Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বেজার মুখে হাসি, খুদেদের আঁকতে শেখাল কর্মশালা

তূণীরের কার্টুন আঁকছে আয়ূষ। আয়ূষের মজার মুখ আঁকছে সৌম্যদীপ। সৌম্যদীপের গম্ভীর মুখ দেখে কল্পনায় সেটাকেই পেন্সিলের টানে মজারু ছবি আঁকতে ব্যস্ত শুভ্র। অহনা, সপ্তপর্ণা, শিরিন ও শাওনের মতো এক ঝাঁক কিশোর-কিশোরীরা একে অপরের কার্টুন আঁকায় মগ্ন। শনিবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম রবীন্দ্রপার্কের বইমেলা প্রাঙ্গণে নির্ভেজাল আনন্দের এই আয়োজন-আড্ডা ছুঁয়ে গেল ছোট-বড় সবাইকে। কীভাবে কার্টুন আঁকতে হয় সেটাই শেখালেন বিশিষ্ট কার্টুন-শিল্পীরা।

ঝাড়গ্রাম বইমেলা প্রাঙ্গণে কার্টুনের কর্মশালা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

ঝাড়গ্রাম বইমেলা প্রাঙ্গণে কার্টুনের কর্মশালা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

কিংশুক গুপ্ত
 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৬ ০০:৫৭
Share: Save:

তূণীরের কার্টুন আঁকছে আয়ূষ। আয়ূষের মজার মুখ আঁকছে সৌম্যদীপ। সৌম্যদীপের গম্ভীর মুখ দেখে কল্পনায় সেটাকেই পেন্সিলের টানে মজারু ছবি আঁকতে ব্যস্ত শুভ্র। অহনা, সপ্তপর্ণা, শিরিন ও শাওনের মতো এক ঝাঁক কিশোর-কিশোরীরা একে অপরের কার্টুন আঁকায় মগ্ন। শনিবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম রবীন্দ্রপার্কের বইমেলা প্রাঙ্গণে নির্ভেজাল আনন্দের এই আয়োজন-আড্ডা ছুঁয়ে গেল ছোট-বড় সবাইকে। কীভাবে কার্টুন আঁকতে হয় সেটাই শেখালেন বিশিষ্ট কার্টুন-শিল্পীরা।

ঝাড়গ্রাম আর্টিস্ট ফোরামের আমন্ত্রণে ছোটদের কার্টুন আঁকা শেখাতে এসেছেন কলকাতার কার্টুন দলের সাত জন শিল্পী। প্রবীণ শিল্পী অনুপ রায় শুরুতে বললেন, “এক জনকে দেখে তার মজার মুখ আঁকার জন্য তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ও কল্পনারও প্রয়োজন।” তিনি জানালেন, ধরা যাক, তূণীর যেমন শান্ত-গম্ভীর হয়ে বসে রয়েছে, কিন্তু ওর দুষ্টুমুখ বা রাগী মুখটা কেমন হবে, সেটা ভেবে নিয়ে আঁকতে পারলেই হয়ে গেল কার্টুন। এ কালের কার্টুন শিল্পী উদয় দেব বললেন, ‘‘আমাদের দেশে আলাদা করে কার্টুন আঁকা শোখানোর কোনও স্কুল বা কলেজ নেই। গ্রামাঞ্চলে বহু সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে, যারা উপযুক্ত আঁকার পরিবেশ পায় না।’’ উদয়ের বক্তব্য সমর্থন করে আর এক প্রবীণ কার্টুন শিল্পী স্বপন দেবনাথও জানালেন, জঙ্গলমহল থেকে প্রতিভা খোঁজার জন্যই ঝাড়গ্রামে তাঁদের এই কর্মশালায় আগমন।

বস্তুতপক্ষে, ২০১৪ সালে কার্টুন দলটি তৈরি হয়েছে মূলত এই উদ্দেশ্যেই। দলের ১৭ জন শিল্পীর মধ্যে এ দিন ঝাড়গ্রামে অবশ্য সাত জন এসেছিলেন। অনুপবাবু, স্বপনবাবু ও উদয়ের মতো সবাই অবশ্য পেশাদার কার্টুন শিল্পী নন। তবে অসাধারণ কার্টুন আঁকেন সকলেই। বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্তা অমিতাভ চক্রবর্তী (বিখ্যাত কার্টুনিস্ট শৈল চক্রবর্তীর ছেলে), পেশায় শিক্ষক ঋতুপর্ণ বসু, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরুণ চিকিত্‌সক চিরঞ্জিত্‌ সামন্ত এবং চন্দ্রবিন্দুর উপল সেনগুপ্তকে কাছে পেয়ে দৃশ্যতই আবেগে ভাসলেন আয়োজকরাও। আর্টিস্ট ফোরামের মৃণাল মণ্ডল বললেন, “এতজন গুণী মানুষ এক কথায় ঝাড়গ্রামে চলে এসেছেন। এটা ঝাড়গ্রামের গর্ব।”

ছোটরা নিজেদের দেখে মজারু মুখের ছবি আঁকার সময় বিশিষ্ট কার্টুন শিল্পীরাও মেতে উঠলেন মজার ছবি আঁকায়। সাদা অ্যাক্রেলিক বোর্ডে মার্কার পেন দিয়ে উপল, চিরঞ্জিত্‌রা আঁকলেন ব্যাঙ, হাতি ও বাঘের কার্টুন। বইমেলার এক উদ্যোক্তা চন্দ্রবিন্দুর উপলকে মঞ্চে উঠে সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য অনুরোধ করলেন। উপল অবশ্য হাতজোড় করে জানালেন, ছোটদের মাঝে আজ তাঁর ছুটির দিন। ছুটির দিনে নো-গান। কিন্তু ছোটদের অনুরোধ অবশ্য ফেলতে পারলেন না গায়ক। ছোটদের মাঝেই গিটার হাতে গুনগুনিয়ে শোনালেন জনপ্রিয় গানের কয়েক কলি। এদিনই কলকাতা ফিরে যাওয়ার আগে উপল জানিয়ে গেলেন, “আবার আসব।” আজ, রবিবার কার্টুন দলের বাকি সদস্যদের সঙ্গে যোগ দেবেন প্রবীণ আর এক জনপ্রিয় শিল্পী দেবাশিস দেব। রবিবার কর্মশালার শেষ দিনে থাকছে কার্টুন নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা ও আড্ডা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cartoon upal sengupta jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE