! শিলিগুড়িতে বিরোধীরা যা পেরেছিল, বিধাননগর বা আসানসোলে তা পারবে কি না, সেটা প্রশ্ন। বিরোধীদের দাবি, তাঁরা চেষ্টা করবেন, কিন্তু ভয় শাসক দলের ভৈরব বাহিনীকে। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি— সব দলেরই অভিযোগ, বর্ধমানের মেমারি, কাটোয়া এবং কয়লাখনি অঞ্চলের নানা প্রান্ত থেকে বাহিনী জড়ো করা হয়েছে আসানসোলের ভোটের জন্য। বিধাননগরের জন্য বাহিনী হাজির দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা থেকে।

তৃণমূল সূত্র বলছে, সব জায়গায় যে শুধু বিরোধীদের মোকাবিলার জন্য এত আয়োজন, তা কিন্তু নয়। আসানসোল, বিধাননগর, বা বালি— সর্বত্রই তাদের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব প্রকট। ফলে এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীকে বুঝে নেওয়ার রসদও মজুত রাখছে! লক্ষ্য যে-ই হোক, অশান্তির সম্ভাবনা নিয়েই আজ ভোটে যাচ্ছে রাজ্যের তিন প্রান্ত।

শাসক দল অবশ্য বেশি নজর দিচ্ছে বিধাননগরেই। ঘটনা হল, বাম জমানার মধ্যগগনেও সাবেক বিধাননগর পুরসভা ১৩-১২ ফলে সিপিএম কোনওক্রমে জিতেছে। তা হলে এখন তৃণমূলের এত চিন্তা কেন? দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘আমরা উন্নয়নের কাজ যথেষ্ট করেছি। কিন্তু শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত এলাকার মানুষ সুযোগ পেলেই প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার পক্ষে দাঁড়ান। তাই বেশি নজর দিতে হচ্ছে।’’

বাকি এলাকার মধ্যে উপনির্বাচন নিয়ে ভাবিতই নয় তৃণমূল। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, জোর ফলাতে হলেও বিধাননগর ও আসানসোল তাদের ঘরেই উঠবে। আর বালিতে কাজ হাসিল হবে ‘কমোড-কাণ্ডে’র (পুরসভার এক আধিকারিকের বাড়ি থেকে বিপুল টাকা উদ্ধার এবং তার সঙ্গে সিপিএমের নাম জড়িয়ে যাওয়া) দৌলতেই! বরং, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ নিয়েই চাপে আছে তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE