Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

ঝক্কি এড়াতেই সারদার কিছু বন্দির জেল বদল

শুধু আলিপুর সেন্ট্রাল জেলেই সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির ছ’জন তাবড় বন্দির ভিড় হয়ে গিয়েছিল। অচিরেই ওই ঘটনায় আরও কয়েক জনকে সেখানে পাঠানোর সম্ভাবনা আছে। সারদা কাণ্ডের মতো মামলার এত অভিযুক্তকে একই জেলে বেশি দিন রাখাটা তাঁদের নিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকি হয়ে যাবে বলে মনে করছে কারা দফতর। সেই জন্য ওই অভিযুক্তদের কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী কয়েকটি কারাগারে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৮
Share: Save:

শুধু আলিপুর সেন্ট্রাল জেলেই সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির ছ’জন তাবড় বন্দির ভিড় হয়ে গিয়েছিল। অচিরেই ওই ঘটনায় আরও কয়েক জনকে সেখানে পাঠানোর সম্ভাবনা আছে। সারদা কাণ্ডের মতো মামলার এত অভিযুক্তকে একই জেলে বেশি দিন রাখাটা তাঁদের নিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকি হয়ে যাবে বলে মনে করছে কারা দফতর। সেই জন্য ওই অভিযুক্তদের কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী কয়েকটি কারাগারে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সারদার তছরুপে ঠিক কারা লাভবান হয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট সেটাই জানতে চায়। প্রভাবশালী কিছু লোক প্রচুর টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে তদন্তে নেমে সিবিআই যতই তাদের জাল গুটিয়ে আনতে চাইছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃতের সংখ্যা। আর তাঁদের মধ্যে অনেকেই প্রভাবশালী। কারা বিভাগের এক কর্তা জানান, সারদা-তদন্তে ধৃতের সংখ্যা আগামী কয়েক সপ্তাহে আরও বাড়বে বলেই তাঁদের ধারণা। ওই সব লোকের অনেকেই যথেষ্ট প্রভাবশালী। “সেই জন্য আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি সেরে রাখতে চাইছি। নইলে একটি জেলে একই মামলার এত প্রভাবশালী বন্দি নিয়ে আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে,” বলেছেন ওই কারাকর্তা।

প্রশ্নটা যে শুধু নিরাপত্তার নয়, কারাকর্তাদের একাংশ তা মেনে নিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, প্রভাবশালী বন্দিদের নিয়ে আরও অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। জেলেরই কিছু কর্মী এবং বন্দিদের একাংশের জন্য সেই ঝক্কি বাড়ে বলে তাঁদের অভিযোগ। কোন দিক থেকে সমস্যা হয়? ওই কারাকর্তারা জানান, প্রভাবশালী বন্দিদের সঙ্গে বাইরের জগতের যোগাযোগ ঘটাতে এবং বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিতে উৎসাহী হয়ে পড়েন এক শ্রেণির কারাকর্মী এবং কিছু বন্দিও। বিশেষ করে কারাকর্মীদের একাংশ এই কাজে জড়িয়ে পড়ায় তার মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সম্প্রতি আলিপুর জেলের তিন জন বন্দি একসঙ্গে পালানোয় ওই জেলের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি চিন্তিত কারাকর্তারা।

কারা দফতর সূত্রের খবর, ইস্টবেঙ্গল-কর্তা দেবব্রত সরকার ওরফে নিতু সারদা মামলায় গ্রেফতার হয়ে আলিপুর জেলে আসার পরে তাঁকে ওখানকার সব চেয়ে কড়া নিরাপত্তায় মোড়া এক নম্বর সেলে রাখা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও দু’দিনের মধ্যেই তাঁকে বেআইনি ভাবে ডিম-কলা সরবরাহ করা হয়। সেই ঘটনায় এক কারাকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বস্তুত, ওই ঘটনার পরেই কারাকর্তারা সারদা-বন্দিদের বিভিন্ন জেলে ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, ওই সংস্থার তাবড় কর্তা সোমনাথ দত্ত, অরবিন্দ চৌহান ও মনোজ নাগেলকে বেশ কিছু দিন আগেই কলকাতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ঢোকানো হয়েছিল। গত দু’সপ্তাহে নিতু এবং ব্যবসায়ী সন্ধির অগ্রবালকেও ওই জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুধু আলিপুর জেলই সুদীপ্ত, নিতু-সহ সারদার ছয় বন্দির ঠিকানা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই জন্য তাঁদের মধ্যে কয়েক জনকে দ্রুত অন্য জেলে সরিয়ে দিয়ে ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে খুবই গোপনে নিতুকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দমদম জেলে। প্রেসিডেন্সি জেলে সরানো হয় অরবিন্দ চৌহানকে। সোমনাথ দত্তের ঠাঁই হয়েছে হাওড়া জেলে।

প্রথমে নিতুকে প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেলে সরানোর কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সারদা কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ রয়েছেন ওই জেলে। কুণালের সঙ্গে নিতুকে রাখা ঠিক হবে না ভেবে তাঁকে শেষ পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল-কর্তাকে দমদম জেলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সুদীপ্ত-সহ সারদার জনা তিনেক বন্দি এখনও আলিপুর জেলেই রয়েছেন। আর আলিপুর মহিলা জেলে আছেন সারদার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়। ভবিষ্যতে সারদা-তদন্তে বন্দির সংখ্যা বাড়লে তাঁদেরও বিভিন্ন জেলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা দফতর।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE