ঘাটালের পরীক্ষাকেন্দ্রে তল্লাশিতে টিএমসিপি-র ছাত্রেরা গত মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র
উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় দিন। নিয়মমাফিক তল্লাশি করেই পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকানো হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। বেলদার একটি স্কুলে বৃহস্পতিবার সে কাজেই হাত লাগালেন খোদ জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাঁতরা। রীতিমতো মেটাল ডিটেক্টর হাতে তল্লাশি চালালেন তিনি।
পরীক্ষা কেন্দ্রে তল্লাশিরই এক ভিন্ন ছবি দেখা গিয়েছিল গত মঙ্গলবার, উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম দিনে। সেই ঘটনাস্থল ছিল ঘাটালের বসন্ত কুমারী বালিকা বিদ্যালয়। গলায় ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের ছবি দেওয়া কার্ড ঝুলিয়ে সে দিন তল্লাশির কাজে হাত লাগিয়েছিলেন ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী কলেজের টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সদস্যরা। কার্ডে কলেজের নামও লেখা ছিল।
মাধ্যমিক পরীক্ষার ক’দিন হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়া নিয়ে বিস্তর বিতর্ক বেধেছিল। সমালোচনার মুখে পড়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইলের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে তাই নানা পদক্ষেপ করেছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। সেই কাজে তাঁরা যে কতটা তৎপর মূলত সেই বার্তা দিতেই বৃহস্পতিবার বেলদা গঙ্গাধর অ্যাকাডেমির পরীক্ষা কেন্দ্রে সকাল ন’টার আগেই ঢুকে যান জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাঁতরা। তারপর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে মেটার ডিটেক্টর হাতে পরীক্ষার্থীদের তল্লাশি করেন। দেখে নেন ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট, মোবাইল আছে কিনা। পাশে তখন দাঁড়িয়ে ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা দীপককুমার গিরি, সংসদের জেলা আহ্বায়ক সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, সদস্য আশিস অট্ট ও শিক্ষকেরা। নারায়ণবাবু বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকের প্রতিটি দিন প্রতিটি কেন্দ্রে এই তল্লাশি চলবে। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্ন যাতে না ছড়ায় তা নিশ্চিত করতে পরীক্ষাকেন্দ্রে কোনওমতে মোবাইল ব্যবহার করতে দেব না আমরা।’’
ঘাটালের স্কুলটিতে অবশ্য বৃহস্পতিবার আর টিএমসিপি-র ছাত্রদের তল্লাশি চালানোর ছবি দেখা যায়নি। বস্তুত, প্রথম দিন পুলিশকে কার্যত দাঁড় করিয়ে রেখে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের পড়ুয়াদের তল্লাশির কাজে দেখে বিতর্ক বেধেছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, এই কাজ আদৌ কি তারা করতে পারে।
তবে কি বিতর্কের মুখেই পিছু হটল টিএমসিপি?
ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়কের ছেলে তুফান দোলই অবশ্য বলছেন, “এতে বিতর্কের কী আছে। কলেজের ছেলেরা তো সাহায্য করতেই গিয়েছিল।” তাহলে এ দিন তল্লাশির কাজে কেন ওই ছাত্রদের দেখা গেল না? এ বার তুফানের জবাব, ‘‘বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই এ দিন আর ছাত্র সংসদের কেউ যাননি।’’
যে কাজ পুলিশের করার কথা, সেই তল্লাশি যে কোনওমতেই বহিরাগত কেউ করতে পারে না তা স্পষ্ট করেছেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের মুখ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরীক্ষার্থীদের এমন ভাবে তল্লাশির এক্তিয়ার বাইরের কারও নেই।” যে পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে এই তল্লাশি নিয়ে এত বিতর্ক, সেই বসন্ত কুমারী বালিকা বিদ্যায়লের প্রধান শিক্ষিকা বীণা মান্নাও বলছেন, “পরীক্ষার্থীরা নিয়ম মেনে স্কুলে ঢুকছে কিনা তা দেখার জন্য স্কুলের নিরাপত্তা কর্মীরাও আছেন। বাইরের কেউ সে কাজ করবে কেন?” মেয়েদের স্কুলে ছেলেরা কেন তল্লাশি চালাবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
ঘাটালের বিধায়ক শঙ্করবাবু অবশ্য দাবি করছেন, “আমার ছবি দেওয়া কার্ড গলায় ঝুলিয়ে এমন তল্লাশির কথা জানা নেই। কারা এমনটা করেছে খোঁজ নেব।” ঘাটালের এসডিপিও কল্যাণ সরকার যদিও জানান, পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ না এলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy